পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণের স্তন্ধ রাত্রি । পুঞ্জীভূত মেঘে সমাচ্ছন্ন নভস্তল । রহি রহি বেগে বহিছে পূর্বালি বায়ু। শু্যামল বনানী আসন্ন দুৰ্য্যোগ হেরি করে কানাকানি পরস্পর অস্ফুট মর্শ্বরে। ঝিল্লীদল নবীন বরযাপাতে আনন্দ-চঞ্চল পঞ্চমে তুলেছে তান ; প্রস্থপ্ত ধরণী মৌন মূক ; কৰ্ম্মক্লান্ত বিপুল সরণী স্তন্ধ, অচেতন । পথ-কুকুরের ভুলি কোলাহল, ইতস্ততঃ রচিয়া কুণ্ডলী অন্ধকারে ভগ্নস্তুপ ইষ্টকের প্রায় প্রশাস্ত স্বযুধিমগ্ন ধূলির শয্যায়। শুধু আমি নিদ্রাহীন অপলক আখি জাগি বিভাবরী একা। বাতায়নে রাখি মোর অতন্দ্র নয়ন ভাবি কত কথা, কত সুখ, কত দুঃখ, বিরহের ব্যথা, ঘুণ, প্রেম, নিন্দ, স্তুতি, অপযশ প্লানি কত আশা-নিরাশার করুণ কাহিনী একে একে উঠে ভাসি । fক জানি কথন কল্পনার দ্রুত রথে ধেয়ে চলে মন সুদূর অলকাপুরে। বিরহিণী প্রিয় হৃদয়-বল্লভ লাগি উৎকণ্ঠিত হিয়া যেথা একাকিনী নিশি যাপে অশ্রুঞ্জলে, নবীন মেঘেরে যেথা বাৰ্ত্তাবহ-ছলে পাঠাতে চাহিয়াছিল প্রিয়ার বিরহে ব্যথিত ব্যাকুল যক্ষ—যে ব্যথায় দহে অহনিশ বক্ষ তার । কল্পনায় হেরি শোকাচ্ছন্ন সে অলকা—ভবন-ময়ূরী ভুলিয়া আনন্দ-নৃত্য স্বর্ণদণ্ড'পরে নিস্তব্ধ রয়েছে বসি । পদ্ম-সরোবরে পৃষ্ঠ'পরে চঞ্চু রাথি ভুলে জলকেলি শোকভারে থাকাহত মরাল-মরালী । কনক-পালঙ্কোপরি বিষাদ-প্রতিম! যক্ষবধু, মূৰ্ত্তিমতী শোক, নাহি সীমা দুঃসহ সে বেদনার, কোমল অস্তরে প্রিয়ের বিচ্ছেদ-ব্যথা নিয়ত সস্তরে । প্রেমের মৃত্যু শ্ৰীমুকুমার চক্ৰপত্তা নামিল বাদল-ধারা—স্বপ্ন গেল টুটি বাস্তবের নগ্নমূৰ্ত্তি সম্মুখেতে ফুটি উঠিল সহসা । আজি বড় নিঃস্ব আমি, বড় এক, ব্যথা মোর জানে অন্তর্ধামী । জীবনে যা-কিছু কাম্য, স্নেহ, প্রেম, প্রীতি, আনন্দ-উজ্জ্বল ধরা, কোকিলের গীতি স্বপন আমার কাছে । দূরে, বহু দূরে, আঁখির আড়ালে রহি মোর অন্তঃপুরে কামনা ফেলিছে ছায়া, নিৰ্ম্মম রাক্ষসী, যত বাধিবারে চাই তত উঠে হাসি নিষ্ঠুর উল্লাসে। জানি, এ শুধুই মায়, আমারে ছলিছে আজি মূৰ্ত্তিহীন ছায়া। অভিশপ্ত যক্ষ আমি—মঙ্গে মোর তরে বজত জোছন-ধারা । যদি প্রেমভরে কেহ দেয় কণ্ঠে মোর কুস্বমের হার, ঢেকে দেয় অনুরাগে চরণ অfমার ফুলে ফুলে পূর্ণ কবি শামল অঞ্চল, দলিয়া আসিন্তে হবে চাপি অশ্ব ফ্রল প্রেমের অঞ্জলি সেই । তাই ভাবি মনে চিত্ত মোর পরিপূর্ণ কোন অন্ধ ক্ষণে বিশ্বের রিক্ততা দিয়ে ? মলয়-হিপ্পোল মৰ্ম্মে যদি দিয়ে যায় হিন্দোলার দোল তবুও রহিতে হবে মূক ; যদি দহে বক্ষ মোর বাসনা-বহ্নিতে, তবু মহে মোর তরে প্রেয়সীর অধর-চুম্বন, নহে মোর প্রিয়া সনে প্ৰেম-সম্ভাষণ । রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, নয়নের ভাষা, বুকভরা অতুরাগ, যত উচ্চ আশা মিথ্যা মোর কাছে আজি। ছিন্ন করি মাল: দলি সে অঞ্জলি তাই চলেছি একেক সংসারের মরুপথে ক্লাস্তিহীন যাত্রী, সম্মুখে ঘনায়ে আসে দুর্বোগের রাত্রি । নিরাশার ছায়াপাতে জীবন আধার, প্রেমের পরম মৃত্যু আজিকে আমার । এ জীবন ব্যর্থ, স্বগু বক্ষের আগুন নিফল যৌবন-স্বপ্ন, বিফল ফাগুন।