পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অলখ-ঝোরা শ্রশাস্তা দেবী ૨ છે রাত্রির অন্ধকারে একলা স্থধার কাছে আপনার মনের কথা বলিয়া হৈমন্ত্ৰী বুঝিতে পারে নাই দিনের আলোতে পাচ জনের সম্মুখে একথা ভাবিতে তাহার কি রকম লাগিবে। পরদিনই মিলির বিবাহ । চারিদিকে মহা বাস্ততা ; হৈমন্ত্ৰীও যে কিছু কম ব্যস্ত ছিল তাহ নয়। কিন্তু আজ তাহার স্বধ তপন মহেন্দ্র সকলের সম্বন্ধেই মনে একটা প্রবল সঙ্কোচ আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। ইচ্ছা করিতেছে বিবাহ-উৎসব ফেলিয়া দিন কত্তকের মত কোথাও পলাষ্টয়া যায় । কিন্তু সে উপায় ত নাই। যথাসম্ভব দূরে দূরে থাকিয়াই কোন রকমে তাহাকে দিনট কাটাইতে হইবে । ছেলেদের অবস্থা ঠিক সে রকম না হইলেও সকলেই আগের দিনের তুলনায় একটু যেন সঙ্কুচিত। নিখিল তপনের নিকট সঙ্কুচিত, তপনও স্বধী হৈমন্তীকে যথাসাধ্য এড়াইয়া চলিতেছে, পাছে নিখিল তাহার কোন ব্যবহার কি কথায় বিশেষ কিছু অর্থ ভাবিয়া বসে, পাছে সে মনে করে ষে তপন তাড়াতাড়ি আপনার পথ পরিষ্কার করিয়া লইতেছে । মহেন্দ্রও রাগে এবং অভিমানে আজ কয়দিনই একটু বেশী গষ্ঠীর হইয়া থাকিতে চেষ্টা করিতেছে। সুধা ত মনে করিয়াছিল সকালবেল উঠিয়াই সে বাড়ী চলিয়া যাইবে। সেখানে নির্জনে নিজের মনের সঙ্গে ষ-হয় একটা বোঝাপড়া তাহাকে কুরু করিতে হইবে। কিন্তু আজ মিলিদিদির বিবাহ। আজ বাড়ী চলিয়া গেলে লোকে তাহাকে বলিাব কি ? সে কি কৈফিয়ৎ দিয়াই বা বাড়ী যাইতে পারে ? বাড়ীতে অকস্থাৎ অঘটন ত কিছু ঘটে নাই। তাছাড়া এখানে সে আজ অনেক কাজের ভার লইয়াছিল, সে সব কাজই বা কাহার ঘাড়ে ফেলিয়া দিয়া যাওয়া যায় ! তাহাকে আজ সকলের সঙ্গে মিলিয়া হাসিমুখেই সমস্ত কর্তব্য ও আনন্দকোলাহলে যোগ দিতে হইবে। মনের একটা দিকে b>8ー>> একেবারে চাবি বদ্ধ করিয়া উৎসবের মাঝখানে তাহাকে নামিতেই হইবে । কিন্তু একই বাড়ীতে যাহার সহিত প্রত্যেক কাজেই দেখা হইবে তাহাকে সম্পূর্ণ ভুলিয়া থাকিবে সে কি করিয়া ? চোখ বুজিয়াও যাহাকে স্বধ দেখিতে পায়, চোখের সম্মুখে তাহাকে দেখিয়া কে ভুলিয়া থাকিতে পারে । তপনের গ্রীক দেবতার মত স্বন্দর মুখচ্ছবি তাহার মানস দর্পণে যে অঙ্কিত হইয়া গিয়াছে। তপন কি আশ্চর্ধ্য মৃন্দর । স্বধার মতই আর পাচ জনের যদি তপনকে ভাল লাগিয়া থাকে তাহাতে বিম্বিত হইবার কিছু নাই । সুন্দরকে কাহার না ভাল লাগে ? মানুষ ত রূপের চাবি দিয়াই মানুষকে প্রথম যাচাই করে। পরিচয় পাইবার আগেষ্ট মানুষের চোখ অপরের একটা মূল্য নির্ধারণ করিয়া রাখে ইহারই সাহায্যে। স্বধাও কি তাহাই করিয়াছে । শুধু রূপের মোহেই কি সে এমন করিয়া আপনাকে জড়াইয়া ফেলিয়াছে ? নিজের সম্বন্ধে একথা ভাবিতেও তাহার মাথা হেঁট হয় । যদি ইহা সত্য হয় তবে আপনার এ-মোহ সে চুৰ্ণ করিয়া চোখের জলের সহিত বিসর্জন দিবে। স্বধা আপনাকে পরীক্ষা করিবার জঙ্ক নীরবে আপনার মনেই নানা উপায় খুজিতে লাগিল। সে ভাবিতে চেষ্টা করিল যেন কোনও ভয়াবহ রোগে তপনের ঐ দেবকান্তি কালিমাময় হইয়া গিয়াছে, যেন আকস্মিক অগ্নির উৎপাতে তপনের মুগ্ধই আর মামুষের চিনিবার উপায় নাই । তখনও কি স্বধা এমনই করিয়া ঐ বিগতঐ তপনের ধ্যান করিতে পারিবে ? শঙ্কিত হইয়া স্থধার মন যেন 'না'! 'না' বলিয়া উঠিল। ষে-তপন তপনই নয়, সম্পূর্ণ অন্ত মহিষ, তাহাকে কি করিয়া সে আমন করিয়া ধ্যান করিতে পারে ? কিন্তু তখনই লজায় ধিকারে তাহার মন ভরিয়া উঠিল।