পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশষণচ বিবিধ প্রসঙ্গ—“হিন্দু" ও "পৌত্তলিক" ভাষা 8位公 ও যায় না ? যে-ধে কলেজে মুসলমান ছাত্রেরা খুব অল্প খরচে শিক্ষা পাইতে পারে, সেখানেও মুসলমান ছাত্র যথেষ্ট কেন হয় না ? এসব প্রশ্নের উত্তর হাণ্টারের উক্তিতে পাওয়া যায় मीं । হিন্দুমুসলমানের মধ্যে বিদ্বেষ জন্মাইবার ও বাড়াইবার চেষ্টার উদ্ধে যে-সকল মহৎ লোক ছিলেন ও আছেন, হাণ্টার তাহাদের মধ্যে নিশ্চয় অন্যতম, এরূপ মনে করিবার যথেষ্ট কারণ নাই । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর “বোধোদয়” নামক বিদ্যালয়পাঠ্য পুস্তকে লিখিয়াছিলেন, “ঈশ্বর নিরাকার চৈতন্যস্বরূপ", “পুত্তলিকার চক্ষু আছে দেখিতে পায় না, কর্ণ আছে শুনিতে পায় না” ইত্যাদি । এহেন “অপৌত্তলিক” বহি মুসলমান ছাত্রেরা দলে দলে কেন আ গ্রহ সহকারে পড়ে নাই ? অক্ষয়কুমার দত্তের চারুপাঠ তিন ভাগ ও অন্যান্য বহির কোথাও পৌত্তলিকতা নাই । আরও অনেক বিদ্যালয়পাঠ্য বাংলা বহির কোথাও পৌত্তলিকতা নাই । পৌত্তলিকতার প্রচারক বা সমর্থক কোন বিদ্যালয়পাঠ্য পুস্তকের কথাই আমাদের মনে পড়িতেছে না। লক্ষ লক্ষ হিন্দু বালক-বালিকা এই সকল অপৌত্তলিক বহি পড়িয়া বিদ্যালাভ করিয়াছে। অধিকতর আগ্রহসহকারে অধিকতরসংখ্যক মুসলমান ছাত্র ঐ সকল বহি পড়িয়াছেন কি ? সমুদয় বাংলা সাহিত্যকে ও বাংলা ভাষাকে পৌত্তলিক বলিতে পারে তাহারাই যাহারা উহার সহিত পরিচিত নহে, বা যাহারা ধৰ্ম্মান্ধ। বাংলা অনেক গ্রন্থে দেবদেবীর কথা ও উল্লেখ আছে, সত্য। কিন্তু এরূপ বহিও ত অনেক আছে যাহাতে দেবদেবীর কথা নাই । যে-সব অহিন্দু ইউরোপীয় ইংরেজী ও অন্যান্য সাহিত্যে গ্রীক, রোমান, টিউটনিক ও স্কাণ্ডিনেভীয় দেবদেবীর গল্প ও উল্লেখ পড়িতে কোন দ্বিধা বা সঙ্কোচ বোধ করে না, তাহারা হিন্দু দেবদেবীর কথা না-পড়িতে পারে— তাহাদের সহিত তর্ক করা বৃথা । কিন্তু যে-সব বাংলা বহিতে দেবদেবীর কথা নাই, তাহা পড়িতে আপত্তি কি ? আমরা অবখ্য দেবদেবীর গল্প বা উল্লেখ সম্বলিত কোন দেশের বা কোন ভাষার বহিই শুধু সেই কারণেই পাঠের অধোগ্য ত মনে করিই না, প্রত্যুত এরূপ নানা গ্রন্থে কাব্যরস ব্যতীত বহু উপদেশও পাওয়া যায় ও যাইতে পারে মনে করি । বিশেষ বিশেষ দেবতার উপাসকের বা উপাসকদের উপদেষ্টার অনেক স্থলে পরমাত্মারই কোন-না-কোন স্বরূপকে বিশেষ বিশেষ দেবতার রূপ দিয়াছেন। তাহা তাহাদের বুদ্ধি ও কল্পনার সীমাবদ্ধতা বশত হইয়াছে । তাহা বাঞ্ছনীয় নহে। অখণ্ড সত্তারূপে পরমাত্মার উপাসনাই শ্রেষ্ঠ ও কর্তব্য। কিন্তু একেশ্বরবাদীরাও ত সকলে সেরূপ উপাসনা করেন না বা করিতে পারেন না। আমরা ইহা বস্তুদেববাদের সমর্থন বা ব্যাখ্যা বা কৈফিয়ৎ রূপে বলিতেছি না। মুখে-একেশ্বরবাদীদের গব্বিত ও দাম্ভিক না হইয়া কি হেতু বিনয়ী, দীনাত্মা হওয়া উচিত, তাহারত আভাস দিতেছি । আমরা উপরে উদুকে "অপৌত্তলিক” ভাষা বলিয়াছি। কিন্তু হিন্দুরা বাংলা ভাষা ব্যবহার করে বলিয়া তাহ যদি “হিন্দু ভাষা ও “পৌত্তলিক” ভাষা হয়, তাহ হইলে উদ্বুও হিন্দুরা ব্যবহার করে বলিয়া তাহাও “হিন্দু ভাষা ও “পৌত্তলিক” ভাষা। আগ্ৰা-অযোধ্যা প্রদেশেই উদ্ধর ব্যবহার বেশী । সেখানকার অধিবাসীদের মধ্যে শতকরা ১৪ জন মাত্র মুসলমান, বাকী প্রধানতঃ হিন্দু। বেশীসংখ্যক শিক্ষিত হিন্দু-বিশেষতঃ কায়স্থের-উছু ব্যবহার করে। অনেক বিখ্যাত উছ-লেখক—যেমন পণ্ডিত রতননাথ—হিন্দু। হিন্দু মহাসভার অন্যতম নেতা ভাই পরমানন্দ একখানি বিখ্যাত উজু সংবাদপত্রের সম্পাদক । বস্তুতঃ হিন্দুরা ব্যবহার করিলেই যদি কোন ভারতীয় ভাষা "হিন্দু” ও “পৌত্তলিক” হইয়া যায়, তাহা হইলে ভারতবর্ষের সব ভাষাই “হিন্দু" ও "পৌত্তলিক,” এবং সেগুলি যদি সেই কারণে মুসলমান ভারতীয়দের অব্যবহার্য্য হয়, তাহা হইলে তাহদের কোনও ভারতীয় ভাষায় কথা বলা ও লেখা বন্ধ করিতে হয়, এবং আরবী ব্যবহার করিতে হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় “পৌত্তলিক” অনেক হিন্দু অতীত কালে তাহা শিখিয়া ও লিখিয় তাহাকে কিঞ্চিৎ “অশুচি” করিয়াছে, এবং এখনও সেরূপ হিন্দু আছে। যে মুসলমান ধৰ্ম্ম মুসলমানরা জীবনে মানিয়া চলে, যে খ্ৰীষ্টিয়ান ধৰ্ম্ম খ্ৰীষ্টিয়ানের জীবনে মানিয় চলে, তাহার মধ্যে পৌত্তলিকতা আছে কিন, তাহার আলোচনা আমরা করিব না। “প্রবাসী ধৰ্ম্মমত বিচারের কাগজ নহে, এবং