পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশষাঢ় পৌছে একট। স্বল্পাধিক বিস্তৃত উন্মুক্ত অঙ্গন। সেইখানটাতেই বিপদের সম্ভাবনা জেনে ভুলু দত্ত বাড়ীর চতুৰ্দ্দিক বেষ্টন ক’রে বড় বড় গাছের গুড়ির অন্তরালে যথাসম্ভব নিজের বাহিনীকে সংযোজিত ক’রে রাখলে । শেষরাত্রের দিকে গোপনে অগ্রসর হয়ে অকস্মাৎ আক্রমণ করা যায় কি না ভেবে সে একবার এগোবার চেষ্টা করলে । রঙ্গলাল প্রস্তুতই ছিল । সে দ্বিধামাত্র না করে ছাদের উপর থেকে এক মুহূৰ্বে আক্রমণ মুরু করলে। দত্ত দেখলে গুলির মুথে এগিয়ে গেলে অকারণে নরহত্যার বলক্ষয়ের সম্ভাবনা । সে আবার হ’টে গাছের আড়ালে চ’লে গেল এবং মিৰ্বিবাদে ছাদ লক্ষ্য করে গুলি চালাবার হুকুম দিলে । তার ইচ্ছ। ছিল যে যদি অগ্রসর হ'তে নাও পার! যায় তবে শক্রপক্ষের গুলির রসদকে এই উপায়ে ক্রমে নিঃশেষ ক'রে ফেলবে । তথ} তার এই মতলব ব্যর্থ হ’ল না। রঙ্গলালদের গোলাগুলির আয়োজন অত্যস্ত অধিক ছিল না। যুদ্ধ ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতাও কিছুমাত্র নেই। সীমা একদিন ঠিকই বলেছিল যে, “দুঃসাহস তার যতটা আছে, বুদ্ধি যদি তার ততটা থাকত তবে ভারতবর্ষে তার তুলনা থাকত না।” সে প্রথম ভুল করেছিল ছাদের উপর আশ্রয় নিয়ে। মৃত্যু আকাঙ্ক্ষ ক'রে যে পুলিসবাহিনী স্ববোধ ছেলের মত মুক্ত অঙ্গনে অকারণে তাদের বন্দুকের ‘চাদমারি’ হ’তে এগিয়ে এসে লড়াই করবে না এটা তার মাথায় আসে নি। ছাদের উপর থেকে গুলি চালাতে গেলে গাছের বিস্তীর্ণ শাখাপল্লবাশ্রয়কে ভেদ ক’রে যে আক্রমণ কর। সম্ভব নয় অথচ বুক্ষকাণ্ডের অস্তরালে নিজেদের রক্ষা ক'রে শাখাপল্লবের অবকাশ-পথে তাদের প্রত্যভিবাদন করা যে পুলিসের পক্ষে অপেক্ষাকত সহজ, সে কথা পূৰ্ব্বে তার মস্তিষ্কে প্রবেশ করে নি। প্রবেশ যথম করল, তখন তার ক্ষীণসঞ্চয় রসদের আর অল্পই অবশিষ্ট আছে। পুলিশ যে তাদের বিষম আ ক্রমণে হ’টে গিয়ে পেছিয়ে গেল, এই আননেই সে প্রথমটা বিপুল বিক্রমে গুলি চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু প্রতিপক্ষের আক্রমণও নিরস্ত ছিল না। ছাদের আলিশার প্রত্যেকটি রন্ধ, লক্ষ্য করে অনবরত গুলির পর গুলি তার হাড়ছিল । তাতে ফল নিতান্ত থারপ হয় নি। রঙ্গলালের 哆 ত্ৰিবেণী NLSෂA দলের এক জন মৃত ও অন্ত সকলেই অল্পবিস্তর আহত হয়েছিল। ঘণ্ট। দুয়েক এমনি যুদ্ধ চলবার পর তাদের দলের একটি ছেলে সাহস করে বললে, “রঙ্গদা, গুলি ত প্রায় ফুরিয়ে এল । ওদেরও যে বিশেষ অনিষ্ট করা গেছে, এমন ত বোধ হয় না। শেষে কি খালি হাতে গিয়ে ওদের কাছে ধরা দিতে হবে ?” ধরা দেবার কথাতেই রঙ্গলালের সব চেয়ে আতঙ্ক, সব চেয়ে আপত্তি। সে বললে, “কি করতে চাও বল ।” “নীচের ঘরে চল ; জানলা দিয়ে গুলি চালাবে। তাতে না হ’লে বেরিয়ে পড়ব । মরতে ত হবেই ?” রঙ্গলাল উৎসাহিত হ’য়ে বললে, “বেশ ভাই, চল । বিন রক্তপাতে মরা হবে ন৷ ” যুদ্ধের অভিজ্ঞতা দু-জনেরই সমান । নীচের ঘরের দরজা জানালার আড়ালে বসে নুতন করে তারা আক্রমণ সুরু করলে । অজস্র রক্তপাতে রঙ্গলাল এবং তার সঙ্গীদের দেহ ক্রমে অবসন্ন হয়ে আসছিল ; কিন্তু উৎসাহের তাদের অস্ত ছিল না । কিন্তু জীবনীশক্তি ক্রমেই তাদের ক্ষয় হয়ে আসছিল । রসদও প্রায় নিঃশেষপ্রায় । দুটি ছেলে সংজ্ঞা হারিয়ে রঙ্গলালের পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ল । রঙ্গলাল পলকের জন্য তাদের দিকে ফিরে তাকাল । এতক্ষণে রঙ্গলাল তাদের ভুল বুঝতে পারল । ছাদের উপর থেকে বাড়ীর চতুদিকের আক্রমণকে প্রতিহত করা সহজ ছিল । কিন্তু সকলেই ছাদ থেকে নেমে এসে মাত্র একটি দিকের উপর তাদের প্রভুত্ব রইল। এই ত্রুটিটুকু তুলু দত্তের লক্ষ্য করতে বিলম্ব হয় নি। পশ্চাৎ দিক থেকে বাড়ী চড়াও করার এই সুযোগ সে ছাড়লে না । অল্প কয়েকজনকে সামনে মোতায়েন রেখে সে নিজে ঘুরে বাড়ীর পিছন দিক থেকে গিয়ে দরজা ভেঙে বাড়ীতে প্রবেশ করলে। রঙ্গলাল দেখলে, আর কোন আশা নেই। তখন দুই জনে নিজেদের সমস্ত শক্তি সংহত করে নিয়ে, দরজা খুলে সেই মুক্ত প্রাঙ্গণে অজস্র গুলির মুখে নিশ্চিত মৃত্যুর আলিঙ্গনের মধ্যে বিপুল বিক্রমে ঝাপ দিয়ে পড়ল । একটা গুলির চোট থেয়ে তার সঙ্গী অনিল চেচিয়ে বললে, “রঙ্গদ', চললাম। গুড়, বাই।” রঙ্গলাল তার শেষ গুলিট বন্দুকে ভরতে ভরতে