পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bూN9ల পুকুরের জলে সর্থীদের সঙ্গে সীতার কাটেন, দাদামহাশয় দুই হাত বাড়াইয় তাহাকে গাড়ী হইতে কোলে করিয়া নামাইতে চান। কোন মায়াস্পর্শে তাহার জীবনের এতগুলা বৎসর পিছাইয়া চলিয়া যায় সে বুঝিতে পারে না। তাহাদের গতির সমস্ত চিহ্ন মুছিয়া লইয়৷ পিছু হটিয়া নিঃশবে তাহারা চলিয়া যায়, স্বধার জীবনের ছোটবড় ব্যথার ক্ষতগুলি রাত্রির অন্ধকারে জুড়াইয়া দিবার জন্য। নয়ানজোড়ের ধূমলেশহীন দিনের আলোও এই রাত্রির অন্ধকারকে, অনেকখানি সাহায্য করিবে বলিয়া স্বধার বিশ্বাস ~র্তাই স্বধ তাঙ্গর পঙ্গু মায়ের অনেক অসুবিধার সম্ভাবনা বুঝিয়াও র্তাহাকে সঙ্গে যাইতে রাজি করাইয়াছে। উ" ফেলিয়া গেলে সেখানে ত সে নিশ্চিন্ত হইয়া - থাকিতে পরিবে না। শৈশব তাহাকে যে আনন্দ দিয়াছিল তাহাতে ছন্দের দোল দিবার জন্ত দুঃখের কোনও আঘাত ছিল না, কিন্তু যৌবনের আনন্দে দুঃখবেদনার আঘাত তাহার স্বথকে -মুংপাইয় উঠতে চলিয়াছে। যদিও এই দুঃখের কষ্টিপাথরেই তাহার প্রেমকে সে চিনিয়াছে তবু ইহার হাত হইতে ক্ষণিকের মুক্তি যদি সে না পায়, তাহা হইলে হৃদয়ুতন্ত্রী তাহার টুটিয়া যাইবে । শেধবর্ষণের ঘনঘটার মধ্যে স্বধা নয়ানজোড়ে আসিয়া পৌছিল । গরুর গাড়ী করিয়া ষ্টেশন হইতে ধর্থন তাহার বাড়ী আসিয়া পৌছিল তখন ভরাবর্ধার কালো মেঘসাগরের বুকে চতুর্থীর চাদ ছোট একটি আলোর নৌকার মত ভাসিয়া চলিয়াছে। উন্মত্ত তরঙ্গের মত মেঘ কখনও তাহাকে গ্রাস করিয়া ফেলিতেছে, কথনও আবার সে জাগিয়া উঠিতেছে মেঘপুঞ্জের অন্তরাল হইতে। এ যেন গঙ্গাধর মহাদেবের জটাজালে দীপ্যমান শিশু শশী । বর্ধার এই ঘন কালে মেঘজালে ভাসমান চতুর্থীর চাদ কবে কোন আদি কবির মনে এ কল্পনা আনিয়া দিয়াছিল কে জানে ? স্বধার মনে হইল, শুষ্ক ধরার প্রাণদায়িনী গঙ্গ। এই মেঘের জটা হইতে যেমন করিয়া ঝরিয়া পড়িয়াছিলেন, তেমনই করিয়া তাহার প্রাণেও এই ঘনবর্ষা শাস্তিধারা ঢালিয়া দিতে পারিবে। গরুর গাড়ী বাড়ীর দরজায় আসিয়া দাড়াইল । অন্ধকারে প্রশ্বাসী SN933 লণ্ঠন-হাতে হাড়ু সাওতাল আসিয়া বাক্স বিছানা নামাইতে লাগিল। মুখখান কিছুমাত্র মান না করিয়া সে প্রথমেই বিনা ভূমিকায় খবর দিল, “করুণাঝি মরে গেছে মা ।” মহামায়া বলিলেন, “আহা, কি হয়েছিল বাছার ?” সুধার দুই চোখ জলে ভরিয়া আসিল । সে তাড়াতাড়ি মুখ ফিরাইয়া গাড়ী হইতে নামিয়া পড়িল। হাড় যে কি জবাব দিল তাহা স্বধা শুনিল না। মুগাঙ্ক ৪ হাড় মহামায়াকে ধরিয়া নামাইল । স্বধী লণ্ঠনট উচু করিয়া ধরিল। সেই ছেলেবেলার মূগান্ধদাদা, এখন মস্ত এক জন ভদ্রলোক হইয়াছে, বলিল, “মৃধা আর ত ডাগর হয় নি, মামীম !” কিন্তু স্বধার মনে হইল জীবনের অভিজ্ঞতায় স্বধাই তাহার চেয়ে অনেক বাড়িয়া গিয়াছে। মৃগাঙ্কদাদার জীবনে এখনও ধান আদায়, গোলা বোঝাই ও জমি বিলি করা বছরে বছরে একই ভাবে ঘুরিয়া আসে, সুধার জীবন ইহার ভিতর কত দীর্ঘ পথের কাটা মাড়াইয়া ফুল কুড়াইয় অগ্রসর হইয়া আসিয়াছে। পিসিম হৈমবতী অন্ধকারে ঘরের ভিতর বসিয়। হরিনামের ঝুলি লইয়া মালা করিতেছিলেন । মুধাদের দেখিয়া মালাটি মাথায় ঠেকাইয়া দেয়ালের পেরেকের গায়ে ঝুলাইয়। রাপিলেন। সেই তাহার তেজস্বিনী পিসিমার মূপে কি একটা অসহায় ভাব যেন ফুটিয়া উঠিয়াছে। ধিনি পৃথিবীতে কাহারও সাহায্য ভিক্ষা করেন নাই, কাহারও অভাবে ভয় পান নাই, তিনি যেন এই অন্ধকারে হাতড়াইয়। সহায় খুজিয়া বেড়াইতেছেন। স্বধার মনটা দমিয়া গেল । নয়ানজোড়কে সে যাহা মনে করিয়া আসিয়াছিল, তাহা ত ঠিক নাই। পৃথিবীতে দুখ কি শুধু তাহার জন্য, যে সে দুঃখের হাত হইতে পলাইয়া বঁচিবে অপরের স্বর্থশাস্তি দেখিয়া ? দুঃখ পৃথিবীর নিঃশ্বাস-বায়ুর ভিতর দিয়া বিশ্বজনের হৃদয়ে ঘুরিয়া ফিরিতেছে। পিসিমার মুখের সতেজ রেখাগুলি বেদনায় যেন ঠোটের কোণে চোথের কোণে ভাঙিয়া পড়িয়াছে, পায়ের জোরে মাটি আর তেমন কঁাপিয় উঠে না। পিসিমা দুই হাতে স্বধাকে বুকের ভিতর জড়াইয়া ধরিলেন। মহামায়াকে দেখিয়া বলিলেন, “বে, তুমি সেদিনের মেয়ে, তোমাকে এমন দেখে যাওয়াও আমার অদৃষ্টে