পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতীয় সভ্যতার প্রাচীনত স্ত্রীরাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায় ভারতবর্ষের ইতিহাস আলোচনা করিতে গেলেই প্রথমে একটি মূল কথা উত্থাপিত হয়, তাহ ঐ ইতিহাসের প্রাচীনত্ত্ব লইয়া। প্রথমেই মনে এই প্রশ্নের উদয় হয় যে ভারতবর্ষের সভ্যতা কত দিনের এবং জগতে অন্যান্য দেশের অন্যান্য স্বপ্রাচীন সভ্যতার তুলনায় ইহার স্থান কোথায় । এত দিন ঐতিহাসিকদের মধ্যে একটি বদ্ধ বিশ্বাস ছিল যে মানবসভ্যতা বিকাশের ইতিহাসে সৰ্ব্বপ্রথম স্থান মিশরের কিংবা মেসোপটেমিয়ার যাহা প্রথমোক্ত দেশের নীল নদী কিংবা দ্বিতীয় দেশের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীদ্বয়কে অবলম্বন করিয়া গড়িয়া উঠিয়াছিল। স্রোতস্বতী যে শুধু জলস্রোত বহিয়া আনে তাহা নহে, উহা সভ্যতা-স্রোতেরও উৎস। নদীর জল ও প্লাবন উষর আকৰ্ষিত ভূমিকে সুজলা স্বফল করিয়া সভ্যতার ক্ষেত্র গুজন করে, কিন্তু সেই নিয়ম অনুসারে সভ্যত যে কেবল নীল নদা কিংবা টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিসের ধারা অতুগমন করিয়া পৃথিবীতে সৰ্ব্বপ্রথম প্রবাহিত হইয়াছে, আর অন্য কোন নদীর ধারে উহার আবির্ভাব হয় নাই, এ-কথা এত দিন প্রমাণের অভাবে নিণীত হইতে পারে নাই। কিন্তু সম্প্রতি এই সন্দেহের ভঞ্জন, এই সমস্যার উত্তর আবিষ্কৃত হইয়াছে। সিন্ধুদেশের মরুভূমিতে পঞ্জাবের প্রাচীন শহর হারাষ্ট্র ও সিন্ধুদেশের মহেনজোদড়ো নগরে সভ্যতার যে নিদর্শনসমূহ পুঞ্জীভূত হইয়াছে তাহার পর্যালোচনার ফলে ইহাই সৰ্ব্ববাধিসম্মত হইয়াছে যে মানবজাতির সভ্যতার উন্মেষ ভারতবর্ষেই হইয়াছিল । মৃতরাং ভারতীয় সভ্যতা জগতের অন্য কোন সভ্যতার অপেক্ষা অপ্রাচীন নহে । বাহ্যিক বাস্তব প্রমাণের পরিচয় পাইবার পূৰ্ব্বেই কবির অস্তদৃষ্টি অনেক দিন আগে এই ঐতিহাসিক সত্যের ঘোষণা করিয়াছে – প্রখম প্রভাত উদয় তব গগনে, প্রখম সামরুব তব তপোবনে, প্রথম প্রচারিত তব বনভবনে জ্ঞান ধৰ্ম্ম কত কাব্যকাহিনী । আজ মহেনজোড়োর স্বগভীর ভূগর্ভ-নিহিত স্বপ্রাচীন সভ্যতার নানাবিধ উপকরণ-সামগ্রী ও নিদর্শননিচয় এই বাণীর প্রতিধ্বনি করিতেছে। কিন্তু ঐতিহাসিকের দুর্ভাগ্য যে ভারতীয় সভ্যতার হষ্টিকৰ্ত্তারা তাহদের স্বষ্টির দিন-ক্ষণ-তারিখ কোন রকমে লিপিবদ্ধ কিংবা তদ্বিষয়ে কোন প্রমাণ রাখিয়া যাইবার প্রয়োজন অতুভব করেন নাই। অনন্তের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি থাকার জন্য কালের মহিমার প্রতি র্তাহাদের মনোযোগ ছিল না। শুধু কাল কেন, বাস্তব ও নশ্বর দৈহিক জীবনের ঘটনাবলীর প্রতি র্তাহারা স্বভাবতই উদাসীন ছিলেন । সেই জন্যই সংস্কৃত ভাষায় রচিত সহস্ৰ সহস্র গ্রন্থের ভিতর অধিকাংশেরই রচনার কাল, এমন কি রচয়িতার নাম পৰ্য্যস্ত জানা যায় না। শুধু বেদ, ব্রাহ্মণ, উপনিষদ কেন, অপেক্ষাকৃত আধুনিক ভগবদগীতা বা শ্রীমদভাগবত পুরাণের ন্যায় দর্শন ও ধৰ্ম্মের সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট অবদানেরও কালনির্ণয় একরূপ অসম্ভব । এদিকে গুরুর মৰ্য্যাদা রক্ষণকল্পে শিষ্যের গ্রন্থ গুরুচরণে সমর্পিত হইয়াছে। “ ইতি মল্ল,” “ইতি তৃগু,” “ইতি কাত্যায়ন,” “ইতি কৌটিল্য” প্রভৃতি বচন নির্দেশের দ্বারাই অনেক পরবর্তী কালে রচিত শাস্ত্র ভক্তশিষ্য-পারম্পধ্যের দ্বারা তাঙ্গদের আদি গুরুর প্রতি আরোপিত হইয়াছে। সংস্কৃত সাহিত্যের প্রসিদ্ধ গ্রন্থের মধ্যে এক পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী ও পতঞ্জলির মহাভাষ্য এই দুইটিরই গ্রন্থকার ব্যক্তিগতভাবে আমাদের পরিচিত । চিস্তা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে বাস্তবের প্রতি উদাসীনতার যে পরিচয় পাওয়া যায়, তাহার প্রভাব জাতীয় জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রকেই আবহমান কাল হইতে নিয়মিত করিয়াছে । তাই হীরাপ্পা ও মহেনজোঁদড়োতে সভ্যতার প্রথম প্রভাতের যে অতুলনীয় নিদর্শন সমগ্র জগতের ইতিহাসের এক নূতন অধ্যায় উদঘাটিত করিয়াছে, তাহারও সঠিক কালনির্ণয়ের