পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আণশ্বিন বাহিরে তখন আগামী বর্ষার দুৰ্য্যোগ আবার ঘনাইয়৷ উঠিতেছিল। চন্দ্রাকরের পাড়ে সমস্ত গাছ আতঙ্কে যেন পাণ্ডুর হুইয়া উঠিয়াছে—কৃষ্ণ-সবুজ রঙের পরিবর্তে কেমন একটা ফ্যাকাসে রঙের আভা তাহদের, আকাশে গাং-চিলের দল বাতাসের বেগে অস্থির ভাবে উড়িয়া বেড়াইতেছে, কালো কালো মেঘের দল তবু তবু করিয়া প্রখর স্বর্ঘ্যের উপর দিয়া ভাসিয়া গেল—তাহীদের চঞ্চল ছায়াগুলি ক্ষণিকের রৌদ্রদগ্ধ ধরণীর উপর দিয়া দ্রুতবেগে ছুটিয়া যাইতেছে, চন্দ্রাকরের গভীর নীল জল বাতাস লাগিয়া আয়নার মত সাদা ধব, ধব, করিতেছে, কোন বনে একটা ডাহুক আতঙ্কিত একটা ঘুঘুর সঙ্গে সানন্দে পাল্লা দিয়া চলিয়াছে অশ্রাস্ত কণ্ঠে, নারিকেল গাছের শ্রেণীগুলি ডালপালা সমেত যেমন ভাবে একদিকে ঝুঁকিয়া পড়িয়াছে— মনে হয়, এই বুঝি ভাঙিয়া পড়িল । ঝড়ের বঁাশীর স্বরে বর্ষার বিলাসচঞ্চল নৃত্য স্বরু হইল । সন্ধ্যার দিকে বংশীর জরটা ছাড়িয়া গেল । এই দুৰ্য্যোগে তাহারই ঘরের বাহিরে নিমাইয়ের কণ্ঠস্বর শুনিয়া সে ব্যস্ত হইয়া দুয়ার খুলিয়া দিল। জিজ্ঞাসা করিল— এমন সময়ে যে নিমাই ! —আর ভাই—টিকতে পারলাম না ঘরে । নিমাই ভণিতা করিয়া বলিল, চন্দ্রর কথা আর শুনতে পারলাম না। চল ভাই চল, তোমার লেপ-কাথাগুলো আমাকে দাও । বংশী সাশ্চর্য্যে বলিল—কোথায় যাব ? —আমার আস্তানায় । হাসিয়া বলিল—আলসে লোক চন্দ্রর দু-চক্ষের বিষ, কিন্তু তোমার কি সৌভাগ্য, আজও তুমি তার একটুও বকুনি খেলে না, বরং আমিষ্ট থেলাম বকুনি । ংশী আগাগোড়া সমস্ত বুঝিতে পারিল । বুঝিতে পারিল, তাহাকে লইয়া যাইবার জন্ত চন্দ্ৰলেখা তাহার দাদাকে পাঠাইয়াছে। একটা অশরীরী পুলক বংশীর সারা রুগ্ন দেহে ধীরে ধীরে ছড়াইয়া পড়িল। তাহার ইচ্ছা হইল, এই ঝড়বাদল মাথায় করিয়া এইক্ষণেই সে ছুটিয়া যায়। যদি মৃত্যু হয় ত সেইখানেই হইবে। নিমাইয়ের তাগাদ খাইয়৷ বংশী আত্মস্থ হইল, বলিল, রুগী মামুষ—এই ঝড়-জলে যাব কি ক’রে ভাই, বরং কাল সকালেই আমি যাব । তোমরা } o \చి-)\లి বিদেশী রাজকুমার ԵածԳ আছে বলেই বেঁচে আছি রে দাদা—চন্দ্রকে ব’লে, কাল যাব । বংশী এক দিন নিমাইকে একাস্তে পাইয়ু বলিল— ংসারকে বড় ভয় করতাম নিমাই, কিন্তু তোমাদের আশ্রয়ে এসে আমার ভুল ভেঙে গেল । নিমাই হাসিয়া বলিল—চন্দ্রর এখনও বকুনি খাও নি বংশী —খেলে ফের ভয় পেয়ে যেতে । আমি ত ওর ভয়ে সংসার এখনও করি নি। এক মেয়ের যে বকুনি, আরও এক জন এলে সামাল সামাল কাও । হতভাগীকে ਆਿ. করতে চাই—-বলি, আর মায়া বাড়াস নি চন্দ্র, কিন্তু ও এমন ভাবে তাকায় --- কখনও বলে, আমাকে তাড়াতে চাও জাদ। — আবার কথনও বলে, তুমি বিয়ে কর—বেীকে আগে ঘরসংসার বুঝিয়ে দিই... বংশী বাধা দিয়া বলিল-এবার সেরে উঠলে আর দেরি না নিমাই–চন্দ্র আমার ভুল ভেঙে দিয়েছে । তখন তোমার কথায় কান দিই নি, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ওর হাতের গড় সংসারে দুঃখ থাকবে না । - নিমাই উৎসার্তিত হইয়া বলিঙ্গ—আমি বলছি বংশী, তুমি স্বথী হবে—চন্দ্রও আমার মুখে থাকবে—আমারও কাধ · থেকে একটা ভার নামে । এমন সময় চন্দ্ৰলেখা এক বাটি সাৰু লইয়া আসিয়া দাড়াইল । নিমাই কাজের ছুতায় উঠিয়া গেল। চন্দ্রলেখ বংশীর মুখের কাছে সাবুর বাটিটা তুলিয়া ধরিতে বংশী এক নিশ্বাসে সেটুকু খাইয়া ফেলিল। তার পর একটা তৃপ্তির নিশ্বাস ক্ষেলিয়া বলিল—আরও এক বাটি খেতে পারি। —আনিব ? বংশী হাসিয়া বলিল—না না—এমনি বলছিলাম। আচ্ছা চন্দ্ৰলেখা, তোমার ঋণ আমি শোধ করব কি ক'রে বল ত ? চন্দ্ৰলেখার মুখ চোখ হঠাৎ চক্চক্ করিয়া উঠিল—বলিল, জানি না। বলিয়াই সে এক মুহূৰ্ত্ত মাত্র বংশীর দিকে কৌতুক-দৃষ্টিতে তাকাইয়া ক্রতপদে চলিয়া গেল এবং ইহাতে তাহার সব জানা প্রকাশ হইয় পড়িল ষেন । বংশী বসিয়া ছিল—শুইয়ু পড়িল । এ কয়দিন তাহার স্বপ্নের মত কাটিয়া গিয়াছে। চন্দ্রলেখার পরিচর্ষ্য তাঁহার