পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b"?W。 প্রবাসী SN?88 একদিন সে অতি দুঃখের সঙ্গেই নিমাইকে বলিয়াছিল— তোমাদের মত আমার একটা ভাল উকুন নাই—রান্না করতে এমন কষ্ট হয়! তৈরি করতে জানি নে তা কি করব ! কেউ যদি তৈরি ক'রে দিত ত বড় ভাল হ’ত । পয়সকড়ি ত দিতে পারব না, তবে একবেলা জন খেটে দিতাম। দু-পহর আড়াই পহুরের সময় খেটে খুটে ফিরি, খিদেয় পেট টো চো করে একে তার ওপরে উচুনের জন্যে রান্নার দেরি ...এই কথার পর নিমাইয়ের অনুমতিক্রমে চন্দ্ৰলেখা গিয়া বংশীর উনান তৈরি করিয়া দিয়া আসিয়াছিল এবং সেই হইতে অনেক সময় নিমাইমের অনুমতির অপেক্ষা না করিয়া এই অপটু লোকটির বহু কাজ-কৰ্ম্ম সে করিয়া দিয়া যাইত। আজ আবার কাথার অভাবে বংশীর শীতের কষ্ট দেখিয়া সমবেদনায় চন্দ্ৰলেখার অন্তরটা নিরতিশয় ব্যথিত হইয়া উঠিল এবং তাহার মনে হইল, বংশীর এ-কষ্টের জন্য যেন সে-ই অনেকটা দায়ী। এই অবোধ লোকটির ত কোন দিকেই খেয়াল নাই, স্পৃহা নাই–চন্দ্ৰলেখারই উচিত ছিল, সময়মত একটা কি দুইটা কাথা তৈরি করিয়া দেওয়া । চন্দ্ৰলেখা চঞ্চল হইয়ু বলিল—ঘর থেকে আমি একটা কাথা নিয়ে আসি থাম । কিছুক্ষণ পরে চন্দ্ৰলেখা গোটা দুই কাথা এবং বালিশ লইয়া ফিরিয়া আসিল । ইত্যবসরে শস্থমালা আজ আর গল্প হইবে না—এই দুঃথে চলিয়া গিয়াছে। চন্দ্ৰলেখা বংশীকে উদ্দেশ করিয়া বলিল—তুমি একটু উঠে বস—জামি বিছানাটা পেতে দিই। বংশী কম্বল জড়াইয়া উঠিয়া বসিল । চন্দ্রলেখ বিছানা পাতিতে গিয়া দেখিল—বংশী যাহা বালিশ হিসাবে ব্যবহার করিতেছিল তাহা একটা গুাকড়-জড়ানো খড়ের বিড়া। চন্দ্ৰলেখা হাসিয়া বলিল—এইটে এত দিন মাথায় দেওয়া হ’ত ! বিছানা পাতা হইলে বংশী আসিয়া কাথা ও কম্বল মুড়ি দিয়া গুইয়া পড়িল। কিছুক্ষণ চুপচাপ গুইয়া থাকিবার পর পুনরায় সে হু হু করিতে লাগিল। চন্দ্ৰলেখা জিজ্ঞাসা করিল—সাৰু-বালি কিছু থেয়েছ বংশীদা ? বংশী উত্তর দিল—কে আর তৈরি করে চন্দ্ৰ—থাকৃ ও-সব । জরে জরে ত শেষ রাত থেকে এ-পর্য্যস্ত কেটে গেল। খিদেও নেই। —থিদে নেই, না তৈরি ক'রে খেতে পার নি। চন্দ্রলেখ কোমল কণ্ঠে বলিল, আমিও জলের জন্তে আর কাজের তাড়ায় সকালে আসতে পারি নি—তোমার যখন এমন তখন কারুর হাতে একটু খবর দিয়ে পাঠালে না কেন। এমন লোক আর কোথাও দেখি নি। বংশী নিরুত্তরে কঁাপিতে লাগিল। চন্দ্ৰলেখা বলিল— এক কাজ কর তুমি বংশীদা—জর যে-পৰ্য্যন্ত না সারে সে পৰ্যন্ত তুমি আমাদের ঘরে থাকবে চল । ডাক্তার-বদ্যি বংশী এইবার কথা বলিল নিতান্ত হতাশায়—এ-গায়ে ডাক্তার-বদ্যি কোথায় চন্দ্ৰ—পাশ-পাশি চার-পাচটা গেরামেই নেই, ধা আছে সেই গঞ্জের হাটে। কিন্তু তাদের আনতে অনেক টাকার দরকার চন্দ্র-অত টাকা আমার নাই। বছরের ধান বছরে কুলায় না, তার পর এ-সনে কি হবে কে জানে! মহাজনের কাছে মাথা নোয়ালে কি আর নিস্তার আছে ! চন্দ্রলেখ বলিল—তবু একটু ওষুধ-টম্বদ--- ংশী উত্তর দিল—ই। আমাদের আবার ওষুধ—মরলেই ফুরিয়ে গেল । চন্দ্ৰলেখা বিরক্ত হইয়া বলিল—দাদার রোগে তোমাকেও ধরেছে তা হ'লে ! বংশী দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়িয়া উত্তর দিল—সকলেরই ওই এক কথা চন্দ্ৰ—গরীব লোক আমরা, মরণই আমাদের শেষ ওষুধ । তা ছাড়া কপালটা আমার বড় মন—এই যে তোর একটু সেবাযত্ন পাই—এই ষথেষ্ট চন্দ্র, এর বেশী কিছু ভাবতে ভগবান আমাকে দেয় নি। এইখানে বেশ আছি । চন্দ্ৰলেখা অভিমানভরে বলিল—না দেয় নি। আমাদের ঘরে গেলে কি তোমার অপমান হবে । বংশী নিরুত্তর । কিছুক্ষণ পরে চন্দ্রলেখা চলিয়া গেল। বংশী তাহারই কথাগুলি ভাবিতে লাগিল। চন্দ্ৰলেখার আমন্ত্রণে সে সানন্দেই সম্মতি দিতে পারিত কিন্তু নিমাইয়ের বিন মতে সে কেমন করিয়া বট, করিয়া রাজী হইতে পারে!