পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশষাঢ় •••কৃষ্ণ কৃষ্ণা ? ভারতবর্ষে যে এমন অপরূপ নামের তটপ্লাবী নদী আছে,—তাহ হয়ত জানিতামই না। রেব, সিপ্রা, কাবেরী, যমুনা,—এ সব নাম তো পরিচিত। কিন্তু কে জানিত এই অন্ধ প্রদেশে অৰ্জ্জুন-হিলকে বেষ্টন করিয়া কৃষ্ণ প্রবাহিত হইয়াছে ! ...অ্যানিকাটের উপরে জল, স্থির, মস্তণ,—ঠিক বিস্তৃত কাচের মত। উহাতে পরপারের ছোট ছোট পাহাড়গুলি পরিষ্কার প্রতিফলিত হইয়াছে। বাজায়ে ঝটকা দেখিলাম । ইহাই এখানকার মানুষের একমাত্র বাহন । আমরা ছয় জনে যে কি করিয়া তাহাতে আটিলাম তাহ আমার তত আশ্চৰ্য্য বোধ হইল না। কিন্তু মা যখন বলিলেন, “এই ঝটকাওয়ালা, তোয়ারেগা পো”—তখন ঐ গাড়ীর ক্ষুদ্র ও শীর্ণকায় অশ্ব চালকের ইঙ্গিতে যে বিদ্যুদ্বেগে ছুটিল তাহা বিস্ময়-জনক --- একটা কথা মনে হইতেছে । যে কবি লিখিয়াছেন “বেহারে বেঘোরে চড়িতু এক্ক।” তিনি নিশ্চয়ই দক্ষিণ ভারতে আসেন নাই । না, কখনই আসেন নাই ; আমি বাজি রাখিতে পারি । অন্ধ দেশের সহিত আমার এই পরিচয় ঘনিষ্ঠতায় পরিণত হইতে চলিল। অন্ধ দেশ আমার ভাল লাগিয়াছে । -- প্রথম যাহার সহিত আলাপ হইল, তাহার নাম শ্রযুক্ত রামশেষাইয়। এই ভদ্রলোক পরদিন সকালে আসিয়া আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন—আমি কলিকাতা হইতে প্রত্যাশিত মিষ্টার চ্যাটাজীর জ্যেষ্ঠ পুত্র কি না, এবং উত্তরের অপেক্ষ না করিয়াই আমাকে তাহার গৃহে ডিনারের নিমন্ত্ৰণ করিলেন । তার পরে তিনি তাহার সঙ্গী ভদ্রলোকটির সহিত পরিচয় করিয়া দিলেন । শ্রযুক্ত সোমনাথ ভেলেটোর—কবি । কবি মহাশয় বলিলেন, “নমস্কারম্।” আমি বলিলাম, “আনন্দিত হলাম । আমি আপনাদের ভাষা জানি না । উপভোগের সৌভাগ্য—” ন, তিনি ইংরেজী ভাষায় কবিতা লিখিয়া থাকেন । দুঃখিত হইবার কারণ নাই । মসলিপটমে আর একজন আছেন, মিষ্টার ভূষণম্—তিনি শুধু ইংরেজীতে কবিতাই লেখেন না ; ছোট গল্পও লিথিয়া থাকেন। রিয়্যালি ? ওয়াণ্ডারফুল ! যথাসময়ে ডিনারে উপস্থিত হইলাম। মিষ্টার রামশেষাইয়া গারু অতিশয় ভদ্রলোক । নিজে আসিয়া সঙ্গে করিয়া লইয়া গেলেন। দেখিলাম, তাহার গৃহে এই অখ্যাত বঙ্গ-সস্তানকে অভ্যর্থনা করিবার জন্ত যাহার! সমবেত হইয়াছেন তাহার কেহই সাধারণ লোক নহেন। কবি, দুঃখের বিষয় আপনার কাব্য - অন্ধ, দেশ 8° কবি মহাশয় বললেন, “নমস্কারম" ঔপন্যাসিক, একজন আর্টিষ্ট, ব্যায়ামাচাৰ্য্য, কংগ্রেসনেতা, মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিলার,—এই সকলেই উপস্থিত রহিয়াছেন । ডিনার চলিতে লাগিল। আয়োজন অপ্রচুর নহে। যথাসাধ্য খাইবার চেষ্টা করিতেছি ।-- একটা বড় আশ্চৰ্য্য বোধ হইতেছে । আমার ধারণা ছিল পূর্ববঙ্গে রান্নায়ু ঝালের ব্যবহার বেশী । কিন্তু লঙ্কার ঝালকে পাচ-ছয় গুণ তীব্র করিবার রাসায়নিক প্রক্রিয়া সম্ভবতঃ তাহাদের জামা নাই । w কবি বলিলেন, “আমরা অধিক ঝাল খাই না ; তামিলর-ও সে হরিবল—” বিনয় সহকারে বলিলাম, “বটেই ত ” এবং আমারও যে মোটেই ঝাল লাগিতেছে না,—ইহা প্রম,ণ করিবার জন্ত এক গ্রাস জলন্ত অঙ্গর মুখে পুরিয়া দিলাম । কিন্তু চোথের জল আটকাইয়া রাথিতে পারিলাম না । তাড়াতাড়ি মুছিয়া ফেলিয়াছিলাম ; কেহ দেখিতে পায় নাঙ্গ ! অতঃপর রস আনীত হইল। ইহা তেঁতুল, লঙ্কা এবং এক প্রকার গন্ধ-পাতার সংমিশ্রণে প্রস্তুত ।