পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

مبسونوميديا প্রবণসী @N888 করিবেন তাহাকে সৰ্ব্বপ্রথমে কৃষকের ঋণ পরিশোধ এবং সঙ্গে সঙ্গে তাহার আয়ুবুদ্ধির উপায় নিৰ্দ্ধারণ করিতে হইবে । আল্পবৃদ্ধি না হইলে ঋণপরিশোধ হইতে পারে না, তবে যদি গবর্ণমেণ্ট কৃষকের সমস্ত ঋণভার নিজের স্কন্ধে গ্রহণ করিয়া তাহাদিগকে অব্যাহতি দেন সে স্বতন্ত্র কথা । কিন্তু আণ্ড তাহার সম্ভাবনা নাই। বৰ্ত্তমানে কৃষকের ঋণভার লাঘব করিবার জন্য যে আইন করা হইয়াছে তাহাতে কাগজপত্রে লঘুতার পরিচয় পাইব, কিন্তু যতই লঘু স্টকস ক্লাক তাহাও দিয়া উঠিতে পরিবে না। যদি তাহীদের আশু আয়বৃদ্ধির উপায় করা হয় তাহা হইলে হয়ত ক্রমে ক্রমে বহু বৎসরে তাহারা ঋণমুক্ত হইতে পারে। কিন্তু ইহাদের আয়ুবুদ্ধির উপায় কি, ইহাই বিবেচ্য। ইংরেজ আমলের পূর্ব হইতে নানা স্থানে বাংলায় যেসকল কুটরশিল্প ছিল তদ্বারা বহু লোক অল্পসংস্থানের উপায় করিত ; কিন্তু কুটারশিল্পের উচ্ছেদসাধনের পর ঐ শ্রেণীর লোকের বাধ্য হইয়া কৃষিকৰ্ম্মে নিযুক্ত হইয় পড়ে। ফলে ভূমির উপর অধিক মাত্রায় চাপ পড়ায় কৃষিজনিত আয়েরপতি ও অপ্রচুর হইয়াপড়িয়ছে, অর্থাৎ জমির উপর প্রয়োজনীতিরিক্ত লোক নির্ভরশীল হইছে । যে-ভূমিখণ্ড চাষ করিয়া একটি লোক স্বচ্ছন্দে খাইয়া-পরিয়া থাকিতে পারিত, তাহা এখন হয়ত তিন-চার জনে চাষ করিতেছে। স্বতরাং সকলের দৈন্যদশা উপস্থিত। স্বতরাং কৃষিকাৰ্য্য দ্বারা যাহাঁদের গ্রাসাচ্ছাদনের উপযুক্ত সংস্থান হইতেছে না অথবা হইবার সম্ভাবনা নাই, তাহাদিগকে এই বৃত্তিতে নিরস্ত করিয়া শিল্প ও বাণিজ্যে অর্থোপীজনের সুযোগ করিয়া দিতে হইবে। অর্থাৎ দেশে কুটীরশিল্প অথবা বৃহৎ কলকারখানা প্রতিষ্ঠিত করিয়া নিরল্প লোকদের অর্থাগমের উপায় করিয়া দিতে হইবে। কিন্তু ইহা বহুব্যয়সাধ্য ব্যাপার। বর্তমানে রাজকোষে ইহার জন্য অর্থ নাই । . কর্ষণযোগ্য ভূমির পরিমাণ ক্রমশঃ খরিদ বিক্রয় বা উত্তরাধিকারসূত্রে ক্ষুদ্র হইতে ক্ষুদ্রতর হইয়া আসিতেছে। ইহা নিরোধ করিতে হইবে। যাহাকে অর্থনীতিবিদগণ বৃহৎ ইকনমিক হোল্ডিং বলেন, তাঁহারই স্বজনের চেষ্টা করিতে হইবে । ইহাও বহুব্যয়সাধ্য ব্যাপার, কেবলমাত্র আইনের প্রচলন দ্বারা হইতে পারে না। বৈজ্ঞানিক প্রণালী অবলম্বন করিয়া কৃষিজ ফসলের উৎকর্ষ সাধন ও পরিমাণ বৃদ্ধি করিতে হইবে । ইহাও ব্যয়সাধ্য ব্যাপার। " অবশেষে কৃষকগণ ধাহাতে উৎপন্ন ফসলের উচিত মূল্য প্রাপ্ত হয় তাহার ব্যবস্থা করা সৰ্ব্বাগ্রে কৰ্ত্তব্য । অনেকে মনে করেন, রাষ্ট্রবিধানে শস্যাদির মূল্য ইচ্ছাস্বরূপ নিয়ন্ত্রিত করা সম্ভবপর নহে। কিন্তু বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রনীতিজ্ঞ বা অর্থনীতিবিশারদগণ এইরূপ নিয়ন্ত্রণের পক্ষপাতী। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষগণ সমস্ত সমুদ্ধিশালী দেশেই পণ্যপ্রব্যের মুল্য হ্রাসবৃদ্ধির জন্য সময়োচিত নীতি অবলম্বন করিয়া থাকেন। তবে এই নীতি র্তাহারা অবলম্বন করেন হয় অংশীদারগণের লভ্যবৃদ্ধির উদ্দেহে, না-হয় রাজকোষের অর্থের সমতা-সামঞ্জস্য বা রাজস্ব-বুদ্ধির উদ্দেণ্ডে । পণ্য-উৎপাদনকারীদের স্বার্থরক্ষার জন্যও এই নীতি অবলম্বিত হইয় থাকে । বাংলার মন্ত্রিগণ এই দিকে একটু চেষ্টা করিয়া দেখিতে পারেন এবং কি প্রকারে তাঁহা সম্ভব বা কাৰ্য্যকরী হইতে পারে তাহা আলোচনা করিতেছি । পাট বাংলার একচেটিয়া কৃষিজ পণ্য। ইহার চাহিদ। ভারতবর্ষের বাহিরেও ষথেষ্ট । ইহার রপ্তানী-গুদ্ধের উপর কেন্দ্রীয় গবর্ণমেণ্টের লোলুপদৃষ্টি এখনও সম্পূর্ণরূপে অপসারিত হয় নাই। আমার প্রস্তাব এই : গবর্ণমেণ্ট বিশেষ আইনের বলে বাংলার সমস্ত উৎপন্ন পাট ক্রয় করিয়া কলিকাতা, নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ প্রভৃতি স্থানে সরকার-নিৰ্ম্মিত গৃহে গুদামজাত করিয়া রাখুন এবং কেবলমাত্র কৃষকের হিতার্থে উহা উচিত মূল্যে চটকলের মালিকদের এবং ঐ পণ্যের বহির্বাণিজ্য-ব্যবসায়ীর নিকট বিক্রয় করুন। বিক্রয়লব্ধ অর্থ গবর্ণমেণ্টের দ্যাধ্য খরচ বাদে কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করিয়া দেওয়া হউক। এই বৃহৎ ব্যাপারে বহু বেকার শিক্ষিত যুবকের অল্প-সংস্থান হইবে এবং পাটচাষীরাও উচিত মূল্য পাইয়া রক্ষা পাইবে। হক-সাহেব এই একটিমাত্র কার্ধ্যে হস্তক্ষেপ করিয়া দেখুন না সত্য সত্যই ডালভাডের ব্যবস্থা তিনি করিয়া উঠিতে পারিবেন কি না ।