পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ミ8 প্রবণসী SN88 বিশেষ্য শব্দের সঙ্গে জোড়া না লাগিয়ে ব্যবহার করতে হলেই আমরা সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে টি বা টা যোগ করি, এর অন্যথা হয় না। কখনো কখনো ই স্বর যোগ করতে হয়, যেমন একই লোক, দুইই বোকা । কখনো কথনো সংখ্যাবাচক শব্দে বাক্যের শেষে স্বাতন্ত্র্য দেওয়! হয়, যেমন হরি ও হর এক । এখানে “এক” বিশেষ্যপদ, তার অর্থ, এক-সত্তা, এক হরিহর নয় । আরো দুটো সংখ্যাসূচক শব্দ আছে যেমন, আধ এবং দেড় । কিন্তু এরাও সমাসের সঙ্গী, যেমন আধখানা, দেড়খানা। ও দুটো শব্দ যখন স্বাতন্ত্র্য পায় তখন ওরা হয় আধা, দেড় । আর একটা সমাসসংশ্লিষ্ট শব্যের দৃষ্টান্ত দেখাই, যেমন জোড়, সমাসে ব্যবহার করি জোড়হাত ; সমাসবন্ধন ছুটিয়ে দিলে ওটা হয় জোড়া হাত । “হেঁট” বিশেষণ শব্দটির ব্যবহার খুব সঙ্কীর্ণ। এক হোলো ইেটমুণ্ড, সেখানে ওটা সমাসের অঙ্গ । তা ছাড়া, হেঁট হওয়া ইেট করা । কিন্তু সাধারণ বিশেষণরূপে ওকে আমরা ব্যবহার করি নে, যেমন আমরা বলি নে, হেঁট মানুষ । বস্তুত হেঁট হওয়া, হেঁট করা জোড়া ক্রিয়াপদ, জুড়ে লেখাই উচিত। "মাঝ” শব্দটাও এই জাতের, বলি মাঝখানে, মাঝদরিয়া, এ হোলে! সমাস, আর বলি মাঝ থেকে, সেট হোলে প্রত্যয়যুক্ত, ওকে ছাড়িয়ে নিয়ে কাজে লাগাতে পারি নে ; বলা যায় না, মাঝ গোরু বা মাঝ ঘর । আর একটা ফাসি শব্দ মনে পড়ছে “সাফ” । অধিকাংশ স্থলে বিশেষণ মাত্রই সমাসের অন্তর্গত, যেমন সাফ কাপড়, কিন্তু ওটা যে স্বাতন্ত্র্যবান বিশেষণ শব্দ তার প্রমাণ হয়, যখন বলা যায় কাপড়টা সাফ । কিন্তু বলা যায় না “কথা এক,” বলতে হয়, " কথা একটা”, কিম্বা, “কথা একচ”। বলি, “মোট কথা এই,” কিন্তু বলি নে “এই কথাটাই মোট ।” যাই হোক, দুই অক্ষরের হসন্ত বাংলা বিশেষণ হয়তো ভেবে ভেবে আরে! মনে আনা যেতে পারে, কিন্তু যথেষ্ট ভাবতে হয়। অপর পক্ষে বেশী খুজতে হয় না যথা, বড়ো, ছোটো, মেঝে, সেজে, ভালো, কালো, ধলে, রাঙ, সাদা, ফিকে, খাটে, রোগ, মোটা, বেঁটে, কুঁজে, তাড়া, বাক, সিধে, কানা, খোড়া, বেঁচি, কুলে, স্যাক, হাদ, খাদা, টেরা, কটা, গ্যাট, গোট, ভোদ, স্কাড়, ক্ষ্যাপ, মিঠে, ডাস, কষ, খাসী, তোফ, র্কাচ, পাক, সোদ, বোদ, খাটি, মেকি, কড়া, মিঠে, চোথ, রোখা, অঁাটা, ফাট, পোড়া, ভিজে, হাজা, শুকে, গুড়ে, বুড়ে, ছোড়া, গোড়া, ওঁচা, খেলো, ছাদ, বুটে, ভীতু, আগা, গোড়, উচু, নিচু ইত্যাদি। মত শব্দটা বিশেষ্য, ঐটে থেকে বিশেষণ জন্ম নিতেই সে হোলো মতো । কেন আমি বাংলা দুই অক্ষরের বিশেষণ পদ থেকে তার অস্তস্বর লোপ করতে পারব না তার কৈফিয়ৎ আমার এই খানেই রইল । বাংলা শব্দে কতকগুলি মুদ্রাভঙ্গী আছে । ভঙ্গীসঙ্কেত যেমন অঙ্গের সঙ্গে অবিচ্ছেদে যুক্ত এগুলিও তেমনি যে মাচুর্য রেগেছে তার হাত থেকে ছুরিট নেওয় চলে, কিন্তু ভ্রর থেকে ভ্ৰকুটি নেওয়া ধায় না। যেমনি, তখনি, আমারে, কারে, কোণে, কখনো শব্দে ইকার এবং ওকার কেবলমাত্র ঝোক দেবার জন্যে, ওরা শব্দের অল্পবতী ন; হয়ে, যথাসম্ভব তার অঙ্গীভূত থাকাই ভালো । যথাসম্ভব বলতে হোলে৷ এই জন্যে যে স্বরান্ত শব্দে সঙ্কেত স্বরগুলি অগত্য সঙ্গে থাকে, মিলে থাকে না, যেমন তোমরাৎ, আমরাই । কিন্তু যেখানে উচ্চারণের মধ্যে মিলনের বাধা নেই, সেখানে আমি ওদের মিলিয়ে রাখব। কেন আমি বিশেষ ভাবে মিলনের পক্ষপাতী একট। ছড়া দিয়ে বুঝিয়ে দেব । “যেমনি যথনি দেখ দিই তার ঘরে অমনি তখনি মিথ্যা কলহ করে । কোনো কোনো দিন কহে সে নোলক নাড়ি’ কারো কারে সাথে জন্মের মতো আড়ি ॥” যদি বানান করি যেমনই, যখনই, অমনই, তখনই, কোনও, কারও, দৃষ্টিকটুত্বের নালিশ হয়তো গ্রাহ না হতে পারে। কিন্তু “যখনই” বানানের স্বাভাবিক যে উচ্চারণ, ছন্দের অনুরোধে সেটা রক্ষা করতে চায় এমন কবি হয়তো জন্মাতেও পারে, কেন না কাল নিরবধি এবং বিপুল চ পৃথ্বী। যথা:– “যখনই দেখা হয় তখনই হাসে, হয়তে সে হাসি তার খুসি পরকাশে। কখনও ভাবি, ওগো শ্রীমতী নবীন, কোনও কারণে এটা বিদ্রুপ কিনা।"