পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রণবণ নিষিদ্ধ দেশে সওয়ণ বৎসর ●b〜Nう নেপালী ব্যাপারীদের কাছে কলিকাতা হইতে অনুরোধ আসিল, “সব ছাড়িয়া যে-কোন উপায়ে পলাইয়া এস।” সক-শেষে ২২শে মার্চ ভোট-সরকার ঘোষণা করিলেন যে সন্ধি স্থাপিত হইয়াছে। এই ঘোষণায় নেপালী প্রজাদের আনন্দের অবধি রহিল না। ৩০শে মার্চ পথঘাট খুলিয়া দেওয়া হইল । তিব্বতে এই সাতমাসব্যাপী যুদ্ধের বাদল কাটিবার প্রধান কারণ সরদার-বাহাদুর লে-দন-লার যোগ্যতা ও ধৈর্য্য । তিব্বতীয়দিগের কার্ধ্যকলাপ, বিচারক্ষমতা, রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় পদ্ধতি সম্বন্ধে তাহার জ্ঞান অতি স্বল্প ও ব্যাপক ছিল, উপরন্তু তিনি জাতি ও ধৰ্ম্মে সিকিমী ভোট, সুতরাং তিব্বতীয় জাতির নাড়াজান তাহার মধ্যে fছল এবং তাঙ্গদের সকল বিশেষত্বও তাহার জানা ছিল । ঘে-সময় তিনি লাসামু মাসেন সে-সময় যুদ্ধ অনিবাধ্য বলিয়াই সকলে জানিত এবং তিনি যে সন্ধি-স্থাপনে সমর্থ হইবেন এ-কথা কেহই বিশ্বাস করে নাই । তিনি তিব্বতে মা আসিলে কি হইত জানি না, কিন্তু সাধারণের সমক্ষে দাড়াইয়া ক্ষমাপ্রার্থনা ও অপরাধী কৰ্ম্মচারীদের দণ্ডদান আদি নেপালরাজ-নিদিষ্ট সন্ধি-সর্বসমূহ যে ভোট-সরকার স্বীকার করিতেন না ইহাতে সন্দেহ নাই । লে-দুন-লা ইংরেজ হইলে 'নাইট’ খেতাব পাইতেন এবং বহুতর পারিতোষিকও যে তাহার করতলগত হইত ইহা নিশ্চয়, কেননা এই সন্ধি না হইলে চীন-রুষ প্রভৃতি রাষ্ট্রের সঙ্গে ইংরেজের মনোমালিঙ্ক ঘটার ষথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল । আমি এই সকল ঘটনার বিবরণ যাহা দিয়াছি তাহ অন্ত পাচ জনের মতই সংগ্ৰহ করিয়াছিলাম, কেবল প্রভেদ এই ছিল যে, “আন্ধের দেশে কানা রাজা”-হিসাবে প্রত্যহই অনেকে আমার পরামর্শ লইতে আসিত। ধাহী হউক, এই সন্ধির ফলে সহস্ৰাধিক নেপালী প্রজা এবং তাঁহাদের সঙ্গে আমিও ধনে-প্রাণে বাচিয়া গেলাম । 藝 譬 粤 আমি লাসায় উপস্থিত হই ১৯২৯ সালের ১৭ই জুলাই এবং ১৯৩০ সালের ২৪শে এপ্রিল ঐ রহস্যময়ী নগরী ছাড়িয়া চলিয়া যাই। মহাগুরু দলাই লামার নিকট হইতে লাসায়ু থাকিবার অনুমতিলাভের পর আমার লেখাপড়ার কাজ ఆసె-> 8 আরম্ভ হয়। আমার উদ্দেশু ছিল এদেশে তিন বৎসর থাকিয়া অধ্যয়ন শেষ করিয়া চীন জাপান ঘুরিয়া দেশে ফের। তিব্বতে আসিবার পূৰ্ব্বে পুস্তকের সাহায্যে এদেশের ভাষা কিছু শিখিয়াছিলাম এবং লাসার পথে শুধু ভোট ভাষায় কথাবাৰ্ত্ত চালাইতে চেষ্টা করায় এ দেশের কথিতভাষার উপর কিঞ্চিং অধিকারও জন্মিয়াছিল, কিন্তু আমার প্রয়োজন ছিল লিখিত ভাষা ও সাহিত্য আয়ত্ত করা, কেননা তাহার মধ্যেই আমাদের দেশের সংস্কৃত ভাষার অনেক প্রাচীন অমূল্য রত্ব স্বরক্ষিত আছে। স্বতরাং আমি ঠিক করিলাম যে, যে-সব গ্রন্থের সংস্কৃত ও তিব্বতী উভয় সংস্করণই পাওয়া ষায় সেইগুলি প্রথমে পড়িয়া ফেলিব । আমার কাছে বোধিচর্ধ্যাবতার গ্রন্থের সংস্কৃত সংস্করণ ছিল, তাহার ভোটীয় অনুবাদ ক্রয় করিতে এক দিন বাজারে গেলাম। দেখিলাম, এক জায়গায় কতকগুলি লোক পুথির রাশি লইয়া বসিয়া আছে । ইহারা পৰ্ব-ব অর্থাৎ ছাপাওয়ালা এবং পুস্তকবিক্রেতা । মুদ্ৰণ-প্রথার প্রথম আবিষ্কার হয় চীনদেশে। শীলমোহরের পদ্ধতিতে কাঠের ফলকে উন্ট অক্ষর খোদাই করিয়া বোধ হয় ইহার স্বচনা হয়। খ্ৰীষ্টীয় সপ্তম শতকে ভোট-সম্রাট্ স্রোং-চন-গম-পো চীন-রাজকন্তুকে বিবাহ করিলে চীন ও তিব্বতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপিত হয় । অদ্যাবধি সে সম্বন্ধ বর্তমান এবং তাহার ফলে বেশভূষা, পামভোজন আদি সমস্ত আধিভৌতিক ব্যাপারে তিব্বত চীনদেশের নিকট ততটা ঋণী--আধ্যাত্মিক ব্যাপারে ভারতের নিকট তাহার ঋণ যতটা । এই ঘনিষ্ঠতার পথেষ্ট তিব্বতে চৈনিক ছাপার বিদ্যা আসে। ইহা তিব্বতীস্থের কোন সময় আয়ত্ত করে তাহা বলা কঠিন, তবে বিশ লক্ষ শ্লোকযুক্ত কন্‌-দুর (বকঙ-ইণ্ড্যর—বুদ্ধবচন-অমুবাদ ) এবং তন-জুর (স্তন হও্যর=শাস্ত্র-অনুবাদ ) নামক দুই বিরাট সংগ্ৰহ (দুই এক হাজার শ্লোক ভিন্ন যাহাদের সমগ্র অবশিষ্ট অংশই ভারতীয় সাহিত্যের অম্বুবাদ) পঞ্চম দলাই লামা হুমতিসাগর (খৃ: ১৬১৬-১৬৮১ ) কাঠফলকে খোদাই করাইয়ছিলেন বলিয়া জানা যায়। আজকাল প্রায় সকল মঠেই ঐরূপ মুত্রণ-ফলক আছে, সামান্ত দক্ষিণ দিলেই পৰ্ব-ব অর্থাৎ মুদ্রাক্ষরগণ নিজেদের পরিশ্রম, কাগজ ও কালির খরচে