পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sob-o. বলে নি ; দেখে ও ভ্যাবড়-ডাবড়া চোখ বের করে। পাচ বছরেরই হোক আর পঞ্চাশ বছরেরই হোক—বেটছেলেই ত? আমাদের চোখে কেমন লাগে তাই বলি ; থাকলেই বলতে হয়, তার চেয়ে না থাকাই ভাল বাবা । “সেদিন আডিডা আর জমল না । কয়েক জন খকুর সঙ্গে মতৈক্যের জন্যে গেল ; বাকী কয়েক জন কথাটা নিয়ে থানিকটা নাড়াচাড়া করলে, তার পর আকাশে মেঘের অবস্থা দেখে একে একে উঠে যেতে লাগল। আমার অবস্থা হয়ে পড়েছিল ন যযৌ ন তন্থেী ; আমাদের পাড়ার ননী উঠতে আমি কোন রকমে দাড়িয়ে উঠলাম । “ননী মেয়েটি ছিল অত্যন্ত চাপা । সে যে কোন দিন কোন দলে, টপ, ক’রে বোঝবার উপায় ছিল না। বোঝা যেত একেবারে শেষের দিকে, যখন সে নিজের নিৰ্ব্বিকারত্ব পরিহার ক’রে তার অভাসিত দলের একেবারে শেষ এবং মোক্ষম কথাটি বলে উঠে যেত। আমি উঠতেই বিস্মিতভাবে জিজ্ঞাসা করলে—তুইও যাচ্ছিস নাকি ?

  • বললাম—স্থ । “তা হ’লে দয়া ক'রে এগিয়ে যাও ; ভাব ক'রে সঙ্গে গিয়ে কাজ নেই—আমি তোমার ভাবের লোক নই। -- না-হয়, তুই পরেই আসিখন ; দিব্যি দু-চোখ ভরে দেখ না বসে বসে, আর ত কেউ বলবার রইল না—ব’লৈ চাবির খোলে-বাধা আঁচলট ঝনাং ক’রে পিঠে ফেলে হন হন ক’রে চলে গেল ।

“আমি খানিকট জড়ভরতের মত দাড়িয়ে রইলাম । ননী বেশ খানিকট চলে গেলে শচী বললে—মুয়ে আগুন, গোমড়ামুখী ! “শচীও চলে গেল । বৃষ্টি তখন থামো-থামো হয়েছে। আমি পা বাড়াচ্ছি, নয়নতারা বললে—ভিজে যাবি শৈল, একটু থেমে যা ; চল্‌, বাড়ীর ভেতর। “সেদিনটি আমার স্পষ্ট মনে আছে, আশা করি কখনও অস্পষ্ট হবে না। তখনও ভাল ক'রে বিকেল হয় নি, কিন্তু আকাশে গাঢ় মেঘের জন্যে মনে হচ্ছিল যেন সন্ধ্যার আর দেরি নেই। মজলিস যখন ভাঙল সে সময় রেলের ওপারে বনের আড়াল থেকে একটা আরও কালে মেঘের ঢেউ যেন মেঘলা আকাশটায় ভেঙে পড়ল, মনে হ’ল দিনটাকে অতি শীঘ্র রাত ক’রে তোলবার জন্তে কোথায় যেন মন্ত বড় তাড়াহুড়ো পড়ে গেছে। একটু পরেই ঠাও হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি নামল । “রেলের দিকে নয়নতারাদের দুটো ঘর, একটা বড়, একটা অপেক্ষাকৃত ছোট। নয়নতারা একটু এদিক-ওদিক ক’রে এসে রেলের দিকে জানলাটির চৌকাঠের পাশে বসল। প্রবণসী SNー88 আমায় বললে—তুই এইখানটায় বোস শৈল, ভাগ্যিস যাস নি, না ?

  • বললাম-ই্যা, ভিজে যেতাম । “জানলাটা দিয়ে অল্প অল্প বৃষ্টির ছাট আসছিল, নয়নতারা হঠাৎ গুটিমুটি মেরে একটু হেসে বললে—একটু একটু বৃষ্টি এসে গায়ে লাগলে কিন্তু বেশ লাগে, তোর ভাল লাগে ন শৈল ?

“বললাম—না, ভিজে যেতে হয় ।” রাধানাথ বলিল, “তখন তাহ’লে তোমার মাথায় একটু স্ববুদ্ধি ছিল বলতে হবে, এখন দেখছি...” শৈলেন বলিল, “স্কুল বলছ, তখন বৃষ্টিতে ভেজ। বরং একটা রীতিমত উৎসব ছিল আমার পক্ষে, কিন্তু সে-সময় যা বললাম তা শুধু নয়নতারার কথা ভেবে,—তার ভেজা দেথে আমার কষ্ট হচ্ছিল ।” তারাপদ বলিল, “এত দূর ?” শৈলেন বলিয়া চলিল—“নয়নতার ব’সে বসে অনেকক্ষণ ধ'রে বৃষ্টি দেখতে লাগল।.তার মুখের আধখানা দেখতে পাচ্ছি,—কি রকম অঙ্কমনস্ক হয়ে মুখটা একটু উচু করে ব'সে আছে, মুখটাতে একটা ছায় পড়েছে, বৃষ্টির ছাটের ছোট ছোট গুড়ি মুখের এখানে-সেখানে, চোখের কোকড়ান পাতার ডগায়, কপালের চুলে চিকচিক করছে । হঠাৎ কি ভেবে বললে—চার দিক মেঘে ঢেকে গেলে মনে হয় সববাই—যে যেখানে আছে—সব যেন এক জায়গায় রয়েছি, না রে শৈল ? “এখন মানে বুঝি, তখন একবারেই বুঝি fন ; তবুও এত তন্ময় আর অন্যমনস্ক ছিলাম যে কিছু না ভেবেই ব’লে দিলাম—হঁ্যা । “নয়নতারা বোধ হয় নিজের ঘোরে বলেছিল কথাটা, কোন উত্তরের অপেক্ষায় বা আশায় নয়। আমার দিকে একটু চেয়ে রইল। আরও খানিকক্ষণ চুপচাপের পর হঠাৎ জিজ্ঞাসা করিল—মেঘ তোর কেমন লাগে শৈল ? “সামান্ত যেন একটু কুষ্ঠ, তার পরেই বললে—মেঘ কালো কিনা, তাই জিজ্ঞেস করছি, বিদ্যুৎ বরং ঢের স্বন্দর••• -

  • আমি উত্তর দিলাম—বেশ লাগে মেঘ । “ঠিক মনে পড়ছে না, তবুও যেন বোধ হচ্ছে নয়নতারার চোখের তারা একটুখানির জন্যে কি রকম হয়ে গেল । হ’তে পারে এটা আমার আজকের সজাগ মনের ভুল বা অপস্থষ্টি, কিন্তু এই রকম বর্ষ পড়লেই সেদিনকার সেক্ট ছবিটি যখন ফুটে ওঠে, দেখি নয়নতারার চোথ চুটি যেন একটু নরম হয়ে উঠল ।

“একটু পরে আবার বললে—ক্ষণপ্রভা মানে বিদ্যুৎ— ঐ যে খেলে গেল-••খনীর নাম---