পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ു ശ প্রবাসী ৯২৪৪৪ “বাড়ী নিয়ে গিয়ে খুব আদর-যত্ন করলে সেদিন । দুটো নারকেল-নাডু দ্বাচলের মধ্যে লুকিয়ে নিয়ে এসে বললে— তোর জন্তে চুরি করে রেখেছিলাম শৈল, খা । তোকে সত্যি বড় ভালবাসি শৈল, তুই বিশ্বাস করবি নি। তোকে রাগের মাথায় তাড়িয়ে দিয়ে মনটা এমন হস্থ করছিল !••• মুয়ে আগুন নস্তের, অত খোসামোদ করিয়ে, একটা নাটাইয়ের দাম আদায় ক’রে, যদিবা কালকে চিঠির কাগজ দিলে এনে, আজ কোন মতেই চিঠিটা ফেলে দিলে না রে! গ’লে ঘূাক অমন দুবমন গতর—বেইমানের । “এদিক-ওদিক একটু চেয়ে শেমিজের মধ্যে থেকে একট। গোলাপী থাম বের করে মিনতির স্বরে বললে--সত্যি ভোকে বডড ভালবাসি শৈল—বললে না পেত্যয় যাবি । এই চিঠিটা ভাই-বইয়ের মধ্যে মুকিয়ে নে। আর, একটু ঘুরে গিয়ে পোষ্টাপিসে ফেলে দিয়ে বাড়ী যেও ; রোদট একটু কড়, কষ্ট হবে ? হ্য, শৈলর আবার এ-কষ্ট কষ্ট ! নস্তে কিনা এগারটা বেজে গেছে, বারটার সময় ডাক বেরিয়ে যাবে শৈল, লক্ষ্মীটি... “আমি এখনও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি,– পুকুরধারে, শানের বেঞ্চের পিছনে, বকুলগাছের আড়ালে আমার কাধে বঁহাতটা দিয়ে নয়নতার দাড়িয়ে আছে, আমার মুখের উপর ডাগর ভাসা-ভাসা চোখ দুটি নীচু করে,—তাতে চিঠির গোপনতার একটু লজ্জা, থোশমোদের ধূৰ্ত্তামি, বোধ হয় একটু অমৃতপ্ত স্নেহ, আর একটা কি জিনিষ—একটা অনিৰ্ব্বচনীয় কি জিনিষ যা শুধু নবপরিণীতাদের চোখেই দেখেছি, আর যা এই রকম চিঠি-লেখা, চিঠি-পাওয়ার সময় যেন আরও বেশী ক’রে ফুটে ওঠে। ”এইখানে আমার ভালবাসার ইতিহাসের প্রথম অধ্যায় শেষ হ’ল, এই ফিরে যেতে যেতে আবার ঘুরে আসায় । •• তোমাদের ঐ বয়সের মেয়েদের মজলিসের কোন অভিজ্ঞতা আছে f" তারাপদ বলিল, “না ” রাধানাথ বলিল, “কি ক'রে থাকবে বল ? গাঞ্জেনের কণ্টকারণ্যে মানুষ হয়েছি । চক্ষু সৰ্ব্বদা বইয়ের অক্ষরলগ্ন থাকত, অক্ষরের রূপে যে মুগ্ধ ছিলাম তা নয়,-বই থেকে চোখ তুললেই বাবা কিংবা পাচ কাকার কেউ-না-কেউ চোখে পড়তেন । ছুটিছাটায় যদি দুই-এক জন বাইরে গেলেন তো সেই ছুটির সুযোগে মামা পিসেমশাইদের দল এসে আমার ভবিষ্যতের জঙ্ক সতর্ক হয়ে উঠতেন । তারা ছিলেন উভয়পক্ষ মিলিয়ে সাত জন । শেষবারে এই তের জনে মাথা একত্র ক’রে বিয়ে দিলেন একটি নিষ্কণ্টক মেয়ের সঙ্গে, যার বাপের সম্পত্তিতে ভাগ বসাবার জtহু না ছিল বোন, না-ছিল একটা ভাই যে একটি শালাজেরও সম্ভাবনা থাকবে ।-- নাও,.ব’লে স্বাও, আবার মজলিস ! এত কড়াকড়ির মধ্যে যে একটি মেয়ে কোন রকমে ঢুকে পড়েছে এষ্ট চের ” তারাপদ বলিল, “রাধানাথ চটেছে,—তা চটবার কথা বইকি...” শৈলেন বলিল, “নয়নতারাদের মজলিসের কথা বলতে যাচ্ছিলাম। আগে বোধ হয় এক জায়গায় বলেছি যে এ-মজলিসে আমার মুক্তগতি ছিল। ছিল বটে, কিন্তু এর পূৰ্ব্বে আমি আমার ছাড়পত্রের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতাম ন । তার কারণ ওদের কথা সব সময় ঠিকমত বুঝতামও না আর বুঝলেও সব সময় রস পেতাম না । আমার নিজেরও বয়সসুলভ নেশা ছিল,—মাছ ধরা, ষ্টেশনের পাথার দিকে চেয়ে ট্রেনের প্রতীক্ষা করা, এবং ট্রেনের ধোয় দেখা দিলে লাইনে পাথর সাজিয়ে রাখা, ঘুড়ি ওড়ান, এই সব । কিন্তু এবার থেকে আমার মস্ত একটা পরিবর্তন দেখা দিল,—মাছ, ঘুড়ি, ট্রেনের প্রতি পক্ষপাতিত্ব গিয়ে সমস্ত মনটি নমুনতারাদের মজলিসে, সয়নতারার,—বিশেষ ক'রে নয়নতারার আশ্চৰ্য্য চোখ দু'টিতে কেন্দ্রীভূত হয়ে উঠল । সে যখন তাস থেলত আমি তার সামনে কারুর পাশে একটু জায়গা ক'রে নিয়ে বসে থাকতাম । নয়নতারা তাস দিচ্ছে, পিঠ ওঠাচ্ছে ; তার চুড়িগুলি গড়িয়ে একবার মণিবন্ধের নীচে, একবার কচুইয়ের কাছে জড়াজড়ি ক’রে পড়ছে । কখন সে তার আনত চোখের ওপর ভ্র দুটি চেপে চিন্তিতভাবে মাথ৷ দোলাচ্ছে, তার কপালের কাচপোকার ময়ুরকষ্ঠী রঙের টিপটি ঝিকৃঝিক ক’রে উঠছে, আমি ঠায় বসে বসে দেখতাম । তখন ছিল কাচপোকার টিপের যুগ, এখন বেচারি আর সুন্দর কপালে ঠাই পায় মা, তার নিজেরই কপাল ভেঙেছে । -- আমি প্রতীক্ষা করতাম—জিতলে কখন নয়নতারার পান-পাওয়া ঠোঁটে হাসি ফুটবে ; হারলে সে যে আমার কাছের মেয়েটিকে চোখ রাঙিয়ে কটুমন্দ বলবে সে-দৃশুও আমার কাছে কম লোভনীয় ছিল না। একটা কথা আমি স্বীকার করছি,—আজি যে-ভাবে বয়সের দূরত্ব থেকে নয়নতারাকে দেখছি, সে-সব দিন যে ঠিক সেই ভাবেই দেখতাম তা নয় । তথন তার সমস্ত কথাবার্তা, চালচলন, হাসি-রাগ আমার কাছে এক মস্তবড় বিস্ময়কর ব্যাপার ব’লে বোধ হ’ত,—যে বিস্ময়ে মনের উপর একটা সন্মোহন বিষ্কার ক’রে মনকে টানে । এ-দিক দিয়ে দেখতে গেলে মনোবিজ্ঞানের নিক্তির ভৌগমত আমার মনোভাবটাকে ভালবাসা না ব'লে ভাল-লাগা বলাই উচিত ছিল । আমি ভালবাসা ব'লে যে স্বরু করেছি তার কারণ এর মধ্যে ঐ মনস্তত্বেরই পরখ-মত কিছু কিছু জটিলত ছিল, সে-কথা পরে যথাস্থানে বলব। “সেদিন ভাসের মজলিস ছিল না, একটা বই পড়া