পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NES R ভবিষ্যতে এই দুরন্ত প্ৰগলভ মেয়েটাকে যদি কখনও মনে পড়ে তবে অনেক দিনের দুর্ব্যবহারের সঙ্গে, আজকের কথাটাও একটু মনে করবেন ত?”

  • সীম, আজকের আনন্দ আমার সমস্ত জীবনের পরম সম্পদ হয়ে রইল। আমার দুঃখ এই যে, এমন অমূল্য জীবনটাকে জগতের সেবায় লাগাতে পারলাম না । আজ

আমার ধারণা আরও দৃঢ় হয়েছে যে, ধ্বংসের দ্বারা মানুষের মুক্তি হয় না, মানুষের মুক্তি তার স্বষ্টিতে। সমস্ত বিশ্বপ্রকৃতির মধ্যে তারই ইঙ্গিত ধ্বনিত হচ্ছে। গাছ তার পাতাকে ধ্বংস ক’রে মুন্দর হয় না, সে তার অন্তরের পরিপূর্ণ নূতন স্বষ্টির বিকাশের প্রেরণায় পুরাতনকে ঝরিয়ে দেয়। সেখানে পুরাতনের ধ্বংসের পশ্চাতে থাকে স্বজনের লীলা । সেই স্বষ্টির জোয়ারের মুখে পুরাতন আপনি খসে যায়। ধ্বংস ক’রে নিয়ে বাইরের থেকে স্মৃষ্টি করা চলে না । সৃষ্টির মধ্যে বিশ্বপ্রকৃতির মধ্যে তাই ‘এনার্কি’ কোথাও নেই। ওটা একটা স্বাক্টছাড়া প্রকৃতিবিরুদ্ধ জিনিষ । তোমার মধ্যেকার সেই সুন্দর স্বাভাবিক তেজোময়ী স্বজনশক্তিকে দেশের দুর্দশা মোচনে লাগাতে পারলাম না, এই দুঃখই আমার রয়ে গেল।” সীমা আজ কোন তর্ক করলে না । যে-স্বরে বাধা ছিল তর্কের তীব্রতা সেখানে গিয়ে পৌছয় না । সে হেসে বললে, “নিখিলবাবু, আপনি আজ আর আমার কথা ভেবে দুঃখ করবেন না। পরিপূর্ণ বিশ্বাস এবং নিষ্ঠার সঙ্গে যদি এ পথে কাজ ক’রে থাকি তবে বিশ্বাস এবং নিষ্ঠাটুকুর মঙ্গল প্রভাব থেকে আমার দেশ বঞ্চিত হবে না। আপনি আপনার অপরাজেয় দেশপ্রীতি দিয়ে নূতন মাতুষ গ'ড়ে তুলুন—দেশকে যার শাস্তিতে আনন্দে মুক্তির পথে নিয়ে যাবে। কিন্তু তার আগে অfপনার রক্ষার একটা ব্যবস্থা মনে এসেছে, সেইটুকু করতে হয় ।” “আমার রক্ষা ! তোমাদের যা গতি আমি সেই গতিই আজ একান্ত মনে প্রার্থনা করছি। অামি—” “তা হয় না, নিখিলবাবু । আপনার আরও কর্তব্য আছে । আপনি তুলে যাচ্ছেন যে হতভাগিনী জ্যোৎস্নার স্বামীকে উদ্ধার করে তাকে স্বর্থী করবার ভার আপনারই । গুমুন, আপনাকে বলা হয় নি । কিন্তু আর ত সময় নেই । তাঁর মন আজি প্রবাসী ১৩৪৪ তাই আপনাকে জানাচ্ছি। শচীনবাবু আমার এথানেই বন্দী আছেন।” ‘শচীনবাবু এখনও বেঁচে আছেন ?” নিখিলের একট দুশ্চিন্তা যেন নেমে গেল । “হঁ্যা। অামি ভেবেছি, তার ঘরে আপনাকে একঃ সঙ্গে বন্দী ক'রে রেখে দিই। তা হ’লে পুলিস এসে আর আপনাকে আমাদের দলের ব'লে অত্যাচার করবার কোনও কারণ পাবে না।” নিখিল এবার জোর দিয়েই বললে, “তা কিছুভেঃ হবে না, সীমা । তোমাকে এই বিপদের মুপে ফেলে এক পাও নড়ব না । মিছামিচি ও অতুরোধ আমাকে ক’হে কোন লাভ নেই ।” s বহু চেষ্টা সত্ত্বেও সীম; নিখিলকে কিছুতেই সম্মত করতে পারল না । এমন সময় স্তব্ধ রজনীকে সচকিত ক’রে একটা বন্দুকের আওয়াজ গৰ্জ্জে উঠল । শিথিল ত্ৰস্ত হ’য়ে উঠে দাড়াল । সীম। হেসে বললে, “পদুম, আমি আসছি । এ বন্দুক আমাদের ছাদ থেকেই ছোড়া হয়েছে । রঙ্গদার উৎসব স্বয় হ’ল । এরই জন্যে বেচারা এত দিন অপেক্ষা করেছে ” ব’লে সে বেরিয়ে গিয়ে সব দরজা ভাল ক'রে বন্ধ ক’রে দিয়ে এসে বসল। جون রঙ্গলাল তার অতুচরদের নিয়ে সমস্ত রাত যথাসাধ্য বিস্তৃত আয়োজন ক’রে ছাদে অপেক্ষা করছিল । তুলু দত্তকে সে যে বর্ণনা দিয়েছিল তাতে একটা প্রকাণ্ড দলের বিরুদ্ধে যে পুলিসকে লড়াই করতে হবে এমনি একটা আভাস দেওয়া ছিল। কোন ছোটখাট ছিটকে ব্যাপারে আয়োজনটার গুরুত্ব এবং উত্তেজনা লঘুক্রিয়ায় পরিসমাপ্ত না-হয়, এ-বিষয়ে রজলাল চেষ্টার ক্রটি করে নি। ভুলু দত্তও প্রকাও আশাঃ বিপুল বাহিনী নিয়ে এসে উপস্থিত হয়েছিল। একটা বৃহৎ বাগান । বড় বড় প্রাচীন পাদপশ্রেণীতে রাত্রে প্রায় অরণ্যের মত মনে হয় । গাছের আড়ালে আড়ালে নিজেদের রক্ষা ক'রে বাড়ীর দিকে অগ্রসর হওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ ও নিরাপদ। বাড়ীর কাছাকাছি