পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Sの প্রবাসী ১৩৪৪ করতে ওঁর বিশেষ ভরসা নেই, নিজের চেষ্টা নিজেই না-হয় তিনি দেখুন।” তপন আসিয়া সবে ঘরে দাড়াইয়াছে। মহেন্দ্র তাহার দিকে মুখ করিয়া বলিল, “আর তোমার মতলব কি হে তপন, অন্ন না নিরশ্ন ?” তপন বলিল, “মতলব ত মানুষের কতই থাকে। কিন্তু অন্ন কি আর বিধাতা সকলের অদৃষ্টে লেখেন ?” মহেন্দ্ৰ যেন মার খাইয়া পাণ্টা মার দিবার জন্য উগ্র হইয়া বলিল, “আমাদের মত অভাজনদের অদৃষ্টে না থাকতে পারে, কিন্তু তোমার মত ভাগ্যবান পুরুষের অদৃষ্ট নিশ্চয়ই কুপ্রসন্ন হবে। বিধাতার বিচারেও পক্ষপাত আছে ।” তপন বিম্মিত হইয়া মহেন্দ্রের মুখের দিকে তাকাইয় ভাবিতে লাগিল, সামান্য একটা ঠাট্টার কথায় মহেন্দ্রর এত চটিয়া উঠিবার কি কারণ হইল ? সে যেন কি একটা গায়ের জাল মিটাইবার জন্য একবার তপন ও একবার নিখিলকে ধরিয়া মাথা ঠুকিয় দিতে উদ্যত হইয়াছে। নিখিল তাহার কি করিয়াছে জানা নাই, কিন্তু তপন ত জ্ঞানত মহেন্দ্রর কোন অনিষ্ট করে নাই । তাহাদের কথা-কাটাকাটি প্রায়ই চলে বটে, কিন্তু একে ত তাহাতে তপনের দিকৃট হয় খুবই হাল্কা, তার উপর সে সব তর্কের শিকড় ত একটুও গভীর বলিয়া কোন দিন মনে হয় নাই । মহেন্দ্র যে অগ্নিশৰ্ম্ম হইয়। আসিয়াছে তাহা স্পষ্টই বোঝা যাইতেছে । তপন তাহাকে ঠাণ্ডা করিবার জন্য বলিল, “কি এমন হৃদয়বিদারক ব্যাপার এর মধ্যে ঘটে গেল যে নিজেকে একেবারে অভাজনের দলে চালিয়ে দিচ্ছ ?” মহেন্দ্র বলিল, “হৃদয় ট্যুদয় ওসব তোমাদের আছে, গরীব লোকের ওসব থাকে না ।” হৈমন্তী অকারণেই লাল হইয় সেখান হইতে উঠিয়া চলিয়া গেল। মুধা তাহা লক্ষ্য করিয়া একটু ব্যগ্র হইয়। উঠিল । মহেন্দ্রর কথাগুলি যে রুদ্ধ অভিমানে ফুলিয়া ফুলিয়া উঠিতেছে, তাহ বুঝিতে স্বধার দেরী হইল না। কেন সে এমন কথা বলিতেছে ? তাহার মনে কি কোন নিরাশার বেদনা বিঁধিয়া আছে ? অথবা হয়ত কোন আশাই তাহার মনে জাগিয়াছে যাহার পল্পবিত রূপ দেখিবার পূৰ্ব্বে মনের সংশয়কে সম্পূর্ণরূপে দূর করিতে সে পারিতেছে না। মহেন্দ্রর মত এমন প্রকৃতির মানুষেরও কি স্বধার মত অবস্থা ? স্থধারই মত কি সে মনে মনে আকাশকুসুম রচনা করিয়া কবিতার ছন্দে ও গানের সুরে আপনার জীবনকাব্যকে ঝঙ্কত করিয়৷ তুলিয়াছে ? হৈমন্তীর উপর বুঝি মহেন্দ্রর মন ঝুকিয়াছে ? সুধার মনে পড়িল আজ কতদিন ধরিয়াই হৈমন্তীকে সে কেমন যেন উন্মনা দেখিতেছে, কিন্তু মহেন্দ্রর কথা সুধার একবারও মনে হয় নাই। চিত্রকরের তুলির মুখ হইতে হৈমন্তী যেন বাহির হইয়া আসিয়াছে, তাহাকে মহেন্দ্রর মত মূৰ্ত্তিমান তর্কশাস্ত্রের পাশে কি রকম মানাইবে ? সুধার মন এতটুকু৪ সায় দিল না। মহেন্দ্র সম্বন্ধে তাহার এ অইমানটাকে মিথ্য মনে করিয়াই সে উঠার হাত এড়াই তে চেষ্টা করিল। অথবা মহেন্দ্রর নিজের দিকে সত্য হইলেও হৈমন্তীর দিকে ইত মিথ্য হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী । কিন্তু কে সে, আশ্বায়ু তাহার হৃদয়-শতদলে আসল পাতিয়! রাথিয়াছে, কাহার পিছনে দূরে দুরাস্তরে তাহার উত্তলা মন উড়িয় চলিয়া যায়, নিকটের সকল কিছু ভুলিয়া ? তাহাদের এই ক্ষুদ্র বন্ধু-সভার বাহিরেও ত তৈমস্তীর আলাগোনা আছে । এই ত সেদিন বিকালের চায়ে দেখ। গেল নবীন অধ্যাপক বিমলকাস্তি দত্তকে আর তরুণ চিকিৎসক খ্যাতনামা অমরপ্রিয় দেবকে হৈমন্তীর তাহীদের সঙ্গে খুবই আলাপ আছে বোঝা যায়, তাহারা মাঝে মাঝে আসেও এ-বাড়ীতে, হৈমন্ত্রীকেও ত অমরপ্রিয়ের মা ছুদিন নিমন্ত্রণ করিয়া লইয়া গিয়াছিলেন। ভারী সুন্দর শিষ্ট সংযত কথাবাৰ্ত্ত এই ভদ্রলোকটির। হৈমন্তীর মন এদিকে গিয়াছে কি ? কি জানি ? সুধার মনটা কি ভাবিয়া একবার কঁাপিয়া উঠিল। আবার সে-চিন্তা সে মন হইতে দূর করিয়া দিল জোর করিয়া। দুই হাতে যেন কি একটা ভয়াবহ জিনিষকে সে দুরে ঠেলিয়া দিতেছে এমনি ভাবে মনটাকে শক্ত করিয়৷ তুলিল। সেই চেষ্টায় তাহার দুই চক্ষু একবার যেন পলকের জন্ত বন্ধ হইয়া আসিল । আবার সে আপনার কাজে মন দিল । মিলি তাহার হাত হইতে কাগজগুলা কাড়িয়া লইয়া বলিল, “আজ বন্ধ কর ভাই, আর ত বেশী নেই। ওকটা কালকে করলেও চলবে, তোমরা আজ ভয়ানক খেটেছ । একটু গানেগল্পে খেলাধুলোয় সময়ট কাটালে হত না।” মহেন্দ্র বলিল, “আপনার যেমন fদবারাত্রি গান ভাল কাহার হৈমন্ত্ৰী