পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিষিদ্ধ দেশে সওয়া বৎসর রাহুল সাংকৃত্যায়ন Y 8 এদেশে অতিলি ধকারের প্রথম পৰ্য্যায়ে শুষ্ক মাংস, চা বা ক্টাচা মদ ( ছং ) দেওয়া হয়। চা এখানে ঘরে ঘরে সাৰ্বদাই প্রস্তুত থাকে এবং গৃহস্থ, ভিক্ষু, দোকানদার, সেনানায়ক সকলেরই ইহা সৰ্ব্বক্ষণ প্রয়োজন। যব পচাইয়া মদ তৈয়ারী করা হয় এবং যদিও এক-আধ হাজার ভিন্ন অন্য সকল তিব্বতীয় বৌদ্ধ তথাপি পীতটুপী-পরিহিত গেলুব্ধ-পা সম্প্রদায় ভিন্ন সকলেই অবাধে মদ্য পান করে । মদ্য বিনা ইহাদের পূজা হয় না, এমন কি গেলুক-পা ভিক্ষুরাও পূজার সময় দেবতার প্রসাদ হিসাবে সামান্য পরিমাণে মদ পান করিয়া দেবতার ক্রোধ নিবারণ করে । এদেশে উপোসথ পঞ্চশীল অষ্টশীল হত্যাদি ব্রত বা নিয়মের কোন জ্ঞানই নাই, অতি-শিশুও প্রতিদিন মদ্য পান করে ; বস্তুত: জগতে এরূপ মদ্যপায়ী জাতি আর আছে কিনা সন্দেহ । এদেশের উলের কাপড় মোট, মজবুত ও সুন্দর। এখনও কাপড় বুনার প্রথা পুরাকালের মতই আছে, সুতরাং অল্প প্রসারের কাপড়ই তৈয়ারী হয়, বড় বহরের তাত খাটান হয় না। মোজা, দস্তান, গেঞ্জি প্রভৃতি এখানে বিশেষ হয় না, কেবলমাত্র লাসায় নেপালী সওদাগরদিগের প্রভাবে আজকাল ঐ সব জিনিষ অল্পস্বল্প তৈয়ারী হইতেছে এবং তাহাও নিকৃষ্ট ধরণের। এদেশের উল স্বভাবতই নরম ও চিকুণ এবং সেই জন্য প্রতি বৎসর বহু লক্ষ টাকার পশম ভারতে রপ্তানী হওয়ায় কাপড়ের দর কিছু চড়িয়াছে, তবে এই চড়া দরও বিদেশের তুলনায় সস্তা। শিক্ষা বা অন্য অনেক প্লিষয়ে পশ্চাৎপদ হইলেও ললিতকলায় তিব্বতবাসীর দক্ষতা ও অতুরাগ প্রশংসনীয়। লাসার নিকটস্থ অঞ্চলে বিস্তর আখরোট বৃক্ষ জন্মায়, তাহার কাষ্ঠ অতিশয় দৃঢ় এবং মস্কণ। ধনীর গৃহে ও মঠে-বিহারে আখরোট-কাঠের উপর হুঙ্ক ও স্বন্দর কারুকার্য ইহাদের ● >ー>Q কলানৈপুণ্যের পরিচয় প্রদান করে। ত্রিপিটক ও অটুকথার ন্যায় বৃহৎ পুস্তকগুলিও ঐ আখরোটের পাটায় খোদাই করিয়া ছাপা হয় । এদেশের চিত্রকলার সহিত আমাদের অর্জন্ট ও সিগিরিয়ার শুদ্ধ আধ্য চিত্রকলার অবিচ্ছিন্ন সম্বন্ধ আছে। তিববতীয়েরা বর্ণসমাবেশে বিশেষ কুশলী, তবে এখন বিদেশী রং প্রচলিত হওয়ায় চিত্রাবলী পূৰ্ব্বের ন্যায় স্থায়ী হইবে কিনা সন্দেহ। এই চিত্রণ-প্রথাও বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে নালন্দা ও বিক্রমশীল হইতে এদেশে আসিয়াছিল। নিয়ম ও রীতির বন্ধনে বাধা বলিয়া তিব্বতীয় শিল্পে আর সেরূপ স্বাচ্ছন্য নাই এবং ভোটীয়-চিত্রকর-অঙ্কিত প্রাকৃতিক দৃশ্বের প্রতিচ্ছবি গতানুগতিকতায় কল্পিত প্রতিমাযুক্ত চিত্ৰ-মাত্ৰে পৰ্য্যবসিত হয় ইহা সভ্য, তবুও বর্তমান ভারত বা সিংহলের তুলনায় সে শিল্পের স্থান যে এখনও অনেক উচ্চে তাহাতে সন্দেহ নাই। এদেশের চারুশিল্পের বৈশিষ্ট তাহার সাৰ্ব্বজনীনতায়। ধাতু বা মৃন্ময় মূৰ্ত্তি প্রায় সবই অতি স্বন্দর। এই বিষয়ের শিক্ষার্থী এখনও প্রাচীন কালের স্থায় বহু বৎসর শিল্পাচার্ষ্যের সেবাশুশ্রুষা করিয়া শিষ্যত্বে ব্ৰতী থাকে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশের শিল্প ও কলার পুনর্জাগরণে ইহাদের বিশেষ সহায়তা পাওয়া যাইতে পারে যদিও এদেশের শিল্পের ধারা এখন পূৰ্ব্বকালের ন্যায় স্বচ্ছন্দ ও উন্মুক্ত নহে। সত্য বটে, গৃহ, গৃহস্থ ও বস্ত্র— সকলেরই উপর একটা পুরু ময়লার আবরণ, তৎসত্ত্বেও তিব্বতীয় গৃহসজ্জার রুচি নিকৃষ্ট বলা যায় না। ঘরের ছা.ে ও জানালায় ফুলের টবের সারি, ঘরের ভিতরে রঙীন কালর, আভ্যন্তরীণ গৃহগাত্রে রঙীন রেখাঙ্কন, জানালায় জালিদার কাগজ বা কাপড়ের পাল্প, চায়ের চৌকীর উপর নানা বর্ণের আলপনা-এ সকলই ইহাদের কলা-প্রেমের পরিচয় দেয়। খাদ্যের পর্য্যায়ে মাংস-মাখন এবং বস্ত্রের জন্ত উল-পশম s