পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○b〜ミ পাইয়া আশ্বস্ত হইতেছে এমন সময় সংবাদ আসিল যুদ্ধ আসন্নপ্রায় । ইতিমধ্যে নেপালের মহামন্ত্রী মহারাজ চন্দ্রশমসের স্বর্গারোহণ করিলেন। এক সপ্তাহ পরে ২রা ডিসেম্বরে এ-খবর লাসায় পৌছিতেই শহরময় বলাবলি চলিল, “দেখেছ লামাদের মন্ত্রবল, কি ভয়ানক পুরশ্চরণের ক্ষমতা !” তাহার পরেই ভারতে মহাসমরের সময় সৈনিকেরা যেমন ষ্টেশনের মিঠাইয়ের ঝুড়ি লুট করিয়াছিল, লাসার সৈনিকেরাও তেমনই আরম্ভ করিল। এক জন সেপাই খাওয়ার পরে খাবারের দোকানে পয়সা না দিয়া চলিয়া আসিতেছিল, দোকানী দামের প্রশ্ন তুলিতেই দেশরক্ষক বীর তাহার পেটে ছোরার আঘাত দিয়া প্রশ্নের উত্তর দিল । ১৯৩০ সালের ১৮ই জানুয়ারী শোনা গেল যে চীনরাষ্ট্রপতির পত্র লইয়া দূত আসিয়াছেন এবং তাঙ্গকে অভ্যর্থনা করিবার জন্য পাচ-শ সৈনিকের শোভাযাত্রার এবং যেরূপ পূৰ্ব্বকালে চীন-সম্রাটের পত্রবাহী দূতের জন্য করা হইত তদ্রুপ নৃত্যগীতাদির ব্যবস্থা হইয়াছে। শুনিলাম, পত্রে তিব্বত ও চীনের সহস্ৰ বৎসরের সম্বন্ধের কথা তুলিয়া পুনৰ্ব্বার সে-সম্বন্ধ স্থাপনের জন্য স্কানকিনে প্রতিনিধি পাঠাইবার কথা বলা হইয়াছে। এক সপ্তাহ পরে এক ভোটিয়া কুমারী চীনের সাহায্যবাৰ্ত্ত লইয়া আসিলেন । ইনি জাতিতে তিব্বতীয়া হইলেও চীনের প্রজাতন্থের ( কুয়োমিন্টাঙ্গের ) সদস্য ছিলেন । মোহনিদ্রা ভঙ্গ হইলে তিববতীয়েরা কি হইতে পারে, ইনি ছিলেন তাঙ্গারই নিদর্শন । এখন চীনের এই ভাব ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে উদ্বেগের কারণ হইয়া উঠিল । বহিজগতে খবর পৌছান সম্ভব যদি ন হইত তবে নেপালীর তিব্বত জয় করিলে কিছু হুইত না, কিন্তু এখন ঐরুপ ঘটিলে চীন ও অন্যান্ত রাষ্ট্রে রটিবে যে নেপাল ইংরেজেরই অস্ত্রবিশেষ, সুতরাং ঐরূপ ব্যাপারে বাধা দেওয়া প্রয়োজন । ৭ই ফেব্রুয়ারী খবর আসিল যে দুই বিবাদীর মধ্যে সন্ধি-স্থাপনের জন্য ব্রিটিশ সরকার সরদার-বাহাদুর লে-দন-লাকে পাঠাইতেছেন । এfদকে সন্ধি ও যুদ্ধের উদ্বেগ-উচ্ছ্বাসে তিন মাস কাটিয়াছে ; ১১ই ফেব্রুয়ারী সন্ধির প্রমাণ আরও পাওয়া গেল যখন লাসা হইতে বাহিরে যাইবার প্রবাসী ১৩৪৪ সকল পথে সৈনিক পাহারা বসিল এবং কড়া হুকুম জারি হইল যে, কোন নেপালী প্রজা লাসার বাহিরে যাইতে পাইবে ন। এত দিন পথে বন্দুক-হাতে সিপাহী চলিতেছিল, এখন তোপ কামান দেখা দিল । গ্যাঞ্চী, শিগচী সকল শহরেই এই অবস্থা, সে-কথা পরে জানা গেল। লাসার নেপালীর এত দিন সন্ধির আশায় এদেশ ছাড়ে নাই, নেপাল ও কলিকাতা হইতে লাসা ত্যাগের জন্য জরুরি আদেশ-অঙ্গুরোধ সবই তাহারা উপেক্ষা করিয়াছে, এখন অবস্থা দেখিয়া তাহারা মাথায় হাত দিয়া বসিল । ভোটিয়েরা বলিতে লাগিল, “চীনাদৃত যখন আসিয়াছে তখন আর ভয় কি ? আমরা এখন আর অসহায় नई l" আজ শুনিলাম লে-দুন-ল। লাস হইতে দু-দিনের পথ ছুশুর পৌছিয়াছেন, কিন্তু সন্ধির কোন আশা দেখা গেল না। শোনা গেল মহাগুরু (দলাই লামা) পূর্বেই লে-wন-লার উপর অপ্রসন্ন হইয়াছিলেন। এখন সন্ধির কথা দূরে থাক তাহার সহিত দেখা করিতেও স্বীকৃত হইবেন কিনা সন্দেহ । নেপালীরা অদৃষ্টের উপর সকল বরাত ছাডিয়া দিয়া বসিয়া রহিল । এদিকে খবর আসিল ধে নেপালের নূতন রাণী ভীম শমসের ফাঙ্কনের পূর্ণিমা পৰ্য্যন্ত সময় দিয়া তিব্বতের কাছে জবাবদিহি তলব করিয়াছেন। ১৬ই ফেব্রুয়ারী সরদার-বাহাদুর লে-দুন-লা লাসায় পৌছিলেন। সেদিন সন্ধ্যায় শোনা গেল, তিনি তিন ঘণ্টকাল মহাগুরুর সহিত নিভৃতে আলাপ করিবার পর ভোটমস্ত্রিদলের সঙ্গে কথাবাৰ্ত্ত বলিয়াছেন । তার পর প্রতিদিনই এইরূপ মহাগুরুর সহিত বাক্যালাপের খবর আসিতে লাগিল কিন্তু সন্ধির কোনও চিহ্ন দেখা গেল না । সে বৎসর ১লা মার্চ, মাঘ-প্রতিপদে ভোটীয় নব বৎসর আরম্ভ হইল, কিন্তু লোকের মুখে বা মনে কোন আশার ছায়া পাওয়া গেল না। চারিদিকে অন্ধকারই দেখা গেল । ১১ই মার্চ শুনিলাম, সরদার-বাহাদুরের চেষ্ট সফল হইয়াছে, ভোট-সরকার নেপাল-রাজকে সন্ধিপত্র পাঠাইতেছেন, কিন্তু ১৬ই মার্চ শুনিলাম তিনি বিফলমনোরথ হইয়া ফিরিয়া যাইতেছেন। পরদিন সে খবরও থfগুত হইল। ১৮ই মার্চে আমার ডায়েরীতে লিখিয়াছিলাম, “যুদ্ধের সম্ভাবনাই অধিক, তবে বহু বিশেষজ্ঞ বলিতেছেন সন্ধি হইবে ।" ১৯শে মার্চ