পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আণথিন কলিঙ-খী গ্রামে পৌছিলাম। এই গ্রামে শতাধিক ঘর, এবং গৃহগুলির ছাদ দেওয়াল এবং মেজে–সৰ্ব্বত্রই দেবাক কাঠ প্রযোজিত হইয়াছে। কাঠের অভাব নাই, স্বতরাং দিবারাত্র আগুন জলিতেছে। অধিকাংশ ঘরই দ্বিতল । নিম্নতলে পশুরক্ষা এবং দ্বিতলে লোকজনের অবস্থান, দেবতস্থান ও ভাওরে রাখাই নিয়ম। তিব্বতের তুলনায় এখানের , লোক বহু গুণে পরিষ্কার । এখানের নারীরা গঢ়বলৈ ও কিনৌরের স্ত্রীলোকদিগের মত শাড়ী পরে। তাহারা স্বন্দরী, রক্তিমগৌরবর্ণ এবং স্বগঠন । হিমালয়ের তিন অঞ্চলের নিবাসিগণ দেবীর বরে সৌন্দৰ্য্য পাইয়াছে। আমি সৌন্দর্ঘ্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নহি, কিন্তু আমার মনে হয় ঐ তিন অঞ্চলে বাসভূমি ও অধিবাসী উভয়কেই প্রকৃতিদেবী মুক্তহস্তে অলঙ্কত করিয়াছেন। ইহাদের মধ্যে আমার মতে কনৌরের • স্ত্রীলোক সৰ্ব্বাপেক্ষ স্বন্দরী, তাহার পর এই ডোমো প্রদেশের নারী এবং যন্মোবাসিনী। বর্ণ-গৌরবে যন্মোবাসিনী শ্ৰেষ্ঠ, কিন্তু কিল্লরীদের মুখশ্ৰী অতি মনোরম। এই ডে-মো উপত্যক অতি মনোহর। যদিও খচ্চরসাহায্যে জিনিষ সরবরাহ করা এখানকার প্রধান পেশা, এখানে কৃষিকাৰ্য্য খুবই প্রচলিত। এই অঞ্চল ভারত ও তিব্বতের মিলনকেন্দ্র । লোকের মুখাবয়বে আধ্য- ও মঙ্গোল-রক্তের মিশ্রণ সুস্পষ্ট দেথা যায়। ভারতের কাক (তিব্বতের কাক বৃহৎ চিলের মত পাখী), কোয়েল ইত্যাদি এখানে দেখা দিল । নদীর পাশ দিয়া পথ চলিয়াছে। এক ঘণ্ট। পরে স্যাসিম পৌছিলাম। এখানে ইংরেজের ফুঠী, তার- ও ডাক-ঘর বাজার ও কিছু সৈন্ত আছে। ১৯০৪ সালের অভিধানের পর o ক্ষতিপূরণ হিসাবে ইংরেজ এই প্রদেশ দখল করেন কিন্তু চীন | দেশ সেই ক্ষতিপূরণ টাকায় গণিয়া দিলে পরে ইহা তিব্বতকে ফিরাইয়া দেওয়া হয় । সালিমার পর ছেম গ্রামও স্বন্দর, বড় বড় ঘরে ও বিশাল বনস্পতিতে পূর্ণ, তাহার পরের গ্রাম fরন-ছেন-গঙও বৃহৎ গওগ্রাম। খরচের হিসাবেওঁ তিব্বত অপেক্ষা এখানে বেশী টাকা লাগে । এ-অঞ্চলের পোষাক—নেপালী কালে টুপী, নেপালী পায়জামা ও কোট। • প্রাচীন কিন্নর দেশই এখন কিনেীয় বা কনীের নামে পরিচিত । নিষিদ্ধ দেশে সওয়া বৎসর מל"לי আজ রাত্রিবাস হইল মু-গঞ্জ, সরাইয়ে। পথে ধৰ্মীপ্তি খচ্চরের দল লইয়া আমাদের দলের সহিত আসিয়া মিলিত হইয়াছিলেন। এই সরাইয়ে এক “দেববাহিনী" (মাহার উপর দেবতা আবিষ্ট হন ) স্ত্রীলোক দেখিলাম। আমরা ধে-কক্ষে ছিলাম সেখানে এক দম্পতী আসিয়া উপস্থিত হইল। সরাইঅধিকারিণী বৃদ্ধ তন্মধ্যে অতি সম্রমের সহিত স্ত্রীকে অভ্যর্থন করায় বুঝিলাম ইহার সাধারণ লোক নহে। সারানি ' ইহার চা-পান, ভোজন ইত্যাদিতে কাটাইল, আমি জিজ্ঞাসা করায় বলিল তাহার। ফ-রী-বাসী, সম্প্রতি কালিম্পঙে ডেমো-গে-শে লামার দর্শনে চলিয়াছে। সদ্ধার সময় দেখিলাম স্ত্রীলোকটি সৰ্ব্বাঙ্গ আড়ামোড় দিতেছে। পুরুষটি কখনও তাহার হাত ধরিয়া শোয়াইবার চেষ্টা করিতেছে, কখনও তাহার মাথায় দেবতামূৰ্ত্তি ঠেকাইতেছে, কখনও বা হাত জোড় করিয়া বলিতেছে, “আজ ক্ষমা করুন।" বুঝিলাম, স্ত্রীলোকটি পেশাদার দেববাহিনী এবং সম্প্রতি দেবতা আসিবার উপক্রম হইয়াছে। কিছুক্ষণ পরে সে পুরুষটিকে ঋটিতি সরাইয়া দিয়া পাশ্বের কক্ষে চলিয়া গেল । আমার কৌতুহল হওয়ায় পরে গিয়া দেখিলাম, সেখানে স্বন্দর আসনে সেই স্ত্রীলোকটি আপাদমস্তক বিচিত্র বসনভূষণে সজ্জিত হইয়া বসিয়া আছে এবং তাহার সম্মুখে পাচ-সাতটি ঘূতীপ জলিতেছে। কিছুক্ষণ পরে পুরুষটি একটি চামড়ায়-মোড় ভোটীয়া ডমরু তাহার সামনে ধরিলে সে ধনুকাকৃতি কাঠের দ্বারা তাহা বাজাইতে আরম্ভ করিল। তাহার জিহবায় যেন সাক্ষাৎ সরস্বতী আবিস্তৃত হইলেন । সে ক্রমাগত পদ্যে নানা কথা বলিতে লাগিল। প্রথম পদ্যে দেবতা নিজের পরিচয় দিলেন। তাহার পর প্রশ্নোত্তর আরম্ভ হইল। প্রশ্নকৰ্ত্ত দুই-এক আনা পয়সা রাখিয়া হাত জোড় করিয়া নিজ সমস্ত নিবেদন করিলে তাহার উত্তর পদ্যে আসিল, অধিকাংশই ভূতপ্রেতশাস্তির ব্যবস্থ, মধ্যে মধ্যে ছঙ-পানও চলিল। আমি কাঞ্ছাকে বলিলাম, “প্রশ্ন কর তোমার ছেলের অমুখ, কি করা কর্তব্য ?” দুই আনা পয়সা নিবেদন করিয়া "উকিল" মারফৎ প্রশ্ন হইতে উত্তর হইল, নগরদেবতা কৃষ্ট, অন্য দেবতাকে পূজায় সন্তুষ্ট করিয়া সালিশ মান, তিনি নগরদেবতাকে ক্ষান্ত করিলে ছেলের অমুখ সারিয়া ।