পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগষাঢ সট থেকে ঘুরে বললে, “বাবু, খোকনবাবুর জন্যে একটু মেঠাই কিনে নিয়ে যাই । আর একটা বড় কাঠের ঘোড় । আমার পিঠে ঘোড়ী-ঘোড়া থেলতে বড় ভালবাসত।" বুদ্ধের কল্পনা খোকনের সেই শিশুকালকে অতিক্রম ক’রে এগোতে পারে না । তার রকম দেখে শচীন্দ্র হেসে বললে, “খোকন কি আর এতটুকুনটি আছে ? কাঠের ঘোড়ায় তার মানহানি হবে ধে ।” তবু সে বৃদ্ধের উৎসাহকে ক্ষুণ্ণ না ক'রে কিছু মিষ্টি, চকোলেট, এয়ারগান প্রভৃতি উপহার-শ্রব্য কিনে দিল। কমলার জন্যেও কিছু কিনবার ইচ্ছায় তার মনটা উদগ্রীব হ’লেও দ্বিধায় সঙ্কোচে সে কিছু কিনতে পারলে না। কে জানে কমলার পছন এখন কেমন হয়েছে, হয়ত কিছু দিতে গিয়ে লজ্জাই পেতে সবে । দেবার ত সময় বয়ে যাচ্ছে না । J: 5 শচীন্দ্র ও ভোলানাথ যখন গিয়ে মালতীদের বাড়ী পৌছল তখন দ্বিপ্রহরের দীর্ঘ দিবামিত্র সমাপন ক’রে মালতীর মাতুল বাইরের ঘরে উবু হয়ে বসে, হাটুর কাপড় খসিয়ে একটি থেলো হুর্কীয় তাম্রকূট সেবনে আলস্যচর্চায় রত। নন্দলালের হত্যার তড়াসে সৰ্ব্বদাই তার প্রাণে একটা আতঙ্ক জেগে ছিল । পারতপক্ষে সে নিদ্রার সময় রাত্রে বা দিনে ঘরের জানালা দরজা মুক্ত রাখত না। আজও অভ্যাসমত চতুৰ্দ্দিক বন্ধ ক’রেই অন্ধকূপের কূপমণ্ডুকের মত সে তাম্রকুট ধ্বংস করছিল । কড়া নাড়ার আওয়াজে অকস্মাং চকিত হয়ে তার হাত কেঁপে কলকে থেকে জলস্ত কয়লা বিছানার উপর পড়ে গেল। বিছানা ঝাড়তে, কাপড় সামলাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে স্তৃকার জল ফেলে একটা কাগুই বধিয়ে দিলে সে। নন্দলালের হত্যাকারীদের কেউ যে দরজায় উপস্থিত স্বতরাং তার যে প্রাণ সংশয়, এ-বিষয় তার সন্দেহ মাত্র ছিল না। কড়া নাড়ার কোনও প্রকার প্রত্যুত্তর দেওয়া সে সমীচীন বোধ করলে না । ভিতরদিকের দরজা খুলে কাপড়ের খুট গুজতে গুজতে সটান সে মালতীর দরজায় গিয়ে উপস্থিত হ’ল। ধটি পেতে মালতী অঞ্জয়ের জন্য ফল ছাড়িয়ে থালায় ত্ৰিবেণী N93g সাজাচ্ছিল। মাতুলও নিত্য এই ফলের অংশীদার। মালতী তার ভাব দেখে অবাক হয়ে বললে, “কি মামা, ব্যাপার কি ? কিছু চাই নাকি ?” মালতীকে দেথে কতকটা সম্বিত ফিরে পেয়ে, সে বেশ জুত ক'রে দরজার বাইরে একটা মোড়ায় জমে বসে বললে, “কাল যে সেই খাজুর দিইছিলে, তা একটু টকু হলি কি হয়, খাতি বড় সরেশ । আছে নাকি দুটো ?” বাইরের ঘটনা যে প্রণিধানযোগ্য তা তার ব্যবহারে প্রকাশ পেল না। দুটি নারী ও একটি শিশুর সে রক্ষক। দিব। দ্বিপ্রহরে কড়া নাড়ার আওয়াজে যে সে আতঙ্কিত হয়ে পলায়ন করেছে এ-কথা প্রকাশ করা দুরূহ। সুতরাং ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটে নি এই তার ভাব । মালতী একটু হেসে গোটা কয়েক প্রণ তার হাতে তুলে দিলে। তারই গোটা দুই সে গালে ফেলে দিয়ে রসচর্চায় সবে মন দিয়েছে এমন সময় বিরক্ত ভোলানাথের হাতের কঠিন তাড়নে কড়া কৰ্কশ নিনাদে পাড়া চকিত ক’রে তুললে । মাতুল দুই হাতে কান ঢেকে মাথা নীচু করে চৰ্ব্বণের অবসরে বললে, “হম্ন, হমূন ঐ আবার নাড়তি লেগেছে। হাম্ন, নেছে নেছে, সব কটারে নেছে এবার। হাম্ন, হামূন ।” মালতী বললে, “কে ডাকুছে যে মামা । কি বকচ্‌ বিড়বিড় ক’রে । যাও খুলে দেখ গে, কে ডাকে !” “আরে দেখিছি! বুজতি পারছ না ? নেবে, এবার সব কটারে নেবে । আমারেও ছাড়বে না । মালতী এতক্ষণে ব্যাপারটা কতকটা বুঝতে পেরে হেসে ফেললে, “ও তাই বুঝি ভয়ে পালিয়ে এসেছ ? ভ্যালা লোককে আমাদের পাহারায় দিয়ে গেছেন নিখিলবাবু। অজয় আয়ু ত বাবা দেখি, কে । হয় ত নিখিলবাবুই এসে থাকবেন । বাইরে দাড়িয়ে, বেচারা কি ভাবছেন বল ত মামা ?” নিখিলের কথাটা মাতুলের মনে উদয় হয় নি। সে তৎক্ষণাৎ আশ্বস্ত হ’য়ে বললে, “ও তাই یکصصره তাই কই । আমি থাকৃতি কোন - “ করবে । চল চল, আমি যাব দোরটা খুলে দেব।"