পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"לכשא . " প্রবণসী ১৩৪৪ মালতী তাগিদের ক্রটি রাখিল না, যতবারই দেখা হয় একই কথা বলে। স্বরেন্দ্রকেও চিঠিতে জানাইয়া দিল যে তাহার চাকরীর চেষ্টা চলিতেছে। স্বরেন্দ্র উত্তরে লিখিল যে স্ত্রী এবং শালীদের চেষ্টা সফল হইবার বিন্দুমাত্রও সম্ভাবন নাই। কত শত এম-এ, বি-এ বলে কাজের অভাবে ফ্যাফ্যা করিয়া বেড়াইতেছে। কিন্তু কাজ একটা জুটিয়া গেল। বিমলা একদিন দুপুরবেলা বেড়াইতে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “হ্যা রে, স্বরেন রেলের কাজ করবে ?” মালতী বলিল, “তা করবে না কেন ? কেন ছোড়দি, কাজ খালি আছে ?” ছোড়দি বলিল, “আছে ত একটা ছোটমোট । আমার জাঠতুতো ভাস্কর রেলে কাজ করেন না ? তিনি জংশনে থাকেন। চার জন নতুন লোক নেওয়া হবে, এখন মাইনে খুব কম, পাচশ টাকা মোটে। মাস-ছয় পরে কাজ পাকা হবে, মাইনেও বাড়বে। বলিস ত স্বরেনের . । তাকে অবিশ্যি কাজের জন্যে দরখাস্ত করতে না হ’লই বা কলিকাতা ?--জংশনও মস্ত জায়গা, সেখানে কলের জল, বিজুলী বাতি, গাড়ী মোটর সব আছে । এমন কি সিনেমাও আছে । মালতী সেইখানে থাকিতে পাইলেই বৰ্ত্তাইয়া যায়। সুরেন্দ্রকে এবার সে বিধিমত আক্রমণ করিল। শুধু চিঠিতে হইবে না মনে করিয়া তাহাকে কলিকাতায় ডাকাইয়া আনিয়া সরাসরি যুদ্ধে নামিয়া পড়িল । একসঙ্গে অনুনয়, বিনয়, চোখের জল, মুখের হাসিতে বেচার সুরেন্দ্রকে পরাজয় স্বীকার করিতে হইল । সে বলিল, “আচ্ছ না-হয় মালগাড়ীর গার্ডের কাজই নিলাম, কিন্তু তুমি একল থাকতে পারবে ? তোমাকে ত আর দশ দিন পরেই ওখানে যেতে হবে ?” মালতী বলিল, “তা আশায় আশায় থাকব এথন । দেওররা এমন কিছু ছোট নয়, জ্যাঠামহাশয়গু রয়েছেন । কাজ পাকা হ’লে ত কোয়াটাস পাবে। তখন সবাই মিলে তোমার কাছে যাব ।” অগত্যা তাই । নববিবাহিত পত্নী, মুখখানিও বড় সুন্দর, তাহার কথা ঠেলা যায় কি করিয়া ? আর চিরজন্ম পাড়াগাঁয়ে ভূত হইয়া থাকিতে মনে মনে সুরেন্দ্রেরও একটু অনিচ্ছা ছিল । মালতীও শ্বশুরবাড়ী গেল, সঙ্গে সঙ্গে তাহার স্বামীকেও কৰ্ম্মস্থলে চলিয়া যাইতে হইল। মালতীর দুই চোখ জলে ভরিয়া আসে, তবু সে জোর করিয়া ঠেকাইয়া রাখে, এখন ভাঙিয়া পড়িলে চলিবে না, ভবিষ্যতের দিকে চাহিয় তাহাকে শক্ত হইতে হুইবে । দিন কোনও মতে কাটিয়া যাইবে । প্রথম প্রথম চিঠিপত্র খুব আসিতে লাগিল । স্বরেন্দ্র কত রকম বর্ণনা দিয়া লেখে, জায়গাটা কেমন, কৰ্মচারীদের বাড়ীঘর কেমন, লোকজন কেমন । মালতীর মন কল্পনায় কত ছবি অঁাকে। ঐ রকম লাল একটি ছোট বাড়ীতে সে সুরেন্দ্রকে লইয়া সংসার পাতিয়াছে, কত মুখে তাহারা আছে । কিন্তু ক্রমে স্বরেন্দ্রের স্বর বদলাইতে লাগিল। চিঠিও যেন কমিতে আরম্ভ করিয়াছে। এত খাটুনি তাহার সহ হয় না, নিজের গ্রামের পৃষ্ঠ মন কেমন করে । বড় কৰ্ম্মচারীর তাহাদের মানুষের মধ্যেই গণ্য করে না । মালতী যথাসাধ্য তাহাকে সত্ত্বনা দেয়, কিন্তু নিজের মনেও তাহার সন্দেহ মাথা তুলিয় উঠে। সে ভুলই করিল নাকি ? সকালে উঠিয়, কাপড় কাচিয়া সবে সে রান্নাঘরে ঢুকিতেছে এমন সময় তাহার দেবর একখানা খবরের কাগঞ্জ হাতে করিয়া ছুটিয়া আসিল, বলিল, “বোঁদি, ভীষণ কাণ্ড হয়ে গেছে।” মালতীর হাত হইতে জলের ঘটিট ঠন্‌ করিয়ু পড়িং গেল। বিবর্ণ মুখে জিজ্ঞাসা করিল, “কি হয়েছে ? কাগজ কোথা পেলে ?” ছেলেটি বলিল, “নগ্ন খুন্ডোর কাগজ, তিনি দিলেন। —জৎসনে গাড়ীতে গাড়ীতে ভয়ানক কলিশন হয়েছে। লোক ঢের জখম হয়েছে, এক জন নাকি মারাও গেঙ্গে " মালী দরজা ধীর দt ৪{ষ্টয়া ঠকঠক করিয়া কঁাপিতে লাগিল। অঙ্কুটম্বরে বলিল, “কি হবে ঠাকুরপে ?” ঠাকুরপে প্রায় মালতীরই বয়সী, সে বলিল, “গোটা-১ার টাকা দাও, আমি সাড়ে আটটার গাড়ীতে চলে যাই । সন্ধে}ং মধ্যে হয় ফিরে আসব, না-হয় তার করব।" মালতী বলিল, “আমাকেও নিয়ে চল ।” দেবর বলিল, “সে হয় না, একলাই আমার যাওয়া ভাল ।" টাক লইয়া সে যেমন অবস্থায় ছিল বাহির হইয়া গেল। বুড়ী জ্যাঠামহ শয়কে আর ছোট দেবরকে কোন মতে দুইটা ভাতে ভাত সিদ্ধ করিয়া দিয়া মালতী সারাদিন অনাহারে বসিয়া রহিল। বার-বার ঠাকুরঘরে গিয়া মাথ খুড়িয়া প্রার্থন জানাইতে লাগিল স্বামীকে যেন অক্ষত দেঃে ফিরিয়া পায়, সে আর কোনদিন শহরে যাইতে চাহিবে না । সন্ধ্যার সময় কপালে ব্যাণ্ডেজ বাধিয়া ভাইয়ের সঙ্গে সুরেন্দ্র ফিরিয়া আসিল । তাহার বিশেষ আঘাত লাগে নাই, কিন্তু সাংঘাতিক আঘাতও অনেকের লাগিয়াছে । মালতী কাদিয় তাহাকে জড়াইয়ু ধরিল, বলিল, “আমন সৰ্ব্বনেশে কাজে আর তোমায় যেতে দেব না।” সুরেন্দ্র হাসিয়া বলিল, “ভয়ট কেটে গেলেই আবার মত বদলে যাবে ত ? তখন শহরের জন্যে সব স্বীকার করবে।” মালতী কঁদিতে কঁাদিতে বলিল, “ন, আমাদের পাড়গাই ভাল । তুমি কাজ ছেড়ে দাও।” সুরেন্দ্র বলিল, “কালও যদি এ-মত থাকে, তাহলে না-হয় ছাড়বার কথা ভাবা যাবে।"