পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আণশ্বিন প্রাণ ভরিয়া উপভোগ করিবার অধিকার সকলেরই আছে। কিন্তু মহানগরী যেন রূপকথার বিমাতা, ধনীরা তাহার নিজের সন্তান, দরিদ্রের সঙ্গে তাহার সতীন-পুত্রের সম্পর্ক। কোনও মতে স্বধাচ্ছলে বিষ পান করাইয় তাহীদের শেষ করিয়া ফেলিতে পারিলেই রাক্ষসী বঁাচে । পিঠের উপর দীর্ঘ ভিজা চুলের রাশি মেলিয়া দিয়া, রান্নাঘরের দাওয়ায় বসিয়া মৃণাল তরকারি কুটিতেছে । মামীম এক হাতে কত আর করিবেন ? তাহার উপর দুরন্ত থোকাটা তাহার কোলে, তাহাকে সামলাইয়া তবে তাহাকে কাজ করিতে হইতেছে। রাধী ঝি নীচু জাতের, বাহিরের কাজ, গোয়ালের কাজ ছাড়া তাহাকে আর কিছু করিতে দেওয়া হয় না। খোকাণ্ড আবার পরম রুচিবাগীশ, পারতপক্ষে রাধীর কোলে সে মাইতে চায় না । মামৗম রান্নাঘর হইতে ভাকিয়া বলিলেন, “ও মা মিঠু, ঝোলের তরকারিট নিয়ে আয়, চড়িয়ে দিই, বেলা হয়ে গেল।” রৌদ্রের তেজ ক্রমেই বাড়িয়া উঠিতেছে, কুয়াসার শেষ চিহ্নটুকুও মুছিয়া যাইতেছে। এখন গাছের মাথায় বঁাশঝাড়ের উপরে পাতলা রেশমের ঘোমটার মত কুয়াসার টুকরা দেখা যায়, থানিক বাদে তাহাও আর থাকিবে না। বাহিরে হুড়মুড় করিয়া একটা শব্দ হইল, সঙ্গে সঙ্গে চীৎকার, “হ, হ ।” চিনি ভাকিয়া বলিল, “দিদি তোমার গাড়ী এসে গেছে।” মামীম উত্তরে রান্নাঘর হইতে উচ্চকণ্ঠে বলিলেন, “ধা ত চিনি, সিধুকে বলগে যা এখন গরু খুলে দিতে। দিদির এখনও খাওয়া হয়নি, কাপড় পড়া হয়নি, তোর বাবা এখনও বাড়ী ফেরেন নি। এখনও ঘণ্টাখানিক দেরি অাছে।” চিনি ঘাড়টা এ-ধার হইতে ও-ধারে দোলাইতে দোলাইতে বলিল, “উহু, আমি যাব না ত।” মামীম বিরক্ত হইয়া বলিলেন, “কেন যাবি না লা ? ধাড়ী মেয়ে, একে দিয়ে যদি একটু সাহাৰ্ষ্যি হয়। ও বয়সে জামরা ঘর-করনার কত কাজ করেছি।” মাটির বাস। b*RNలి চিনি বলিল, “স্থ, আমি যাই, জার উ আমার জায়গাটি নিয়ে নিক * মৃণাল হাসিয়া বলিল, “থাক গে মামীম, তুমি ওদের ব’কে না এখন, নিজের নিজের সাম্রাজ্য রক্ষা নিয়ে ওরা ব্যস্ত আছে। আমি সিধুকে বলে আসছি। কামুকে দাও ত আমার কাছে, ওটা ত তোমায় জালিয়ে মারল ।” থোকার দিদির কাছে যাইতে কোনও আপত্তি ছিল না, সে হাত বাড়াইয়া চলিয়া গেল। - مايوبم سید مجته বাহিরে খোলা মাঠের উপর সিধু গাড়ী আনিয়া দাড় করাইয়াছে। অতি সাধারণ ছই-দেওয়া গরুর গাড়ী। গ্রামে অন্ত কোনপ্রকার যানের ব্যবস্থা নাই। পাশের গ্রামটি বদ্ধিষ্ণু, সেখানে নাকি একখানা ঘোড়ার গাড়ী আছে । এ গ্রামেও বেশী পর্দানশন বউ-ঝি কেহ আসিলে বা গেলে সেই গাড়ীখানিরই ডাক পড়ে। কিন্তু মৃণালের পর্দার বালাই নাই, এই গরুর গাড়ীতেই তাহার চলিয়া যায়। ইটিয়া যাইতেও তাহার আপত্তি ছিল না, তবে সঙ্গে মোটঘাট থাকে এই যা। মৃণালকে ছেঞ্জি-সিন্ধু নিজেই জিজ্ঞাসা করিল, “আর কত দেরি গো দিদি ট্র গরুদুটাকে খুলে দিব ?” * - মৃণাল বলিল, “তাই দাও, এখনও দেরি অাছে ঘন্টখানিক ।” সিধু গরু-দুইটাকে মুক্তি দিল, দুই অঁাটি খড়ও ছড়িা দিল তাহাদের সামনে । গরু দেখিয়া কামুর বীরত্বের অনেকখানিই লোপ পাইয়াছিল, সে দিদির ঘাড়ে মুখগুজিয়া ছিল। মৃণাল তাহাকে লইয়া ঘরের ভিতর চলিয়া আসিল । নিজের জিনিষপত্রের উপর আর একবার চোখ বুলাইয়া লইল। না, আর কিছু করিবার নাই। সবই গোছানো আছে। মল্পিক-মহাশয় বাহিরে গিয়াছিলেন, এই সময় কচুপাতায় মুড়িয়া কিছু টাটকা চুনো মাছ লইয়া ফিরিয়া আসিলেন। গৃহিণীকে ডাকিয়া বলিলেন, “বড় মাছ কিছু পাওয়া গেল না গো, এই ক'টিই তেঁতুল দিয়ে টক ক'রে দিও, বেশ হবে * ' মৃণালের মামীম রান্নাঘর হইতে বাহির হইয়া আসিয়া