পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মেঘকন্যা ঐদীনেশ মুখোপাধ্যায় আকাশে আজ একটুও মেঘ নেই। রজনীগন্ধার মত শ্বেতশুভ্র আকাশ দিগন্তের সীমাহীন আঙ্গিনায় গেছে ছড়িয়ে । কাল-রাত্রির মত দুর্ধ্যোগময়ী বর্ষার উত্তেজনা গেছে থেমে—ল্লোহল হয়েছে নিস্তব্ধ, ঝড়ের হাওয়ায় এসেছে যবনিকা। বর্ষাস্বাত আকাশ এখন শাস্ত শিশুর মত ঘুমিয়ে আছে। স্বকুমারের ভাল লাগছে । আজ তার ভাল লাগছে এই জাকাশ, এই নিৰ্ম্মল প্রশাস্তি আর এই লাবণ্যময় পরিপূর্ণ স্বচ্ছতাকে। বর্ধাকে সে ভয় করে—শুধু ভয় নয়, তার সমস্ত দেন্তু যেন কঁপিতে থাকে এক দীর্ঘ বিভীষিকায়, এক রহস্যময় অসহায়তায় । বর্ষ যেন নিয়ে আসে ওল্প কাছে এক তীক্ষ যড়যন্ত্র--মাকড়সার জালের মত দুর্ভেদ্য জালে ও যায় আটকে । বর্ষার মধ্যে সে দেখতে পায় এক প্রলয়ের প্রতিরূপ–এক প্রচও বিপ্লবের সমস্ত ইতিহাস যেন লুকিয়ে আছে ঐ বর্ষার মধ্যে। আজ আকাশে এক ফোটাও জল নেই। তাই ওর অাজ ভাল লাগছে । কিন্তু কল্যাণীকে স্বকুমার কিছুতেই ভুলতে পারে না। কত দিন কত ভাবে কত দিক দিয়ে সে চেয়েছে ওকে ভুলতে, নিঃশেষে মুছে ফেলতে মন থেকে—পারে নি। স্বকুমারের চোখের সম্মুখে ফুটে ওঠে কল্যাণীর কাজল-পরা কালে বিশাল ছুটি চোখ আর শরতের শেফালির মত শীতল, সুন্দর একটি মুখ । সে মুখের মধ্যে একটি উদার স্বাচ্ছন্দ্য সে আজও দেখতে পায়। বর্ষাই ছিল কল্যাণীর সব চেয়ে প্রিয়, সব চেয়ে আদরের। আকাশে ৰখন দেখা দিত মেঘের কোলাহল, চার দিকে যখন ভরে উঠত অগুস্তি মেঘ-ঢেউ, কালো কালে টুক্ষরে টুকরো মেঘমালা যখন আকাশের গায়ে জনতা স্বষ্টি করত, তখন কল্যাণী হুকুমারকে বলত—দেখছ কেমন আকাশ। বৃষ্টি হবে খুব, না ? -ईrां । হাততালি দিয়ে ছোট মেয়ের মত নাচতে নাচতে মাথা দুলিয়ে গ্রীবা বঁrকিয়ে কল্যাণী বলত—চমৎকার হবে। আচ্ছ এমনি দিনেই হয়ত উজয়িনীর কবি মেঘদূত লিখেছিলেন । না ? স্বকুমার বলত—ই্য গো ইা । এমনি এক উদার বর্ধার রাতে বোধ হয় কবি লিখেছিলেন মেঘদূত। হুকুমারের পাশে ব'সে পড়ে কল্যাণী বলে—আচ্ছ, কালিদাসের প্রাণেও কি আমনি বিরহ জেগেছিল ? না জাগলে কেমন ক’রে লিখলেন তিনি এত বড় এক জীবন্ত কাব্য । মুকুমার বললে—উত্তর ত তুমিই দিলে। ঐ দেখ বৃষ্টি এসে গেছে। জাম-কাপড় কি সব রয়েছে ছাদে । নিয়ে এস, না-হয় ডাক কাউকে । কল্যাণী মুখ ভার করে বললে – না, থাক না, ভিজুঞ্জ একটু। এমন মিষ্টি ঠাণ্ড বর্ষ । ভিজুক না একটু রোদ এলে আপনিই শুকিয়ে যাবে আবার । কিন্তু এই বর্ষ। চলে গেলে হয়ত আর আসবেই না । —আসবে, সুকুমার ক্লান্ত স্বরে বললে, আসবে গো আসবে। বর্ষার চোটে রাস্তায় বেরোনই যাচ্ছে না। চার দিকে জল থৈ থৈ করছে। —কি চমৎকার, কল্যাণী বললে, আঃ । জামায় নিয়ে চল না একটু। —কোথায় ? চাপাফুলের মত কোমল ছুটি পা ছুলিয়ে, একটু চোখ বুজে কল্যাণী বলত ; রাস্তায়—রাস্তায় যাব। জলে ভিজতে আমার ভারী ভাল লাগে। –এই ত সেদিন সবে জলে ভিজে জর থেকে উঠলে— चोवांद्र ! কল্যাণী জমল না। বেপরোয়া ভাবে বললে—জর ত