পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8oԵ আমাকে কত যত্ন ক'রে মেঘদূত পড়িয়েছিলেন, কত ভাল ভাল কণ্টিনেন্টাল বই এনে দিয়েছেন, আমি তা একদিনের জন্যেও তুলি নি।” মহেন্দ্র হৈমন্তীর কাছে সরিয়া আসিয়া বলিল, “দেখ, আমি ভূমিকা ক'রে কথা বলতে জানি না, তুমি ত জানই আমি অসহিষ্ণু মানুষ। তা ছাড়া আমার বসে বসে দিন গোনবার সময়ও নেই। এই বছরই আমি জাৰ্ম্মানীতে পড়তে চলে যাব ঠিক হয়েছে। তার আগে আমি আমার অদৃষ্টট জেনে নিতে চাই। তুমি কি সে কাজে আমায় একটু সাহায্য করবে ?” হৈমন্তী চুপ করিয়াই রহিল। মহেন্দ্র বলিল, “মনে ক’রো না আমার মধ্যে আনন্দ দেবার কোন ক্ষমতাই নেই । এই তেতো খোলার আড়ালে মধুর রসও কিছু আছে। যে দয়া ক'রে কাছে আসবে তাকে সুখী করতে পারব বলে মনে মনে একটা অহঙ্কার আছে । তুমি আমাকে সে সুযোগ একবার দিয়ে দেখবে কি হৈমন্তী ?” পথের ধারের কৃষ্ণচুড়া গাছের সারির দিকে হৈমস্তী নিস্তব্ধ হইয়া তাকাইয়াছিল। দক্ষিণ সমীরণ লাল ফুলের তোড়া আর সবুজ পাতার রাশির ভিতর মাতামাতি লাগাইয়াছিল। তাহারও ভিতর ঘামিয় উঠিয়া হৈমন্তী বলিল, “মহেন্দ্র-দ, এককথায় জবাব আমি দিতে পারব না। আপনাকে আমি পরে বলব।” মহেন্দ্র বলিল, “অন্ধ, তোমরা অন্ধ। পরে বলবার কি আছে এতে ? আমাকে কি তুমি এত দিন ধরে দেখ নি ? আমার ভিতর কোন যোগ্যতা খুঁজে পাও নি ? আরও কি বাজিয়ে দেখতে চাও? বিশ্বাস কর আমার কাছে তুমি যা চাইবে আমি বিনাবাক্যে তা ক’রে যেতে পারব। আমাকে সন্দেহ করবার তোমার কোন কারণ নেই। যদি এত দিনে না বুঝে থাক, আজ একবার আমার দিকে তাকিয়ে দেখ, বুঝতে পারবে ।” হৈমন্তী বলিল, “মহেন্দ্র-দ, আপনি রাগ করবেন না। কিন্তু সব মামুযের সময় একসঙ্গে আসে না ; তাই ব’লে তার দ্বারা আর একজনের অযোগ্যতা প্রমাণ হয় না। আমরা অন্ধ বইকি অনেক দিকে। কিন্তু সে অন্ধতার মায় কাটিয়ে ওঠবার ক্ষমতাও যে আমাদের নেই।” প্রবাসী ১৩৪৪ মহেন্দ্র বলিল, “সময় যদি না এসে থাকে আমি আরও কিছুদিন অপেক্ষা করব। দুঃখ অনেক সয়েছি, না-হয় আর কিছুদিন সইব। আমার অধোগ্যতার প্রমাণ যদি না পেয়ে থাক, তবে যোগ্যতার প্রমাণ পাওয়া অসম্ভব নয় কেন ম.ে করছ না ? কেন তোমার অন্ধতাকেই দুই হাতে এমন ক’রে চেপে ধরে রাখতে চাঠছ । ওই সুন্দর চোখ দুটির ভিতর দৃষ্টির এতট। অভাবই কি আমাকে বিশ্বাস করতে হবে ?” হৈমষ্ঠী বলিল, “সব কথারই কি সব সময় জবাব দিতে হবে, মহেন্দ্র-দl ? আপনার যা শুনতে ভাল লাগবে, ত" ধখন বলতে পারছি না, তখন শুনতে খারাপ লাগবে এমন কথা • হয় fকছু নাই বললাম।” মহেন্দ্র কুকিয় পুড়িঃ ধূলিল, “আমি অদৃষ্ঠপে অং ভয় কfর • ংৈ মস্তী ! অfপ্রয় সত্যহ ধদি তোমার বলবান থাকে, তবে আমি তাত শুনতে চাই ।” হৈমন্তীর চোখে জল আসিয়া গেল । সে বলিল, “মঙ্গেত:দা, আপনি আমাদের অনেক দিনের বন্ধু । আমাদের বন্ধুসভার এত fদনের ব্যব: , তার ও আগে ধগন আপনার ছাত্রী fছলাম, তখন কোনও দিন fক অপ্রিয় কিছু বলতে আমায় উন্মুখ দেখেছেন ? আপনাকে আমর! ঠাট্ট বfর বটে, কিন্তু সে ধে শত্রুর ঠাট্টা নয় তা কি আপনি বোঝেন ন ? মাহুষের বন্ধুত্বের মূল্য সামান্ত নয়, কিন্তু সখ্য য তা সখ্য, তার চেয়ে বেশী সেক্ষেত্রে কিছু আশা করা যায় না। কেন যে কখন চলে না তা বলাও যায় না।" মহেন্দ্র বলিল, “তুমি যদি আমার সম্বন্ধে তোমার সখ্যকে স্বীকার কর, তবে সেই সথ্যের চেয়ে আর একটু উপরে ওঠ, তাকে আর একটু বড় করে দেখা কি তোমার পক্ষে একেবারে অসম্ভব ?” হৈমন্তী বলিল, “মহেন্দ্র-দ, আপনার হাতে ধরে বলছি, আপনি আমাকে আর তর্কে টানবেন না। মাকুষ তর্কশাস্ত্র স্বষ্টি করেছে বটে, কিন্তু সৰ্ব্বক্ষেত্রেই সে তাকে মেনে চলতে পারে না। ঐ দেখুন, আকাশে মেঘ ক’রে আসছে। প্রচণ্ড গরমের পর আজ বোধ হয় বৃষ্টি দেখা দেবে। আমাদের এখনই বাড়ী ফেরা উচিত, না হ’লে লোকে মনে করবে হয় আমরা ডাকাতের হাতে পড়েছি, নয় গাড়ী চাপ৷ পড়েছি।”