পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশষণচ আগে একদল শানাই, আর পিছনে মেয়ের দল । বিচিত্র বর্ণের, বিভিন্ন বর্ণের শাড়ী কাচুলী ও গাত্রাবরণ পরিহিত মহিলার দল। র্তাহাদের কোমরে চওড়া সোনার বেণ্ট, গলায় মোটা হার, পা হরিদ্রারঞ্জিত। প্রায় দেড় শত মহিলা বরের তাঞ্জামের পিছনে ইটিয়া চলিয়াছেন । বরের সহিত হাটিয়া চলিয়াছেন। কেহ কেহ গান ধরিয়াছেন । দূরে নীল আকাশের গাত্র-সংলগ্ন নীলাভ পাহাড়, আর এই থানে লাল পথের উপর পাটল বর্ণের ধুলি উড়াইয়া বরধান্ত্রিণ সহ বর চলিয়াছে --- শীত আসিয়া পড়িয়াছে। কিন্তু ঠিক আমাদের বাংলা দেশের শরৎ কাল । হাওয়া চালাইয়াছে ; উত্তরেও নয়, ঠাণ্ডাও নয়, বেশ আরামদায়ক । বারান্দায় বসিয়া চাহিয়া থাকি । ছবির মত দক্ষিণ দেশু। ধীরে ধীরে আর একথানি ছবি চোখের উপর ভাসিয়া উঠে । এই শীতের অপরাতু তাহার উপর কুয়াসার আবরণ টানিয়া দিয়াছে। চোখে জল আসিতে চায় । কবি আসিলেন । বলিলেন, ঐযুক্ত রামশেষাইয়া আমাদের ‘অন্ধ-ভিলেজ দেখাইবার বন্দোবস্ত করিয়াছেন । কাল প্রত্যুষে মোটরে রওনা হইতে হইবে । সেখানে প্রথমে আমরা ছেলে ও মেয়েদের স্কুল পরিদর্শন করিব, এবং গ্রাম দেখিব । তার পরে অপরাহ্লে মিটিং । তাহাতে শ্ৰীযুক্ত রামশেষাইয়া সভাপতির আসন গ্রহণ করিবেন। মোটরে পৌছিতে প্রায় ঘণ্টা তিনেক লাগিল । দুই ধারে অড়হর আর 'বেঙ্গল-গ্র্যাম’-এর ক্ষেত । মাঝে মাঝে ধানের, কচিৎ আথের ক্ষেতও চোখে পড়িতেছে। আর তাহার ভিতর দিয়া গাড়ী চলিয়াছে। কাচা রাস্তা, কথনো বা পাকা রাস্ত, চষা মাঠ, ক্যানালের পাড়–এই সবের উপর দিয়া শট-কাট করিয়া গাড়ী চলিয়াছে। এই পুরাণে ঝড়ঝড়ে গাড়ীতে ঝাকুনির চোটে পরস্পর ধাক্কা খাহতে থাইতে চলিয়াছি । পেনামাকুর ছোট গ্রাম । দুই শত ঘরের বেশী লোক বাস করে না। খড়ের ঘরগুলার মধ্যে মধ্যে দুই-একটা টালিছাওয়া পাক ঘর এখানে ওখানে বিক্ষিপ্ত রহিয়াছে । এই ছোট গ্রামের মধ্যেই ইহারা দুইটা স্কুল করিয়াছে, এবং সকলে বসিয়া আলাপ আলোচনা করিবার জন্য জলাশয়ের ধারে একট। মুন্দর চাতাল বাধাইয়া রাখিয়াছে। ইহাদের আতিশয় উদ্যোগী বলিয়া মনে হইতেছে । মেয়েরা অভ্যর্থনাসঙ্গীত গাহিতেছে। ছেলেরা সসম্ভমে অভিবাদন করিতেছে। বর্ষীয়ানগণ আমাদের আহার এবং বিশ্রামের ব্যবস্থায় ব্যস্ত ভাবে ঘুরিতেছেন। সমগ্র গ্রামখানাকে একটা বৃহৎ পরিবার বলিয়া মনে হইতেছে। _ অন্ধ দেশ 8$s স্কুল পরিদর্শন হইয়া গেল।.ইহারা আমাদের মনে করিয়াছে কি ? ঘণ্টায় ঘণ্টায় খাওয়াইতে চাহে নাকি ? আসিয়া পৌছাইতেই ত একবার ‘কফি হইয়া গিয়াছে।... এখন এটা মধ্যাহ্নভোজনের আগে সামান্য একটু টিফিন ! শালপাতার ঠোঙায় করিয়া মসলা-দেওয়া ডালভাঞ্জ আর নানারকম খাবার দিয়াছে। তাহার ভিতরে অমৃতি আর র্বোদে দেখিতেছি । কিন্তু বেঁাদেতে লঙ্কার গুড় দিয়াছে।-- অসম্ভব ঝাল ! মেয়ের গান গাহিয়া সভার উদ্বোধন করিল। ইহারাষ্ট্র সকালে গান গাহিয়া আমাদের অভ্যর্থনা করিয়াছিল । বক্তৃতা সবই তেলেগু ভাষায় হইতেছে। দু-একটা কথা ছাড়া আর সবই দুৰ্ব্বোধ্য। উহার তালুক বোর্ডের প্রেসিডেন্টের কাছে গ্রামের উন্নতির জন্ত সাহায্য এবং পরামর্শ প্রার্থনা করিতেছে ---কিন্তু উপন্যাস কথাটা বার বার কানে আসিতেছে কেন ? একটি বালিকা দাড়াইয়া বক্তৃতা করিতেছে। বালিকা বিদ্যালয়েরই ছাত্রী। সুঠাম ভঙ্গীতে হাত প্রসারিত করিয়া বড় বড় টানা চোখ দর্শকদের প্রতি মেলিয়া, বলি তেছে। কি বলিতেছে কিছুই বুঝিতেছি না। কেবল ভাষাহীন সঙ্গীতের মত একটা ব্যাকুলতার আভাস পাইতেছি । - কে জানে এই বালিকা কি বলিতেছে --- সন্ধ্যার অনেক পরে রওনা হইলাম । গ্রামের লোকেরা অনেক দূর পর্যন্ত সঙ্গে সঙ্গে আসিয়া বিদায় দিল । যখন আমরা তাহদের ছাড়িয়া চলিলাম, তখন তাহারা এই সম্মানিত অতিথিবর্গের নামে জয়-ধ্বনি করিয়া উঠিল। পেনামাকুর পিছনে রাখিয়া আমরা অগ্রসর হইলাম । চমৎকার রাত্রি! একটা উচু পাড়ের উপর দিয়া মোটর চলিয়াছে । পাশেই ক্যানাল। পরিষ্কার জ্যোৎস্নায় ক্যানালের জলে গাছের উণ্ট ছায়াগুলা স্বন্দর দেখাইতেছে । কুয়াসা একেবারে নাই। একটু শীত লাগিতেছে । ঐযুক্ত রামশেষাইয়া কহিলেন, “জানেন মিষ্টার চ্যাটাঞ্জী, আগে আমাদের দেশে চাষের অত্যন্ত অসুবিধা ছিল। এই ক্যানালগুলি কাটানর ফলে কৃষ্ণ-ডিষ্ট্রিক্ট এখন ধনধান্যে পূর্ণ।” কবি কহিলেন, “আজকার আনন্দের স্মৃতি ভূলবান নয় ।” —নিশ্চয়ই ! এ-বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই । রামশেষাইয়া কহিলেন, “এ-গ্রামটার বিশেষত্ব হচ্ছে— এখানে দলাদলি নেই। আর এখানকার লোকের সব দিকেই খুব অগ্রসর। দুঃখের বিষয় সব গ্রামই এই রকম ময়ু *