পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আণশ্বিন অনাগত আজ আসিবেই । আয়োজন করিল। চন্দ্রলেখ পরিপাটি করিয়া তার পর আয়োজনের থালা হাতে লইয়। অনাগত লোকটির জন্ত নিদিষ্ট ঘরে একে একে সাঙ্গাইতে চলিল। দরজার সম্মুখে গিয়া হঠাৎ তাহার ভুল হইয় গেল। মনে হইল, সেই লোকটি ধেন ওই ঘরে, চন্দ্রলেখার শত-যত্নে-পাতা ওই বিছানার উপরে শুইয়া আছে । সঙ্গে সঙ্গে বিপুল লজ্জায় অঙ্গের বসন গুছাইতে গিয়া চন্দ্ৰলেখার হাতের থালা মাটিতে পড়িয়া গেল। আশায় আশায় দ্বিপ্রহর উত্তীর্ণ হইয়া গেল । সহদেব দত্তকে আগাইয়া আনিবার জন্য গ্রামের প্রবীণ কয়েক জন গঞ্জের হাট পৰ্য্যন্ত গিয়াছে—নিমাইও গিয়াছে। চন্দ্ৰলেখা শুন শুন করিয়া গান গাহিয়া স্নান করিতে চলিল, fಳ চন্দ্রাঙ্করের জলে দেহ ডুবাইতেই তাহার মনে হইল, ওই পাশের ওই ঈশানকোণে সহদেব যেন বসিয়া আছে। সঙ্গে সঙ্গে চন্দ্ৰলেখার অার ভাল করিয়া স্নান করা হইল না । বিকাল আসিল—প্রশাস্ত কাজল ছায়া ধীরে ধীরে নামিয়া আসিল। চন্দ্রলেখ স্বদূরপ্রসার দৃষ্টি লইয়া খালের ধারে দtড়াইল—ভাবিল, হয়ত খেয়ালী সেই সহদেব লোকটি সোজা এইখানেই আসিৰে—ব্রুপসীর খালে পালে নৌকা করিয়া । নিমাই কিন্তু হতাশ হইয়া ফিরিয়া আসিল । কলমীলতা গ্রামের সকলেই । চন্দ্রলেখ ব্যাকুল হইয়া জিজ্ঞাস করিল—কি হ’ল দাদা ? এলেন না ? নিমাই বলিল, না—বারো চকের নায়েবের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। বাবুর এবার নাকি আর আসা হ’ল না। খেয়ালী মাতুষ—যখন যা থেয়াল হয় । চন্দ্ৰলেখা ভাঙিয়া পড়িল । কেন জানি না, বোধ করি অনাগত'র নিষ্ঠুরতায় চন্দ্ৰলেখার চোখের কোণ বাহিয়া জল নামিয়া আসিল—গোপনে আঁচলে সে তাহা মুছিয়া ফেলিল । সহদেবের জন্য যে ঘরটা সাজাইয়া গুছাইয় রাখা হইয়াছিল সেই ঘরে সে ধীরে ধীরে গিয়া ঢুকিল । পূৰ্ব্বের ছোট জানালাটা খুলিয়া দিল-বাদল সন্ধ্যার এক ঝলক বাতাস হু হু করিয়া ঢুকিয়া সহদেবের জন্য পাতা বিছানার চাদরটার এক প্রাস্ত গুটাইয়া দিল। চন্দ্ৰলেখা সেই বিছানায় বসিয়া পড়িয়া ভাবিতে বসিল । সে-চিস্তার কোন ধারা নাই। বিদেশী রাজকুমার •tూSES শঙ্খমালা এই সময়ে ভয়ে ভয়ে একবার সেই ঘরে উকি মারিল, তার পর ঢুকিয়া চন্দ্ৰলেখার সম্মুখে আসিয়া বলিল, চন্দ্ৰ-দি—বাবু আসে নি, না ? চন্দ্ৰলেখা ভারাক্রান্ত দৃষ্টি লইয় তাহার দিকে চাহিল— কোন উত্তর দিল না। নিমাই এই সময়ে সে ঘরে ঢুকিল । চন্দ্ৰলেখাকে বলিল, খাবার-টাবার যা তৈরি করেছিস সেগুলো এবার বার কর চন্দ্ৰ –শঙ্খ ও অাছে, আমাকেও \ কিছু দে—বডড থিদে পেয়েছে। সারাটা দিন আজ খাড়া পাহরায় দাড়িয়ে আছি । চন্দ্রলেখা উঠিয়া দাড়াইল । মন্থর o বলিল, ংশীদা’কেও ডাকবে দাদা—পিঠে খেতে সে বড় ভালবাসে । নিমাই সাশ্চর্য্যে বলিল, সে কি আর এ-গায়ে আছে নাকি ! আমাদের এখান থেকে চলে যাওয়ার পর কোঁথা যে সে গেল—কে জানে! আজ সাত দিন ত দেখা নেই । ঘরদের সব খোলা, দোকানটাও তেমনি সাজানে, ছেড়া কম্বলটাও পড়ে আছে—ধালি তোর সেই দু-খান! কাথা নেই । আমাদেরই দে-খেয়ে ফেলি—বলিয় নিমাই বাহির হইয়া গেল । |-- চন্দ্ৰলেখা বসিয়া পড়িল—চোথের কোণ বাহিয়া ঋবু ঝর করিয়া জল নামিয়া আসিল । - এক সময়ে চন্দ্ৰলেখাকে প্রকৃতিস্থ দেখিয়া শস্থমালা তাহার নোংরা চুলের রাশ জুলাইয়া বলিল, চন্দ্ৰ-দি গল্প বলে মা—সেই গল্পট, সেদিন যেটা অৰ্দ্ধেক বলেছিলে--- চন্দ্ৰলেখা অন্তমনস্ক ভাবে বলিল—ভরসন্ধ্যায় গল্প শুনতে নেই শঙ্খ-দুঃখ হয় । —না তুমি বলো চন্দ্রদি—শস্থ জেদ ধরিয়া বসিল, কিন্তু চন্দ্ৰলেখা ‘মনে নাই’, ‘মন খারাপ ইত্যাদি অজুহাত দিয়া এড়াইয়া গেল। শস্থমালা ভাবিতে বসিল, কি হইল সেই কুমারীর যাহাকে বিবাহ করিবার জন্ত এক রাজকুমার তাহাকে বন্দী করিয়া রাখিয়াছিল ! কি হইল সেই ভিনদেশের রাজকুমারের—যাহাকে কুমারী স্বপ্ন দেখিয়াছিল, যেন সেই সোনার বরণ রাজকুমার তাহাকে উদ্ধার করিয়া লইয়া যাইতেছে! উদ্ধার করিয়া কি—লইয়া গিয়াছিল ! পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়িয়া এই পৃথিবী ছাড়িয়া ওই মেঘ পাহাড়ের দেশে কি উড়িয়া গিয়াছিল । না, বন্দিনী রাজকুমারী কেবল স্বল্পই দেখিয়াছিল!