পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশষণাত হইতে যে রাস্তা দিয়া টাঙ্গাইল আসিয়াছিলাম, টাঙ্গাইল হইতে সে রাস্ত দিয়া চারাবাড়ী ষ্টীমার ষ্টেশনে যাওয়া যাইবে না, অল্প পথ ধরিতে হইবে । তাঁহাই করা হইল। টাঙ্গাইল হইতে ঘোড়ার গাড়ীতে একটা নদী পর্য্যস্ত আসিলাম । মধ্যে একদিন ঝড়বৃষ্টি হওয়ায় নদী জলপূর্ণ। খেয়ানৌকায় পার হইলাম। ওপারে সেই মোটর বাস । তাহ অন্য রাস্ত দিয়া সন্তোষ নামক গ্রামের পাশ দিয়া আমাদিগকে লইয় চলিল। অদূরে বয়কটা প্রাসাদ দেখিতে দেখিতে চলিলাম । কোন ঐ নাই, জনাকীর্ণতা নাই । দেখিয়া দুঃগ হইল । জমিদাররা বোধ হয় কলিকাতায় থাকেন । চারাবাড়ী ষ্টীমার ঘাট হইতে প্রায় মাইল থানেক দূবে পৌছিয়া মোটর বাস থামিল। আর রাস্ত নাই। আমরা ইটিয়া ঘাটে পৌছিলাম। মাল সব ভারবাহী ঘোড়ার পিঠে আসিল । এখানকার এই রীতি । আমি কোন অসুবিধা বোধ করি নাই । কিন্তু বড় সময় নষ্ট হয়, খরচও বাড়ে । ছেলেপিলে পরিবারবর্গ লইয়া যাহারা যাওয়া-আসা করেন, তাহারা নিশ্চয়ই খুব অস্ববিধ ভোগ করেন । ঘত গুলি জায়গায় যাহাঁদের আশ্রয়ে ছিলাম, তাহাদের আতিথেয়তার কেবল এই থুতটি ধরা যায়, যৈ, তাহারা অতিথিদিগকে যেমন বাক্যবিশারদ সেইরূপ ভোজননিপুণও মনে করেন। টাঙ্গাইলে সকল সম্প্রদায়ের যে-সকল লোকের সহিত আলাপ পরিচয় হইল তাহদের সৌজন্য মাতৃযকে তৃপ্তি দেয়, রুভজ্ঞ করে। এসব দিক্ দিয়া দুঃখ করিবার কিছুই নাই। কিন্তু পথঘাট এমন কেন ? এ অঞ্চলে হিন্দু ও মুসলমান ধনী জমিদার ও ব্যবসাদার আছেন। খুব বিশ্বস্তস্থত্রে অবগত হইলাম ডিষ্টিক্ট বোর্ডেরও আয় বেশ আছে। রাস্তাঘাট সম্বন্ধে বাংলা-গবন্মেণ্ট ও বঙ্গের ডিষ্ট্রিক্ট বোর্ডগুলি নিজেদের কৰ্ত্তব্য যথাসাধ্য করেন নাই । একটা অবাস্তর কথা বলি। শুনিলাম, ডিষ্ট্রিক্ট বোর্ডের নূতন ব্যবস্থায় বালিক-বিদ্যালয়গুলি উঠিয়া যাইবার উপক্রম হইয়াছে। ইহা সত্য হইলে ডিষ্ট্রিক্ট বোর্ডের সভ্যদের কি পুরস্কার হওয়া উচিত, ঠিক্‌ করিতে পারিতেছি না। বিবিধ প্রসঙ্গ—জমীর খাজনার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত 8¢ግ জমীর খাজনার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত খবরের কাগজে দেখিলাম, বঙ্গে জমীর খাজনা ও প্রজাদের অধিকার সম্বন্ধে নানা রকম পরিবর্তনের পরিকল্পন চলিতেছে । বঙ্গে ও আরও দু-একটি প্রদেশে খাজনার যে স্থায়ী বন্দোবস্ত আছে, প্রাদেশিক গবর্ণর তাহার কোন পরিবর্তনসাধক কোন আইনে সম্মতি দিতে পারেন না, তাহাকে গবর্ণর-জেনার্যালের নিকট উহ! পাঠাইতে হুইবে । আবার গবর্ণর-জেনার্যাল ও সম্মতি দিতে পারেন না। তাহাকে উল্লা পাঠাইতে হইবে । ইংলণ্ডেশ্বরের সম্মতি প্রাপি ভারতসচিবের ও ব্রিটিশ মস্ত্রীমণ্ডলের সম্মতির উপর নির্ভর করে । বিষয়টি পালেমেণ্টে উপস্থিত করিতে কি না, জানি না । fচরস্থায়ী বন্দোবস্তের কোন পরিবর্তনে গবর্ণর দ্য গবর্ণবজেনার্যাল যে সম্মতি দিতে পরিবেন না, ইহা ঠাহাদের প্রতি ইংলণ্ডেশ্বরের উপদেশাবলীর দলিলে (Instrument বিলাতে, ইংলণ্ডেশ্বরের বিবেচনার জন্য, হইবে of Instructions-g) asso, প্রজাদের অবস্থার উন্নতি হওয়া নিশ্চয়ই উচিত । তাহাদের উপর অত্যাচারও নিবারিত হওয়া উচিত। কিন্তু জমীদারী প্রথা ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিমূল করিলেই তাহা হইবে কি ? জমাদাররা রায়তদের নিকট হইতে যত খাজনা আদায় করেন, গবন্মেণ্ট তার চেয়ে কম পাঞ্জন লক্টবেন কি ? অনেক জমাদারের কৰ্ম্মচারীরা জমীদারদের জ্ঞাতসারে ও হুকুমে বা তাহদের অজ্ঞাতসারে প্রজাদের উপর অত্যাচার করে ও থাঞ্জনা অপেক্ষ বেশ টাক আদায় করে শুনিয়াছি । রায়তদের নিকট হইতে গবন্মেটি সাক্ষাৎ ভাবে খাজনা আদায় করিলে নিম্নপদস্থ সরকারী কৰ্ম্মচারীরা অত্যাচার করিবে না কি ? আমরা জমীদার নহি, রায়ুতও নহি । এই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি না । জমীর খাজনার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও জমীদারী প্রথা উঠাইয়া দিবার সপক্ষে একটা এই যুক্তি শুনিয়াছি, যে, তাহা হইলে প্রভূত আয়বিশিষ্ট অথচ ঋণী বিলাসী উদ্যমহীন অলস এক শ্রেণীর লোকের পরিবর্তে বঙ্গে উদ্যমশীল, পরিশ্রমী, ব্যবসাবাণিজ্যে নিরত এক শ্রেণীর লোকের অভু্যদয় হইবে । তাহা হইলে ভাল ।