পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সায়াহ্ন শ্রীপাচুগোপাল মুখোপাধ্যায় হরিচরণ বাবুর বয়স প্রায় পঞ্চাল্পর কাছাকাছি। র্তাহার মাথার চুলের অনেকগুলি আজ স্থানভ্রষ্ট, এবং যে কয়টি এখনও কোন রকমে টিকিয়া আছে, সেগুলিতে পাক ধরিতে আরম্ভ করিয়াছে। বয়সের অনুপাতে শরীরের বাধুনি এখনও শিথিল হয় নাই, এ-কথা হরিচরণ বাবু নিজেই ভাল করিয়া জানেন । রজাসের বাড়ী তার চাকরির ইতিহাস রঞ্জত-জয়ন্তী পার হইয়া স্ববর্ণের পথে পা দিয়াছে । এই দীঘকালের মধ্যে হরিচরণ বাবু আপিস কামাই করিয়াছেন মাত্র দিন কুড়ি-বাইশ । প্রথম বার দিন-সাতেকের জন্য ; —একমাত্র গুলিকার বিবাহ-ব্যপদেশে সাত দিনের ছুটি লইয়। তাহাকে মুজের যাইতে হইয়াছিল । শ্বশুরবাড়ী তার মুঙ্গের শহরে । কোম্পানীকে ঠকাষ্টয়া বেতন লইবার বাসনা হরিচরণ বাবুর ছিল না ; কিন্তু গৃহিণী সত্যবাল সে-বার নাছোড়বান্দা । তিনি স্পষ্টই জানায় দিলেন যে পূজায় তার গরদের শাড়ী না হইলেও চলিবে, সাবেক তাগাজোড়া ভাঙিয়া হালফ্যাসানের আমলেট না বানাইলেও কোন ক্ষতি নাই, কিন্তু মূল্পের না গিয়া তিনি নিরস্ত হইবেন না। সাতটা নয়, পাচটা নয়, একটি মাত্র বোন—ইত্যাদি । স্বতরাং হরিচরণ বাবুকে সে-বার স্বস্থ শরীরে এবং সজ্ঞানে আপিল কামাই করিতে হইয়াছিল। পরের ব্যাপারটা নিতান্তই দৈবাধীন। হঠাৎ একটু সন্ধি-কাশি যে এমন মারাত্মক হইয়া উঠিবে সে-কথা হরিচরণ বাবু ভাবিতে পারেন নাই। সকাল হইতে টিপ টপ করিয়া বৃষ্টি পড়িতেছিল, কিন্তু সেদিকে দৃষ্টি না দিয়া তিনি ট্রাম ধরিবার জন্ম ছুটিলেন। রজাস কোম্পানীকে ফাকি দেওয়া হইল না বটে, কিন্তু বিকালের দিকে দেহের উত্তাপ সত্যি সতি্যু বাড়িয়া গেল। তার পর রাত্রিতে বাসায় ফিরিয়া হরিচরণ বাবু প্রায় অচৈতন্ত হইয়া পড়িলেন। ডাক্তার আসিলেন, ওষুধ আসিল, আইসব্যাগ আসিল—সমস্ত মিলিয়া ব্যাপারটা ՊՊ-աՑ আপিসে অস্থপস্থিত থাকিয়া রজাস" এমনই জটিল হইয়া উঠিল যে হরিচরণ বাবু ভুল বকিতে আরস্ত করিলেন। কিন্তু সে-যাত্রা তাহার আপিসের চাকরিটা টিকিয়া গেল। হরিচরণ বাবু সারিয়া উঠিলেন । এ-সব অনেক দিন আগের কথা । তার পর হরিচরণ বাবুর হাতে একটা গোটা সেক্সনের ভারই আসিয়া পড়িয়াছে। মাহিনী বাড়িয়াছে, এবং সেই সঙ্গে খরচও বড় কম বাড়ে নাই। আগে হরিচরণ বাবু গলাবদ্ধ জিনের কোট পরিয়া যাইতেন, এখন সেই কোটের উপর পাকানো উড়ুনী পৰ্যন্ত তাহাকে বধিতে হয়। পৌনে দুই শত টাক মাহিনার বড়বাবুর পক্ষে সেকেও ক্লাস ট্রামে যাতায়াত সমীচীন নয় মনে করিয়া হরিচরণ বাবু একদিন একটা মান্থলি টিকিটই কিনিয়া ফেলেন। সেই ব্যবস্থা আজও চলিতেছে। নট বাইশ মিনিটের সময় ট্রাম যখন ঠিক কালীতলার সামনে আসিয়া দাড়ায়, সেই সময় প্রতিদিন যারা ঠেলাঠেলি করিয়া কোন মতে ট্রামে উঠিয়া একটু জায়গা ধুজিয়া লন, তাদের মধ্যে আমাদের হরিবাবুর রেগুলার এটেগুেন্সে" একেবারে ফাই প্রাইজ। এ-কালের ছোকরাদের মধ্যে ধারা আপিসে বা ব্যাঙ্কে চাকরি করে, তারা সবাই হরিচরণ বাবুকে চেনে। পরিচয় নাই, নামও জানা নাই, তবু ট্রাম যখন কালীভলার মোড়ে আসিয়া থামে, তখন সবাই বুঝিতে পারে যে, এইবার তিনি ট্রামে উঠিবেন। কোন মতে বসিবার মত একটু জায়গা করিয়া লইতে পারিলেই হরিচরণ বাবুর পকেট হইতে প্রকাও একটা কেীট বাহির হইয়া আসে–গোটা দুই তিন পান পর-পর মুখের মধ্যে চলিয়া ধায় এবং সঙ্গে খানিকট গৃহজাত দোক্তা। পকেট হইতে ভাজকরা খাকী একখানি রুমাল বাহির করিয়া হরিচরণ বাৰু কপালের ঘর্ষবিন্দুগুলি সযত্নে মুছিয়া ফেলেন। তার পর কি মন্ত্রে জানি না, হাতের রুমাল পকেটের মধ্যে আশ্রয় লইবার সঙ্গে সঙ্গে তার চোখের পাতা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হই আসে, ট্রামের ষ্টপেজ, লোকজনের