পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অণশ্বিন মৃণাল হাসিয়া বলিল, “কিছু দরকার নেই মামীম । এই ত পেট ভরে খেলাম, আর বিকেলবেলায়ই ত পৌঁছে ষাব, আবার কখন খাব ? আমি ত আর টিনি নয় যে আধ ঘণ্টা অস্তর না খেলে মারা যাব ?” মল্লিক-মহাশয় চাদর গায়ে দিয়া বাহির হইয়া আসিলেন, তিনি ভাগ্নিকে ট্রেনে তুলিয়া দিয়া আসিবেন । ষ্টেশন মাষ্টারের এক বোন এই ট্রেনে কলিকাতা যাইতেছেন, কাজেই ষ্টেশন পৰ্য্যস্ত পৌছাইয়ু দিলেই তিনি নিশ্চিন্ত । মামীমাকে প্রণাম করিয়া, ভাইবোনদের আদর করিয়া মৃণাল গাড়ীতে উঠিয়া বসিল । মূখটা অন্য দিকে ফিরাইয়৷ রাখিল, যাহাতে চোখের জল কেহ না দেখিতে পায় । পনর বৎসর বয়স ছাড়াইয়া গেল, এখনও প্রতি ছুটির শেষে বোডিঙে ফিরিতে তাহার দুই চোখ জলে ভরিয়া উঠে। চিনি ডাকিয়া বলিল, “এবার আসবার সময় ভাল দেখে বেশ ক'রে চকোলেট নিয়ে এস।” তাহার মা তাড়া দিয়া বলিলেন, “হ্যা, তা আর নয়, দিদি একেবারে টাকার ছালার উপর বসে আছে, তোমাদের জন্তে বাঙ্গ ভ'রে মিষ্টি নিয়ে আসবে।” গ্রাম্য পথে ধূলা উড়াইয় গরুর গাড়ী চলিতে লাগিল। মৃণাল খানিকক্ষণ মুখ ফিরাইয়া লইল, তাহার পর জোর করিয়া আত্মসম্বরণ করিয়া চোখ মুছিয়া ফেলিল। বাড়ীর দিকে তাকাইয়া দেখিল, মামীম। তখনও কামুকে কোলে করিয়া বাহিরের দাওয়ায় দাড়াইয়া আছেন। চিনি-টিনি অদৃপ্ত হইয়া গিয়াছে। দু-ধারে অতি-পরিচিত খড়ের ঘরগুলি, আঙ্গিনায় ধূলিমলিন-দেহ বালকবালিকার নৃত্য, ছোট সঙ্গীতমুখর নদীটি, সব একে একে পার হইয়া গেল। ছোট গ্রাম্য বাজারের ভিতর দিয়া এখন গাড়ী চলিতেছে। দুই ধারের পধিক উংস্থক-দৃষ্টিতে চাহিয়া দেখিতেছে গাড়ীর ভিতর কে ধায় । সকলের আসা-যাওয়া সম্বন্ধে এখানে সকলের কৌতুহল, পল্লীসমাজ যেন একটি বৃহৎ পরিবার, কেহ কাহারও অচেনা, অজানা নয় । ক্রমে গাড়ী আসিয়া ষ্টেশনের বাহিরে দাড়াইল । একটি লাল পাথরের ঘর, একটা টিমের শেড, আর লাল কাকর-বিছানো প্রকাও প্লাটফৰ্ম্ম । গোটা-দুই বড় বড় } a e ~ মাটির বাস। جمع جلأسوا অশ্বখ গাছ চারিদিকে ডালপালা ছড়াইয় অনেকখানি জায়গা ছায়াশীতল করিয়া রাখিয়াছে, তাহারই তলায় যাত্রীর দল আডড গাড়িয়াছে। এক জায়গায় একখানি লোহার বেঞ্চ, ষ্টেশন মাষ্টারের বোন সেইখানে নিজের ছেলেমেয়ে লইয়া বসিয়া আছেন। ঘরের ভিতর বড় গরম, পাখার কোনও ব্যবস্থা নাই, কাজেই পারতপক্ষে সেখানে কেহই বসে না। মুণালকে দেখিয়া তিনি ডাকিয়া বলিলেন, “এইখানে এস, তবু একটু ছায়া আছে।” امه سیاسی به" মৃণাল আসিয়া তাহার পাশে বসিল। বলিল, “গাড়ী আসতেও ত আর বেশী দেরি নেই ।” ভদ্রমহিলা বলিলেন, “এই এসে পড়ল ব'লে। এখন একরাশ পোটলাপুটলি উঠলে বাচি ” ট্রেন সত্যই আসিয়া পড়িল । মৃণাল মামাবাবুকে প্রণাম করিয়া গাড়ীতে উঠিয়া গেল। এক মিনিট পরেই ট্রেন ছাড়িয়া দিল । ( 8 ) কলিকাতা পৌছাইতে প্রায় বেলা গড়াইয় গুেল-ইত কালের দিন,চারিট বাজিতে-না-বাজিতে যেন দিনের আলো - স্নান হইয়া আসিতে থাকে । তাহার পর নামিয়া আসে নগরের উপর ধোয়ার পর্দা, দুই হাত দূরে মাত্র মানুষের দৃষ্টি চলে, রাস্তার আলোম্বন্ধ ঘোলাটে দেখাইতে থাকে। মন মুষড়িয় পড়ে, নিঃশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে বুকের ভিতর এক অঞ্জলি করিয়া যেন কয়লার গুড়া ঢুকিয়া যায়। মৃণাল ষ্টেশনে নামিয়া বলিল, “আমি কি জাজ আপনাদের সঙ্গেই যাব, না আমাকে বোর্ডিঙে পৌছে দিয়ে আসতে পারবেন ?” তাহার সঙ্গিনীর মৃণালকে বাড়ী পৰ্য্যন্ত টানিয়া লইয়া যাইবার বিশেষ ইচ্ছা ছিল না। র্তাহার অতি ছোট বাড়ী, শুইবার ঘর মাত্র একখানি। বাহিরের লোক আসিলেই বিপদে পড়িতে হয়। পুরুষ-অতিথি হইলেও না-হয় তাহাকে যেখানে সেখানে গুইতে দেওয়া যায়, কিন্তু এ ষে আবার স্ত্রীলোক ! তিনি একটু অনাবশ্বক ব্যস্ততার সঙ্গেই বলিলেন, “তোমাকে উনি পৌঁছেই দিয়ে আমুন ভাই, আমি খোকার