পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Utf=& বাসীরা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ছুটি জিনিষকে বেশী ভয় করে,—সাপ আর ভূত ; আর তাদের বিশ্বাস ওদিকে লিলুয়া আর এদিকে দমদমার পরে সমস্ত ভূভাগ এই দুই উপঞ্জবে ঠাসা । জক্ষয় যখন নিঃসন্দেহ হ’ল যে এটা বাড়ীর কারুর ঠাট্ট নয়, তখন তার আর সন্দেহ রইল না যে সমস্ত ব্যাপারটা একেবারে ভৌতিক । সে রাতটা নিরুপায়ভাবে কোন রকমে কাটালে এবং তার পরদিন দুপুরে—অর্থাৎ রাত্রি হবার এবং তার সঙ্গে সেই উৎকট রকম ঠাট্রাপ্রিয় অশরীরীর আবির্ভাব হওয়ার ঝাড়া পাচ-ছয় ঘণ্টা পূৰ্ব্বে সে বেচারি হাবড়-মুখো গাড়ীতে গিয়ে বসল। “সেদিন আমি ওদিকে যেতে পারি নি—শেতল-তলায় যাত্রার আসরের জন্তে কাগজের শেকল তৈরি করতে ধ’রে নিয়ে গেল । “তার পরের দিন কিছু সকালেই আমি বিজয়ী বীরের মত গিয়ে নয়নতারাদের বাড়ীতে উপস্থিত হলাম । সে নিশ্চয়ই সমস্ত রাত নিরুপঞ্জবে ঘুমিয়ে এতক্ষণ উঠেছে। এইবার গিয়ে তার ত্রাণকৰ্ত্ত যে কে সেটা জানিয়ে বিস্ময়ে, আলাদে, কৃতজ্ঞতায় তাকে অভিভূত ক’রে ফেলতে হবে। “গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার নিজেরই বিস্ময়ের সীমা রইল না।—পুকুরঘাটের শেষ রাণাটিতে, মুখ ধোওয়ার জন্তে বঁ-হাতে খানিকটা ছাই নিয়ে নয়নতারা নিঝুম হয়ে বসে আছে। চুল উৰুখুৰ, মুখটা খুব গুৰূলে, চোখ দুটাে ফুলে-ফুলে আর রাঙা । “আমি গিয়ে বসতে একবার ফিরে দেখলে, তার পর চিবুকটা হাটুর ওপর রেখে, চোখ নীচু ক'রে বসে রইল। “প্রথমটা মনে হ’ল অক্ষয় সব আক্রোশ নয়নতারার উপর মিটিয়ে গেছে। কি ভাবে ধে একটা কথা জিজ্ঞাসা করব ঠিক ক'রে উঠতে পারছিলাম না। চেয়ে আছি, হঠাৎ দেখি তার দু-চোখ বেয়ে ঝর ঝর করে জল নামল । জাশ্চর্য্যের ভাবট চাপতে না পেরে বলে উঠলাম-কাদছ যে তুমি ! —কাদছ কেন ? “—ঘা, কাদছি কোথায় ? —ব'লে নয়নতার স্বাচল তুলে চোখ দুটো মুছে ফেললে । একবার, দু-বার, তার পর বাধভাঙা বঙ্গার মত এত জোরে অশ্র নামল যে আর জঁাচল সরাতে পারলে না, চোখ ছুটে চেপে ধ'রে বসে রইল। প্ৰৰণসী ১৬৪৪ একটু পরেই ফোপানির জাওরাজের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত শরীরটা স্কুলে স্কুলে উঠতে লাগল । “খানিকক্ষণ এইভাবে গেলে বেগট ধর্থন কমে এল, স্বাচলের মধ্যে থেকেই কান্নার ভাঙা ভাঙা স্বরে বললে— জত কাকুতিমিনতি করে, মিথ্যে অস্থাখের কথা লিখে নিয়ে এলাম শৈল, মার খেয়ে গেল ! কে মারলে বল ছিকিম ? —কার কি করেছিল সে ?— নিরীহ, নির্দোষ মানুষ... “অরি বলতে পারলে না, ভেঙে পড়ল । “ঠিক সেই সময়টিতে নয়নতারার কান্নার মধ্যে বিনিয়েবিনিয়ে কথাগুলো শুনে, এবং কতকটা নিজের অপরাধের জ্ঞানের জন্তেও আমিও কায়াটা থামাতে পারলাম মা বটে, কিন্তু সেই দিনত কোন একটা সময় থেকে, নয়নতারার এই রকম পক্ষপাতিত্বের জন্তে অক্ষম্বের উপর বিদ্বেষ আর হিংসার ভাবট। একেবারে উৎকট হয়ে উঠল । ছেলেবেলার চিস্তাগুলো ঠিক গুছিয়ে মনে আসে না, অন্ততঃ যা মনে আসত তা এত দিনের ব্যবধান থেকে গুছিয়ে বলা ধায় না : শুধু মনে পড়ছে এই পক্ষপাতিভের জন্তে-যেটা নিছক নয়নতারারই দোষ—আমি নয়নতারার উপর না চটে চটলাম অক্ষয়ের উপর । লোকটাকে যে নয়নতারা আসবার জষ্ঠে সত্যিই কাকুতিমিনতি ক’রে লিখেছিল—প্লাটফমে আছাড় খাওয়াবার অভিপ্রায়ে যে ডাকে নি—তাকে যে নয়নতার নির্দোষ বলে--এই সব হ’ল অক্ষয়ের অমার্জনীয় অপরাধ ; আর সবচেয়ে বড় অপরাধ হ'ল তার বিবাহ করাটা, যার জন্তে সে তাকে কাকুতিমিনতি ক’রে ডেকেছে, আর আমি অত কষ্ট ক'রে তার মাথা ফাটালে তাকে নির্দোষ বলেছে, তাঁর জন্মে চোখে জল ফেলেছে।” শৈলেন চুপ করিল। তারাপদ প্রশ্ন করিল, “তোমার গল্প শেষ হ’ল নাকি ? উপসংহার কোথায় ?” শৈলেন বলিল, “ভালবাসা ত গল্প নয় যে উপসংহার থাকবে,—বইয়ের দুটি মলাটের মধ্যে ভায় জাদি-অস্ত মুড়ে রাখা যাবে । তবুও যদি ভালবাসাকে গল্প-উপন্যাসের সঙ্গেঃ তুলনা কর তো বলা যায় তার উপসংহার নেই,অধ্যায় আছে : সে কোন এক অনির্দিষ্ট সময়ে একবার জারম্ভ হয়, তfণ পর অধ্যায়ের পর অধ্যায় স্বাক্ট করে তার অফুরন্ত গতি " "

  • সে সময়ের অধ্যায়টিই না-হয় শেষ কর।”