পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আষাঢ় শহুরে মেয়ে 辦 లినిని দিতেছেন, আসলেরও কিছু হয়ত সামনের বছর দিতে পারিবেন । কিন্তু ইতিমধ্যে মালতী যে তেরো পার হইয়া চৌদ্দয় পা দিতে চলিল নিতান্ত সে ছোটখাট দেখিতে তাই রক্ষা । পাড়াপড়শীর চোখ এখনও তাহার উপর তেমন তীব্রভাবে পড়ে নাই । মালতীর রংটা আবার তিন বোনের ভিতর সকলের চেয়ে কাল। তবে মুখখানিতে খুব লাবণ্য আছে, বড় বড় চোখ দুটি দর্শক মাত্রকেই মুগ্ধ করে। মাথায় চুলও একরাশ। কিন্তু এসব দেথিতে আসিবে কে ? হাড়গিলার মত চেহার হইলেও যদি চামড়াটা একটু শাদ থাকিত, তাহা হইলে ম-বাপের দুর্ভাবনা অনেকখানিই কম হইত। বিবাহ যখন হইতেছে না তখন শুধু শুধু ঘরে বসিয়া থাকিয়া লাভ কি ? মালতী এখনও স্কুলে যায়। কপোরেশন স্কুলে যতখানি বিদ্যালাভ করা যায়, তাহা অর্জন করা তাহার চুকিয় গিয়াছে। পাড়ায় নূতন একটা হাই ইংলিশ স্কুল হইয়াছে, সেইখানেই সে পড়ে । মেয়ে পড়ায় মন্দ না, তাই বাপ সেক্রেটারীকে ধরাধরি করিয়া অৰ্দ্ধেক মাহিনায় তাহাকে ঢুকাইয়া দিয়াছেন। স্কুলের গাড়ীতে সে চড়ে না, ঝিয়ের সঙ্গে পটিয়াই যায়, বেশী ত দূর না। এখন আর তাহার বাল্যকালের মত পোষাক-পরিচ্ছদের দৈন্ত নাই। তবে খুব যে প্রাচুর্য্য আসিয়াছে তাহাও নয়। তবু সপ্তাহে সপ্তাহে এখন সে কাপড়-জামা বদলাইতে পায়। স্কুলে শেলাই শিথিয়াছে, ব্লাউজ সেমিজ চলনসই রকম শেলাই করিতে পারে। দিদিদের কাছ হইতেও যখন তখন এটা সেটা উপহার পায় । ভগ্নীপতি দুইজনই ছোট শালীটিকে সুনজরে দেখে, কাজেই দিদিরা পূজার সময় ছোট বোনকে একথানা রঙীন শাড়ী কিনিয়া দিতে চাহিলে অনুমতির অভাব হয় না । মালতীর মন এখন কিশোরীর অকারণ আনন্দ ও অকারণ বিষাদে সারাক্ষণ দোলায়মান । কেনই যে তাহার চিত্ত একদিন কানায় কানায় ভরিয়া উঠে তাহ সে বুঝিতে পারে না, আবার কেনই যে আর-একদিন বিশ্বসংসার তাহার চোখে কাল হইয়া যায়, তাহারও কারণ সে খুজিয়া পায় না। সে যেন স্বপ্নলোকের মধ্য দিয়া চলিয়াছে, সব অবাস্তব, সব রহস্যময়। তাহার জাগরণ কিসের অপেক্ষা করিয়া আছে কে জানে ? মা মাঝে মাঝে রাত্রে ফিশফিশ করিয়৷ স্বামীকে বলেন, “ওগে, লতি যে পনেরোয় পড়তে চলল।" বাপ চটিয়া বলেন, “ত চলল ত কি করব ? দড়ি বেঁধে তার বয়সটাকে পিছন দিকে টেনে ধ’রে রাখব ?” ম চটিয়া বলেন, “আহ, কি বা কথার ছিরি ” বাপ বলেন, “চেষ্ট ত যথাসাধ্য করছি। বিনা পয়সার চেষ্টায় কি বা হয় ? এক ভরি সোনাও ত আর ঘর ঝোঁটলে বেরবে না ?” মা বিষ্ণ দৃষ্টিতে নিজের শাখাপরা হাত দুইটার দিকে তাকাইয়া থাকেন । মালতীর দুই দিদি যে-বয়সে ছেলের মা হইয়াছে, সে সেই বয়সেও স্কুলে পড়িতে লাগিল। আর একটা বছর যদি মানে মানে কাটিয়া যায়, তাহা হইলে ত সে ম্যাটিক ক্লাসে উঠিয় পড়িবে। পরীক্ষাট দিতে পারিলে চমৎকার হয়। কিন্তু এ-বাড়ীর মেয়ের অদুষ্টে অতখানি আর সহিল না। তাহারও বিবাহ হইয় গেল । মালতীর বড় পিসীমার বেশ অবস্থাপন্ন ঘরে বিবাহ হইয়াছিল । বাপের বাড়ীর অবস্ত পড়িয়া গিয়াছে, কাজেই বড় মানুষের বউ এদিকে বড় একটা আসিতে পাইতেন না । কালেভদ্রে দেখাসাক্ষাৎ হইত স্বামীর সঙ্গে বিদেশেই তাহার দিন বেশীর ভাগ কাটিয়া ধাইত । একটি মাত্র ছেলে, সেও বিবাহ করিয়া সংসারী হই যুঃছে । বউও বড় মানুষের মেয়ে, শাশুড়ীকে খুব যে একটা মানিয়া চলে তাহা নহে। প্রৌঢ় বয়সে হঠাৎ বিধবা হইয়া মালতীর পিসী কেমন যেন অবলম্বমঙ্গীন হতীয় পড়িলেন । শ্বশুরবাড়ীর সংসারট যেন মরীচিকার মত অকস্মাৎ মিলাইয়া গেল, কিছুতেই আর এটাকে নিজের বলিয় তাহার মনে হইল না । বহুকাল পরে আবার শোকাতুর চিত্তে তাই তিনি নিজের বাল্যজীবনের ঘরে ফিরিয়া আসিলেন । হাজার হউক, মা ত এখনও বাচিয় আছেন ? দিন কতক অবিশ্রাম কাল্পকাটির পর মোহিনী-ঠাকুরাণীর মনটা যখন একটু শাস্ত হইল, তখন তিনি একবার ভাল করিয়া বহুদিন-পরিত্যক্ত বাপের বাড়ীর সংসারটার দিকে তাকাইয়া দেখিলেন । সব চেয়ে বড় হইয়ু এবার তাহার চোখে পড়িল অনুঢ়া মালতী।