পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

いこ@o প্রবণসী ১৩৪৪ যে ভারতবর্ষ মামুষের শ্রেষ্ঠ খাদ্য প্রথম আবিষ্কার করিয়াছে এবং তৎসঙ্গে মানবসভ্যতার ভিত্তি প্রথম প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে। তাই আমরা দেখিতে পাই, মহেনজোদড়োর ভূগর্তে যে গমচাষের পরিচয় পাওয়া গিয়াছে সেই গম আধুনিক পঞ্জাবজাত গমের পূর্বরূপ ও মূলস্বরূপ। এই কথা বিশেষজ্ঞগণ স্বীকার করিয়াছেন এবং সৰ্ব জন মার্শালের উপরিউক্ত গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। উপসংহারে আর একটি কথার উল্লেখ করিতে চাই। অনেকে মনে করেন যে মহেনজোদড়োতে যে প্রাচীন সভ্যতা আবিষ্কৃত হইয়াছে তাহ না-কি বৈদিক সভ্যতা অপেক্ষা প্রাচীন এবং বৈদিক সভ্যতা উহার কাছে ঋণী। বৈদিক সভ্যতাই যে ভারতের এবং পৃথিবীর প্রাচীনতম আদি সভ্যতা তাহার প্রমাণ এখানে অবতারণা করিবার অবসর নাই । বেদবিৎ ডাক্তার লক্ষ্মণস্বরূপ বিশেষ ভাবে এই সিদ্ধাস্তের প্রমাণ দিয়াছেন। এই বিষয়ে আমিও আমার নূতন ‘হিন্দু সিবিলিজেশন' নামক গ্রন্থে কিঞ্চিৎ আভাস দিয়াছি। যাহারা সিন্ধু-সভ্যতাকে বৈদিক সভ্যতা অপেক্ষা প্রাচীনতর মনে করেন, তাহাদের একটি মূল প্রমাণ যে মহেনজোদড়োতে যোগীর প্রতিকৃতি পাওয়া যায়, কিন্তু ঋগ্বেদে যোগের কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না। এই সিদ্ধান্ত ভ্রান্তিমূলক ও সম্পূর্ণ ভাবে হিন্দুধৰ্ম্মমতের বিরুদ্ধ। হিন্দু মাত্রেরই বিশ্বাস যে ঋগ্বেদ অপৌরুষেয় অতীন্দ্রিয় যোগ-সাধনা-লব্ধ-জ্ঞান-প্রস্থত । এই বিশ্বাস যুগে যুগে সৰ্ব্বশাস্ত্রে ধারাবাহিক প্রকাশ পাইয় অাসিতেছে। বর্তমান ক্ষেত্রে আমি এই বিশ্বাসের ভিত্তিস্বরূপ ঋগ্বেদের কয়েকটি স্তোত্র মাত্র উল্লেখ করিব । ঋগ্বেদের ১।১৬৪৪৫ স্তোত্রে যোগীরই উল্লেখ আছে যিনি মনীষী ব্রাহ্মণ বাগদেবীর বা শব্দ-ত্রহ্মের আরাধনা করেন [ 'মনীষিণ: মনসঃ স্বামিন: স্বাধীনমনস্কা ব্রাহ্মণা: রবাস্যস্ত শব্দব্ৰহ্মণোহধিগস্তারো যোগিন’ ( সায়ণ ) ] । দশম মণ্ডলের নানা স্থক্তে তপস্যার উল্লেখ আছে। ১০৯৪ স্তোত্রে সপ্তর্ষির কথা আছে যাহারা তপোনিবিষ্ট (‘তপসে যে নিষেদুঃ' )। ১৫৪২ স্তোত্রে তপস্তার বিধি বর্ণিত আছে, যথা, ‘কৃচ্ছ্বচাম্ৰায়ণ যাহার দ্বারা তপস্বী “অনাধুষ্য হন। এই স্তোত্রে রাজস্বয়, অশ্বমেধ, বা হিরণ্যগৰ্ভ-যোগ ইত্যাদিরও ইঙ্গিত সায়ণের মতে পাওয়া যায়। এই সকল উদাহরণ সাযুণাচাৰ্য্য উল্লেখ করিয়াছেন। ঋগ্বেদে ইহার ইঙ্গিত মাত্র আছে । ১৬৭১এ তপের উল্লেখ আছে ( স্বং তপ: পরিতপ্য অজয় স্ব: ) । ১৩৬২ স্তোত্রে বন্ধলধারী মুনির বর্ণনা আছে ( ‘পিশঙ্গ বসতে মল' ) যিনি বায়ুর নির্বাধ গতি ও সূক্ষ্ম শরীর তপঃপ্রভায় অর্জন করেন এবং যিনি সমাধিস্থ হইয় থাকেন। বাতস্ত প্রাজিং (গতিং ) মমুফতি ; উন্মদিত মৌনেয়েন (মুনিভাবেন লৌকিক সর্বব্যবহারবিসর্জনোনোন্মদিতা উন্মত্তা ) বাতান মা তস্থিম বয়ম্ )। পরবর্তী স্তোত্রদ্বয়ে মুনির আরও নির্দেশ আছে। তিনি বায়ুর ন্যায় সৰ্ব্বব্যাপী ( ‘অন্তরীক্ষেণ পততি বিশ্ব। রূপাবচাকসাং' ) স্বর্য্যের ন্যায় সহস্রাক্ষ, স্বকৃতিসম্পন্ন দেব-সথ, ও দেবেষিত অর্থাৎ দেবদুলভ দেবেপ্তিত। ১৯০১ স্তোত্রে ঋত ও সত্যকে তপস্যালব্ধ ফল এবং সমগ্র স্বষ্টিই ব্রহ্মের তপস্যাপ্রস্থত বলিয়া বর্ণিত হইয়াছে ( ‘ঋতং চ সত্যং চাভৗদ্ধাত্তপসোধ্যজায়ত' ) । ঋগ্বেদের প্রথম মণ্ডলেও ৫৫৪ স্তোত্রে ঋষির কথা আছে, যিনি বনবাসী হইয়া ভগবানের ধ্যান করেন । ঋগ্বেদের ৭৷১০৩১ স্তোত্রে ‘ব্রতচারী ব্রাহ্মণের উল্লেখ আছে। যাস্কের মতে ব্ৰতচারীর অর্থ ‘অক্ৰবাণ মৌনী (নিরুক্ত, ৯৬ )। দশম মণ্ডলের ৭১১ স্তোত্রে স্পষ্টই যোগের কথা আছে যাহার দ্বারা “পরব্রহ্মজ্ঞানে”র সাধনা করিতে হয়। বক্তব্যের বিস্তার করার প্রয়োজন নাই । যাহারা যোগ-সাধনকে অনাৰ্য্য-সাধন মনে করেন, আশা করি র্তাহারা ঋগ্বেদের এই সকল বচন প্রণিধান করিয়া তাহাদের সিদ্ধাস্তের পুনবিচার করিবেন।