পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ নারী ও পরশু r * $4 আর একবার ট্রেনের সকলে সচকিত হইয়া উঠিলেন। বউটর চীৎকারে তিনটি লোকই অস্থির হইয়া উঠিল, কেহ বউটর হাত ধরিয়া নামাইবার চেষ্টা করিল, কেহ বা কণ্ঠস্বর যথাসম্ভব কোমল করিয়া বউটিকে সাস্বনা দিবার ছলেই যেন কহিল, ভয় কি, নেমে এস না। বউ কিন্তু এক ভাবে জানালার কাঠ চাপিয়া ধরিয়া ভারস্বরে চীৎকার করিতে লাগিল, ওগো আমায় কেটে ফেলবে গে, আমায় কেটে ফেলবে। প্লাটফরমে লোক জমিয় গেল, অদূরে রেলওয়ে পুলিসের লাল পাগড়ি দেখা গেল-কামরার লোকগুলিও সমশ্বরে প্রশ্ন করিতে লাগিলেন–কি, ব্যাপার কি ? লোক তিনটি বউয়ের চীৎকারে স্তম্ভিত হইয়া গেল এবং মনে মনে যথেষ্ট ক্রুদ্ধ হইলেও সে ক্রোধ প্রকাশ করিল ন। একবার হালিশহর হইতে টানিয়া বউটকে উহারা ট্রেনে তুলিয়াছে, পুনরায় বল প্রকাশ না করিলে সাধ্য কি উহাকে নামায়। চারি দিকের গোলমালের মধ্যে শেষ চেষ্টা স্বরূপ বউটর হাতে উহারা হেঁচকা টান দিল। বউ তখন প্রাণপণ শক্তিতে জানালার কাঠ চাপিয়া ধরিয়াছে— গৰ্ত্তের মধ্যে মুখ লুকাইলে সাপের ষে অবস্থা হয়, সেইরূপ। যদিও উহাদের টানাটানিতে বউয়ের ডান হাতখানি ছিড়িয়া যায় তথাপি ট্রেন হইতে বউকে যে নামাইতে পাব্রিৰে সে ভরসা কম। এদিকে দর্শকের লোকগুলির উপর রুখিয়৷ উঠতেই উহার বউটর হাত ছাড়িয়া পুনরায় অম্বন-বিন স্বয় করিল,-ওগো বাছ, তোমার পায়ে পড়ি নাম । ব্যগ্রতা করি নাম । বউ কাদিতে কাদিতে বলিতে লাগিল-ওগো কেটে ফেলবে গো, কেটে ফেলবে। এক জন বলিল, তবে একটু চুপ করে ব’, আমি তোমার টিকিট নিয়ে আসি ॥—বলিয়া সে সরিয় পড়িল । দেখা গেল, তাহার সঙ্গীরাও তাহার অনুবন্ত্ৰী হইয়াছে। বলা বাহুল্য, টিকিট লইয়া কেহ ফিরিল না। যথাসময়ে ঘণ্ট। বাজাইয়া গাড়ী ছাড়িল এবং কামরার মধ্যে বউ পুনরায় ঘোমটা টানিয়া নিশ্চিন্ত মনে ছেলেকে স্তন্তপান করাইতে লাগিল । এত বড় একটা ঘটনার পর বউ নিশ্চিন্তু হইতে পারে, ট্রেন-যাত্রীর চোখ বুজিয়া থাকেন কি করিয়া ? কি করিয়া পরম আরামে পান চিবাইতে চিবাইতে র্তাহারা ছিন্ন কাহিনীর স্বত্র ধরিয়া অগ্রসর হন বা তাস পাতিয়া সেতু রচনায় মনোনিবেশ করেন ? সকলেই বউটর মুখের পানে চাহিয়া সকাতরে, সবিনয়ে ও সনিৰ্ব্বন্ধে জিজ্ঞাসাবান্ধ चांग्रछ कद्भिट्लम । বউ কাহারও প্রশ্বরাশির প্রতি কটাক্ষপাত না করিয়া পাশের বর্ষীয়সী হিন্দুস্থানী মহিলার সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা বলিতে লাগিল । বোঝা গেল হিন্দুস্থানী মহিলাটি বাংলা বোঝেন ভাল এবং অক্ষান্ত বাস্ত্রীর মত এই ঘটনা সম্বন্ধে তাহারও কৌতুহল किङ्कमाज कम नःश्। " - হিন্দুস্থানী রমণীর পানে বউ যখন মুখ ফিরাইখ বসিয়াছে ও ঘোমটা অল্প নামাইয়া অসংখ্য প্রশ্নের জবাব দিয়া চলিয়াছে, তখন আসল খবর বাহির হইতে মিনিটখানেকও বিলম্ব হইবে না। প্রবল জলোচ্ছ্বাস বাধ বাধিয়া কতক্ষণ রাখা যায়। প্রথমে বাধের তলদেশ চোয়াইয়া জল গড়াইতে থাকে, তার পর ছন্থ শস্বে বঙ্ক আলে। ট্রেনস্থ লোকগুলির কৌতুহলের ফসল—বস্তাবের্গ-নিবুপ্তির সঙ্গে সঙ্গে যে আশাতীত রূপে সমূদ্ধিশালী হইয়া উঠিবে, সে-বিষয়ে নিঃসন্দ্বেহ । হিন্দুস্থানী রমণী বউয়ের কাহিনী শুনিয়া ট্রেনস্থ সকলের প্রশ্নের যে-ভাবে উত্তর দিলেন, তাহাতে বোঝা গেল, বাংলা বলার ক্ষমতা উহার আছে এবং স্ত্রীলোক হইয়৷ স্ত্রী-হৃদয়ের মনস্তত্ব বিশ্লেষণের দক্ষতাও কোন বরষীৰ চেয়ে কম নহে। বউয়ের নাম স্বশীল। বাপের বাড়ী গোপুর। বাপের অবস্থা মোটেই সচ্ছল নহে। পাটের কলে কাজ করিয়া যাহা পায় তাহাতে বৃহৎ পরিবারের কোনক্রমে দিনগুজরান হয়। মেয়েরাও কিছু কিছু শারীরিক পরিশ্রম করিয়া থাকে। না করিলে এক ৰেল উপবাস অনিশ্চিত। যেমন অন্তের বাড়ী ধান ভান, ডাল তৈয়ারী করা, গোবর কুড়াইয়া ঘুটে তৈার ও বিক্র, কোন গৃহস্থবাড়ীতে কলসী করিয়া গঙ্গাজল যোগানো ইত্যাদি। দিন না চলিলেও