পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

gهي مسb প্রবাসী আমি কালই সকালে যাব ঠিক করেছিলাম তোর কাছে। কাকাবাবুও আমি না গেলে রাগ করেন জানি । কাল রবিবার আছে, তার উপর উনি সারাদিনই বাড়ী থাকবেন ন, আমার ও-বাড়ী যাওয়াই ভাল।” হৈমন্তী বলিল, “কেন স্বরেশদার কি এখনও আমাদের বাড়ী যাওয়া বারণ ? ওঁকেও নিয়ে চল না, অন্ত কোথায় আবার কি করতে যাবেন ?” স্বরেশ বলিল, “পরের দায় এসে ঘাড়ে পড়েছে, না গিয়ে করি কি ? কাল ট্রেন থেকে তপনের একটা চিঠি পেলাম তার কোন বস্তু অত্যন্ত জরুরী কাজ, সে বোম্বের দিকে যাচ্ছে। কবে কোথায় কত দিন থাকতে হবে তার ঠিক নেই। অকস্মাৎ যেতে হ’ল বলে গ্রামের ইস্কুলের ভাল বলে বস্তু ক'রে যেতে পারে নি। আমাদের উপর ভার দিয়েছে একটা বিলিব্যবস্থা করবার ” হৈমন্তী সংক্ষেপে বলিল, “কি ব্যবস্থা করবেন ?" সুরেশ বলিল, “তপনের বদলে কয়েক মাসের জন্তে খৃষ্ঠজন মাষ্টার রেখে দিতে হবে, আর রবিবারে রবিবারে নিখিল আর আমি গিয়ে তদারক করব। ওদের ছুটি এমনিতেই শনিবারে, কারণ সেদিন হাট বসে। কাজেই কাজকর্মের কোন অস্থবিধা হবে না । হ্যা, ভাল কথা, তপন কারও সঙ্গে দেখা ক'রে যেতে পারে নি ব’লে সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে পাঠিয়েছে। সকলের মধ্যে তুমিও একজন ব’লে তোমাকেও ব’লে রাখছি।” মিলি বলিল, “দরজার গোড়ায় দাড়িয়ে আর বক্তৃতা ন শুনিয়ে ঘরে নিয়ে বসাও না। আয় হিমু, তোকে আজ বড় শুকৃনো শুকুনো দেখাচ্ছে । অস্বথ করেছে না কি কিছু ?” হৈমন্ত্ৰী বলিল, “ন, অমুখ কিছু করে নি। বাড়ীতে জনপ্রাণী প্রায় কেউ নেই, একলা একলা বড় খারাপ লাগে । শুধু সতু আর বাবা খাবার সময় একবার করে টেবিলে এসে বসেন, বাকি সময় সবাই নিজের নিজের কাজে ।” ঘরে আসিয়া বসিয়া মিলি বলিল, “সত্যি, সবাইকার যেন দেশ ছেড়ে পালাবার ধূম লেগে গিয়েছে। মাকে বাবার জন্তে দেশে যেতেই হত, কিন্তু সুধা কলকাতায় থাকলে তোর সঙ্গীর অভাব হ’ত না, তা সেও কিনা ঠিক সময় বুঝে চলে গেল। তপনবাবুও আর বন্ধুর উপকার করবার সময় পেলেন না, দিন দেখে বেরিয়ে পড়লেন, পাছে কালেভদ্রে দুই-একটা গানটান শুনিয়ে মানুষের উপকার ক’রে ফেলেন । মহেন্দ্র-দ৷ ত যাবার প্রায় সব ব্যবস্থাই ক’রে ফেলেছে, শুনছিলাম দেশ থেকে ঘুরে এসে হপ্তাখানিকের মধ্যেই সে বেরিয়ে পড়বে। যদি দেশ থেকে আসতে দেরী হয়, তাহলে দু’চার দিনেই সাগর পাড়ি দিতে বেরোতে হবে ।” সুরেশ অকস্মাৎ মহোৎসাহে বলিয়া উঠিল, “হ্যা, কথা ছিল বটে, কিন্তু ওইখানে একটা গোলমাল বেধে গেছে । দেশ থেকে ফিরবার পর ওকে পার্টি দেওয়ার স্ববিধা হয়ত হয়ে উঠবে না ব'লে আমরা আগেভাগে খাইয়ে দিলাম । কিন্তু এখন দেখছি পার্টিটা মহেন্দ্রকে না দিয়ে তপনকে দিলেই ভাল হ’ত। মহেন্দ্র কালই দেশ থেকে ফিরে এসেছে, আমার আপিসে এসেছিল দেখা করতে, বলছে সব কাজকন্ম ভাল করে না গুছিয়ে এত হুড়োছড়ি ক’রে যাওয়া ঠিক হবে না। এ জাহাজটা ও ছেড়ে দিচ্ছে, এর পর কোনটায় বুকু করবে নিজের সব সুবিধা বুঝে ঠিক করবে ।” মিলি হাসিয়া বলিল, “তোমার বন্ধুদের সব মাথ খারাপ হয়ে গিয়েছে। যার কাজকৰ্ম্ম ভাল ক’রে গোছান উচিত ছিল সে রাতারাতি কোথায় দৌড় দিল তার ঠিক নেই, আর যার জাহাজ অবধি ঠিক হয়েছিল তারই অকস্মাৎ শুভমতি হ’ল কাজকৰ্ম্ম গোছাবার জন্যে । এবার বিলেতের টিকিট না কিনে ওকে রাচির টিকিট কিনতে বল ।” হৈমন্তী চুপ করিয়া বসিয়া শুনিতেছিল। তপনের খবর পাইবার ক্ষীণ আশা মনে লইয়া সে এ-বাড়ী আসিয়াছিল, এমন খবর পাইবে একবার কল্পনাও করে নাই । এই কথাবাৰ্ত্তায় সে কি ভাবে যোগ দিবে ? তাহার মাথায় ঘুরিতেছিল সেই চিঠিখানার কথা ! পাগলের মত তাহাতে এলোমেলো কি যে সে লিখিয়াছিল তাহার স্পষ্ট কিছুক্ত মনে নাই। উত্তেজনার মুহূৰ্ত্তে দ্বিতীয়বার পড়িয়াও দেখে নাই। চিঠির জবাব আমুক বা না-আস্থক, তাহা তপনের হাতে পড়িয়াছে মনে এই একটা সাপ্তনা ছিল । কিন্তু এখন তাহাও ত নিশ্চিত বলা যায় না। হৈমন্তী যখন ঘরে বসিয়৷ চিঠি লিখিতেছিল, হয়ত তখন তপন বিদেশযাত্রার জন্য