পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আষাঢ় বিবিধ প্রসঙ্গ—কংগ্রেস ও হিন্দুসমাজ 8(S অভিজাত ও সাধারণ লোক এবং মধ্যবিত্ত ও সাধারণ লোকের মধ্যে যে ভেদ—তাহা হইতে উৎপন্ন যুদ্ধ বর্তমান খ্ৰীষ্টীয় শতাব্দীতে অশ্রুতপূৰ্ব্ব ভীষণ আকার ধারণ করিয়াছে । এই বিরোধের প্রকৃত অবসান, বাহিরে অবসান এবং মানুষের হৃদয়ে অবসান, কেমন করিয়া হইবে, জানি না। কেবল আশা করি মাত্র, ভগবানের দিকে চাহিয়া । জ্ঞানে, ধৰ্ম্মে, বুদ্ধিতে কেহ উন্নত হইতে চাহিলে অন্য কাহাকেও বিন্দুমাত্রও বঞ্চিত না করিয়া তিনি উন্নত হইতে পারেন। এক জন বুদ্ধিমান, জ্ঞানী, সত্যবাদী, সাত্ত্বিক, ন্যায়পরায়ণ, নানা সদগুণশালা হইলে তাহ অন্য কাহার ও জ্ঞানী ও সদগুণশালী. হওয়ার ব্যাঘাত জন্মায় না । আধ্যাত্মিকতা, সাত্ত্বিকতা, মকুষ্যত্ব, যে-কোন সদগুণ, জড়বস্তু নহে, যে, কেহ বা কোন শ্রেণীর লোকেরা তাহা অর্জন করিলে অন্যের ভাগে কম পড়িয়া যাইবে । স্বতরাং ধৰ্ম্মজগতে সকলেই যথাসাধ্য উন্নত এবং আত্মা ও হৃদয়মনের সম্পংশালী হইতে পারেন । কিন্তু জড়পদার্থের আকারে যত রকম সম্পত্তি আছে, তাহ সীমাবদ্ধ । ভূমি, শস্ত, টাকাকড়ি, বস্ত্র, অলঙ্কার, তৈজসপত্র, ঘরবাড়ী, ধানবাহন, পশু প্রভৃতি সব মানুষকে সমান সমান করিয়া ভাগ করিয়া দিবার কোন উপায় এপর্য্যন্ত আবিষ্কৃত হয় নাই । রুশিয়াতেও সকলের আয় সমান সমান নহে, সকলের সম্পত্তি সমান নহে ; কাহারও কম, কাহারও বেশী । সৰ্ব্বত্র এইরূপ । জড়সম্পত্তির প্রকৃতিই এইরূপ, যে, এক জন বেশী পাইলে অন্য জনের ভাগে কম পড়ে। কিন্তু আত্মিক সম্পদের প্রকৃতি এরূপ নয়, যে, এক জন ধাৰ্ম্মিক হইলে অন্তকে অধাৰ্ম্মিক বা কম ধাৰ্ম্মিক হইতে হইবে, এক জন বীর হইলে অন্তকে কাপুরুষ হইতে হইবে, এক জন সত্যবাদী হইলে অন্যকে মিথ্যাবাদী হইতে হইবে, এক জন সংযমী ও মিতাচারী হইলে অন্তকে উচ্চুম্বল হইতে হইবে,--- প্রত্যেকেই অপর কাহাকেও বঞ্চিত না করিয়া ধাৰ্ম্মিক, বীর, সত্যবাদী, সংযমী, ...হইতে পারেন, হইবার চেষ্টা করিতে পারেন । দারিদ্র্য যাহাতে না-থাকে, অস্ততঃ খুব কমে, তাহা আমরা চাই । প্রত্যেক মানুষের সুস্থ শরীরে বঁচিয় থাকিবার এবং জ্ঞান ও আনন্দ লাভ করিবার অধিকার যাহাতে কাৰ্য্যতঃ স্বীকৃত হয়, আমরা এরূপ সামাজিক ও 億8ー〉bア রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা চাই । কৃষি-শিল্প-বাণিজ্য দ্বারা উৎপাদিত ধনের ন্যায্য বণ্টন আমরা চাই। ভূম্যধিকারী ও ধনিকের বিলাসিতার ব্যবস্থা পৰ্য্যস্ত হইতে পারিবে, আর কৃষক ও শ্রমিকের ভাগ্যে পড়িবে কদৰ্ঘ্য অস্বাস্থ্যকর বাসগৃহ, অতিরিক্ত পরিশ্রম, অনুপযুক্ত খাদ্য ও বস্ত্র, রোগে চিকিৎসার অভাব, এবং সন্তানদের যথেষ্ট শিক্ষার সুযোগের অভাব—এরূপ সামাজিক ও রাষ্ট্ৰীয় ব্যবস্থার বিলোপসাধন করিতে হইবে । কিন্তু এই বিলোপসাধনের চেষ্টা ঈৰ্য্যাম্বেষ পরিহার করিয়া করিতে হইবে । জড়সম্পদকে পরমার্থ না ভাবিয়া আত্মিক সম্পদ ও হৃদয়মনের ঐশ্বৰ্য্যকে পরমার্থ মনে করিতে হইবে । দারিদ্র্য, রোগ, নিরানন্দ ও অজ্ঞতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম এইরূপ মনের ভাব লইয়া না চালাইলে সমাজতন্ত্রবাদী ও সাম্যবাদীরা যে সংগ্রাম চালাইতেছেন তাহাতে জগতে অশান্তি বাড়িতেই থাকিবে। ধৰ্ম্মজগতে, কম হইলেও, মিলনের ভাব দেখা যাইতেছে। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের কোটা হইতে ধৰ্ম্মসমূহের পালেমেন্ট সৰ্ব্বধৰ্ম্মমতের কংগ্রেস প্রভৃতি নামের ধৰ্ম্ম সম্বন্ধীয় সভায় নানা ধৰ্ম্মের লোকের সমবেত হইয়া নিজ নিজ ধৰ্ম্মমত শিষ্টভাবে বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করিতেছেন। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী ও গণতন্ত্রবাদী, ধনিক ও শ্রমিক, পুজিবাদী ও শ্রমিকনেতৃত্ববাদী, পুজিবাদী ও সাম্যবাদী, ফাসিষ্ট ও পুজিবাদী —সম্ভাবে ইহাদের কোন পালে মেন্ট বা কংগ্রেস জগতে এখনও হয় নাই। কখনও হইবে কি ? কংগ্রেস ও হিন্দুসমাজ কংগ্রেসের সহিত কোন ধৰ্ম্মসম্প্রদায়েরই বিরোধ নাই। ংগ্রেস ইচ্ছাপূৰ্ব্বক বা জ্ঞাতসারে কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিকর ও অকল্যাণকর কিছু করেন না । কিন্তু ইহা সত্য, যে, যেসকল প্রদেশে হিন্দুরা সংখ্যায় নূন, সেখানে হিন্দুদের অসুবিধা, হিন্দুদের প্রতি অবিচার ও অত্যাচার, হিন্দুনারীদের প্রতি অত্যাচার প্রভৃতির প্রতিকারের জন্য কংগ্রেস বিশেষ কিছু করেন না। ( আমরা যাহা জানি তাহা হইতে আমাদের ধারণা যেরূপ হইয়াছে তাহাই লিথিলাম। আমরা