পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশষণচ ফুলদলের সৌরভের ভিতর দিয়া সেই মুখখানির ছায়া ভাসিয়া উঠিয় তাহাকে বলিতেছিল,—আমাকে তুমি ভুলিতে পরিবে ন, তোমার সকল খেলা সকল কাজে বাধা দিয়া আমি তোমাকে বসন্ত-সমারোহের স্বপ্নের মাঝখানে টানিয়া লইয়া যাইব । নারীর জীবনই প্রেমে, পুরুষের নয় ! মিথ্যা কথা ! তবে পৃথিবীর এত কাব্যে, এত চিত্রে, এত গানে পুরুষই কেন নারীকে প্রেমের পুষ্পাঞ্জলি দিয়া আসিয়াছে ? তোমার কণ্ঠের ঐ গানের প্রাণ কে ফুটাইয়৷ তুলিয়াছে সত্য করিয়া বল দেখি ! দু-দিনের উন্মাদন এই আকুলত কি আনিতে পারে ? কিন্তু ফুলের গন্ধে যে ছায়াময়ী তাহার সহিত কথা বলিয়া যায় তাহার কাছে আপনার মনের একটা কথাও তপন বলিতে পারে কই ? এ কি তাহার ভীরুতা ? ভীরুতাই বা কি করিয়া বলে ! এ তাহার যোগ্যতার অভাব । ক্ষেতে লাঙল চষে সে, সত্যন্ত ত সে কাব্যের নায়ক নয়, প্রেমের দায়িত্ববোধ তাহার আছে, তাহার অতুরাগের বাতি যথাস্থানে জালিয় রাখিবার অধিকার কি তাহার আছে ? সে বুঝিতে পারে না কি করিয়া আপনার অধিকার প্রমাণ করা যায়। এই প্রমাণ না দিয়া কাণ্ডালের মত কাছে গিয়া দাড়াইতে যে তাহার আত্মসম্মানে লাগে । এ যদি প্রাচীন উপন্যাসের যুগ হইত তবে বর্ষার তরঙ্গসস্কুল নদীর বুকে ঝাপাইয়া পড়িয়া প্রাণ তুচ্ছ করিয়া ওই পুষ্পকোমলার প্রাণ বাচাইতে সে অনায়াসে যাইতে পারিত ; যদি মহাভারতের যুগ হইত স্বভদ্রার মত রথে বসাইয়া না-হয় তাহাকে হরণ করিত, অথবা আপনার ভাগ্য পরীক্ষার আশায় স্বয়ংবর সভায় ধতুবিদ্যার পরীক্ষা দিত, ইউরোপের নাইটদের যুগ হইলে বন্দিনী রাজকুমারীকে উদ্ধার করিতে হয়ত সকল বিপদ বরণ করিত । কিন্তু এই আধুনিক কলিকাতায় তাহার যে কোন সুযোগই নাই । যে যোগ্যতা এখানকার মামুষের চোখে তাহার আছে, তাহ যে আর পাচ জনেরও নাই একথা ত তপন বলিতে পারে না । শুধু এইটুকু সে বলিতে পারে যে তাহার অন্তরের বাতায়নের মত ওই উজ্জ্বল চোখ দুটির দিকে চাহিলে তপন যে শুভ্র যুথিকাদলের মত হয়ের ছবিটি দেখিতে পায় ●ケーン R - অলখ-ৰোগরণ 8$Nలి আর কেহ তাহ দেখিতে পায় নাই। ওই শুভ্রতাকে বাহিরের আবরণের অন্তরালে খুজিয়া পাইবার ক্ষমতা সকলের নাই । তপন আপনার অস্তরের আলো দিয়াই তাহাকে চিনিয়া বাহির করিয়াছে। আপনার অমুরাগের অঞ্জলি স্তরে স্তরে ঢালিয়া মাটির পৃথিবীর চেয়ে অনেক উৰ্দ্ধে সে যে-বেদী রচনা করিয়া হৃদয়লক্ষ্মীকে বসাইয়াছে সে-বেদী রচনা করিবার ক্ষমতা সকলের নাই । আপনাদের বাজারজরের তৌল-দাড়িতে যাহার এই লক্ষ্মীপ্রতিমার মূল্য যাচাই করিবে তাঁহাদের কাছেও সে-প্রতিমা তুচ্ছ নয় তাহা তপন জানে, কিন্তু তপন যে-তুলাদণ্ডে তাহাকে ওজন করিয়াছে তাহা সত্যভামার তুলাদণ্ডের মত। এক দিকে তাহার অন্তরলক্ষ্মী, অন্ত দিকে পৃথিবীর সমস্ত সম্পদকে হার মানাহয়। ওই লক্ষ্মীরূপিণীর নামের অক্ষর কয়টি মাত্র। তাহার তুল্য শুধু সেই। রোদের ঝাজে সমস্ত গাড়ীবীরাও ভরিয়া গিয়াছে । আর বেলা করা যায় না । তপনকে কাজে যাইতেই হইবে । সকাল সকাল গ্রামের কাজ সারিয়া বিবাহ-উৎসবের আয়োজনে ইন্ধন যোগাইতে আবার যথাকালে চুটিয়া আসিতে হইবে । মিলির বিবাহ-সভাকে ঘিরিয়া তাহাদের সকলের মনের উৎসব-দেবতার যে মর্ত্যলোকে দেখা দিয়াছেন । মা ডাকিয়া পাঠাইয়াছেন, থাবার সাজানো হইয়াছে । তপন তাড়াতাড়ি নীচে চলিয়া গেল । সকালবেলা এক রাশ ডাল ভাত মাছ থাইতে সে ভালবাসিত না। লিড়ির সামনে শ্বেত পাথরের থালায় চার খান লুচি, কালজির। ও কাচা লস্ক ফোড়ন-দেওয়া বিনা মশলার একটা তরকারি, ছোট একটা বাটিতে ঘন ক্ষীর ও ছোট রেকাবিতে কাটা গোলাপী খরমুজা । খাওয়াদাওয়া সারিয়া মোট এক থানা ধোপ কাপড়ের উপর পাশে ফিত-বাধা সাদা মারাঠা জামা পরিয়া ও পুরু কাবুলী চটি পায়ে দিয়া তপন কাছে বাহির হইয়া চলিয়া গেল । গ্রামের ষ্টেশনে তাহার একটা সাইকূল থাকে, গাড়ী হইতে নামিয়া তাহাতে চড়িয়াই সে স্কুলে যায়। আবার ফিরিবার সময় ষ্টেশনে সেটি জমা রাখিয়া ট্রেন ধরে । গ্রামের পথে বৃষ্টি-বাদল হইলে কি খানাখন্দ পড়িলে