পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বানান-বিধি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিছুদিন পূর্বে ইংরেজি বানান সংস্কার সম্বন্ধে গিলবট মারের একটি পত্র কাগজে প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি বলেছেন, তংরেজি ভাষার যেমন ক্রমশপরিবতন হয়েছে, তেমনি মাঝে মাঝে তার বানান সংস্কার ঘটেছে। সচল ভাষাৰ আচল বানান অস্বাভাবিক। আধুনিক ইংরেজিতে আর একবার বানান শোধনের প্রয়োজন হয়েছে এই তার মত। এই উদেখা নিয়ে তারা একটি সভা ও স্থাপন করেন । ঠিক যে সময়ে বাংলা ভাষায় এই রকম চেষ্টার প্রবতন হয়েছে, সেই সময়ে গিলবট মারের এই চিঠিখানি পড়ে আমাকে ভাবিয়ে দিয়েছে । বস্তুত ভাবনা অনেক দিন থেকেই আমাকে পেয়ে বসেছিল, এই চিঠিতে আরো যেন একটু ধাক্কা দিল। সুদীর্ঘকালের সাহিত্যিক ব্যবহারে ইংরেজি ভাষা পাক৷ হয়ে উঠেছে। এই ভাষায় বহুলক্ষ বই ছাপার অক্ষরে আত্মপ্রকাশ করেছে, তা ছাড়া ইস্কুলে য়ুনিভসিটিতে বক্তৃভামঞ্চে এই ভাষা ও সাহিত্য সম্বন্ধে আলোচনার অস্তু নেই। উচ্চারণের অবস্থা যাই হোক সর্ব এই এর বানানের সাম্য সুপ্রতিষ্ঠিত। যে ভাষার লিখিত মূতি দেশে কালে এমন পরিব্যাপ্ত তাকে অল্পমাত্র নাড়া দেওয়াও সহজ নয়, ghost শব্দের gost বানানের প্রস্তাবে মান সমুদ্রের নানা তাঁর বাদে প্রতিবাদে কী রকম ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠতে পারে সে কথা কল্পনা করলে দুঃসাহসিকের মন স্তম্ভিত হয়। কিন্তু ওদেশে বাধা যেমন দুরব্যাপী, সাহসও তেমনি প্রবল। বস্তুত আমেরিকায় ইংরেজি ভাষার বানানে যে পরিবতন ঘটানো হয়েছে তাতে কম স্পধর্ণ প্রকাশ পায় নি। মার্কিন দেশীয় বানানে through শব্দ থেকে তিনটে বেকার অক্ষর বর্জন ক'রে বর্ণবিন্যাসে যে পাগলামির উপশম করা হোলে আমাদের রাজত্বে সেটা গ্রহণ করবার যদি বাধা না থাকত তাহলে সেই সঙ্গে বাঙালির ছেলের অজীর্ণ রোগের সেই পরিমাণ উপশম হতে পারত। কিন্তু ইংরেজ আচারনিষ্ঠ, বাঙালির কথা বলাই বাহুল্য। নইলে মাপ ও ওজন সম্বন্ধে যে দশমিক মাত্র যুরোপের অন্যত্র স্বীকৃত হওয়াতে ভূfর পরিমাণ পরিশ্রম ও হিসাবের জটিলত কমে fগয়েছে ইংলণ্ডেই তা গ্ৰাহ হয় নি, কেবলমাত্র সেখানেই তাপ পরিমাপে সেন্টিগ্রেডের স্থলে ফারেনহাইট অচল হয়ে আছে । কাজ সহজ করবার অভিপ্রায়ে আচারের পরিবত্তন ঘটাতে গেলে অভ্যাসে আসক্ত মনের আরামে যেটুকু হস্তক্ষেপ করা হয় সেটুকু ওরা সহ করতে পারে না । এই সম্বন্ধে রাজায় প্রজাফু মনোভাবের সামঞ্জস্য দেখ? যায় । যা হোক তবুও ওদেশে অযথার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী বুদ্ধির উৎসাহ দেখতে পাওয়া যায়। গিলবট মারের মতো মমম্বীর প্রচেষ্টা তারি লক্ষণ । সংস্কৃত বাংলা অর্থাৎ থাকে আমরা সাধুভাষ বলে থাকি তার মধ্যে তৎসম শব্দের চলন খুবই বেশি। তা ছাড়া সেই সব শব্দের সঙ্গে ভঙ্গীর মিল ক'রে অল্প কিছুকাল মাত্র পূর্বে গড়-উইলিয়মের গোরাদের উৎসাহে পণ্ডিতেরা যে কৃত্রিম গদ্য বানিয়ে তুলেছেন তাতে বাংলার ক্রিয়াপদগুলিকে আড়ষ্ট করে দিয়ে তাকে যেন একটা ক্লাসিকাল মুখোস পরিয়ে সাস্তুনা পেয়েছেন ; বলতে পেরেছেন, এটা সংস্কৃত নয় বটে, কিন্তু তেমনি প্রাকৃতও নয়। যা হোক ঐ ভাষা নিতান্ত অল্পবয়স্ক হলেও হঠাৎ সাধু উপাধি নিয়ে প্রবণের গদিতে অচল হয়ে বসেছেন। অন্ধভক্তির দেশে উপাধির মূল্য আছে। সৌভাগ্যক্রমে কিছুকাল থেকে প্রাকৃত বাংলা আচারনিষ্ঠদের পাহারা পার হয়ে গিয়ে সাহিত্যের সভায় নিজের স্বাভাবিক আসন নিতে পেরেছে। সেই আসনের পরিসর প্রতিদিন বাড়ছে, অবশেষে—থাক্, যা অনিবার্য তা তো