পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>९२ “আমাকে যদি উপাসনার প্রতিফল স্বরূপ স্বৰ্গ দাও, সে ত বেতন হইল, তোমার করুণ ও দয়ার দান কোথায় ?” আবার কোরাণের নিষেধ সত্বেও স্বরাপান করিতেন । কোরণে ঈশ্বরের অrজ্ঞা অনুসারে মুসলমান প্রত্যহ পাঁচবার নমাজ উপাসনা করিতে বfধ্য । নমাজের সময় হইলে মসজিদের মিনার বা কোনও উচ্চ স্থানে দাড়াইয়া একজন লোক উপাসকদের উচ্চৈঃস্বরে আহবান করে। এই ব্যক্তিকে “মোয়ুজন’ ও ঐ ডাককে “অজান” বলে। অজানের শব্দ শুনিতে পাইলে সহস্র প্রয়োজনীয় কৰ্ম্মত্যাগ করিয়া মসজিদে যাইতে হয় ও সকলকে শ্রেণীবদ্ধ হইয়৷ একত্রে একই ভাবে, একই ভাষায়, কখন দাড়াইয়া, কখন বসিয়া, কখন প্রণত হইয়া উপাসনা করিতে হয় । খৈয়াম মসজিদে গিয়া উপাসনাও করিতেন, আবার বলিতেন, ‘ঈশ্বর কি ঘড়ীর অধীন ? একস্থানে একত্রিত হইয় একই প্রকার ব্যায়াম করিয়া একই সময়ে একই ভাষায় উপাসন। করা বাহ প্রতারণার রূপান্তর মাত্র, ঈশ্বর এত সহজে তুলিবার পাত্র নহেন।’ তাহার এইরূপ উক্তি বা বিদ্রুপ শুনিয়া লোকে তাহাকে নিরীশ্বর কাফের ভাবিত। পরকাল সম্বন্ধেও তিনি কোরাণের আজ্ঞা বিশ্বাস করিতেন না । কোরাণে আছে যে, মণ্ড মিনের [ বিশ্বাসী মুসলমানের] বহিশতে স্বর্গে ] যাইবে । বহিশতে একটি নিৰ্ম্মল শী গুল-জলপূর্ণ তড়াগ থাকিবে, তাহার নাম “কওসর” বা কোসর ; তাহার চারিদিকে নানাপ্রকার স্বদুখ গায়ক পক্ষীপুর্ণ ফল ও ফুলের স্বম্বর বাগান থাকিধে ; বাগানে চারটি নম্বর ছোট নদী ] থাকিবে, তাহাতে বিশুদ্ধ স্বরা, মধু, দুগ্ধ ও মিষ্ট শীতল জল প্রবাহিত হইবে $ বাগানে মৌমিনদের জন্য নানা রত্নখচিত স্ববাসিত অট্রলিকা থাকিবে ; মৌমিনের আপনার কৰ্ম্মাম্বুসারে এক হইতে আটটি কৃষ্ণ-নয়ন স্থির-ীেবনী হৱ পাইবে ও উৎকৃষ্ট মূল্যবান বসন-ভুষণে ভূষিত হইয়া ঐ অট্টালিকায় অনন্তকাল ঘাস করিতে পাইবে, ও নানাপ্রকার উপায়ে স্বস্বাদু খাবার পাইবে ; এইরূপে সকল প্রকার শারীরিক মুখ ও ইঞ্জিয়-ভোগ্য বস্তু ভোগ করিতে পাইবে। এই বিশ্বাসকে বিরূপ করিয়া তিনি বলিয়াছেন – প্রবাসী –জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১৭ ৰত “লোকে বলে, স্বর্গে কৃষ্ণময় না হুর থাকিবে ও সেখানে বিশুদ্ধ স্বরা ও মধু থাকিবে। তবে আমি যে স্বরা ও কামিনী পূজা করি, তাছা উচিত কাৰ্য্য করি। কেননা পরলোকেও ত ইহাই থাকিবে ॥* “সাধুরা বলেন, হরের সহিত বহিশং ভাল। আমি কিন্তু বলি, ইহাপেক্ষ আজুরের স্বরা অনেক ভাল যাহা নগদ পাইতেছ তাহ লণ্ড ও ভবিষ্যতের ধারের আশা ছাড়িয়া দাও। কেন না ঢাকের বাদ্য দূর হইতে শুনিতেই ভাল। [ভবিষ্যতে বা ধারে নদীপূৰ্ণ স্বর। পাছবার আশা ত্যাগ করিয়া এখন নগদ ষে এক ক্ষুদ্র পাত্র স্বরা পাইতেছ তাহা খাইয়। লও, ভবিষ্যতের আশার কথা, ঢাকের বাদ্যের মত, দূর হইতে শুনিতেই ভাল ]" কোরাণের আজ্ঞানুসারে পরকালে যে শ্বর্গে এরূপ স্কুল শারীরিক সুখভোগের দ্রব্য থাকিবে তাহ খৈয়াম বিশ্বাস করিতেন না। তিনি কোরানের পরলোক, স্বর্গ ও নরকের অস্তিত্বকে বিদ্রুপ করিয়া বলিয়াছেন—“স্বরাপান করিলে স্বৰ্গ কিম্ব নরকে যা ই বে ? (এই প্রশ্ন করিতেছ ?) কে বা নরকে গিয়াছে ? কে বা স্বৰ্গ হইতে ফিরিয়া আসিয়াছে ?” "হায় ! পরলোক হইতে কেহ ফিরিয়া আসিল না, আসিলে তাহাকে একবার জিজ্ঞাসা করিতাম। পরলোকের ধাত্রীদের পরিণাম কি হইল ?” তিনি যে সময়ে ইরানে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন সেসময়ে সে-দেশে মুসলমানদের দুই প্রধান শাখা শিয়া ও স্বল্পীদের মধ্যে বিবাদ চলিতেছিল। আবার, শিয়াদেরও নামা সম্প্রদায়ে যুদ্ধ হুইতেছিল, দেশ রক্তারক্তি ও অশান্তিপূর্ণ ছিল, কিন্তু তিনি নিজে কোন সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন, তাহা তাহার উক্তিদ্বারা জানা যায় না। প্রবঙ্গ-পরাক্রান্ত খলীফদের বংশধর তথন নামে ইসলাম-জগতের প্রধান হইলেও কাৰ্য্যতঃ ইরানের প্রবল সম্রাটদের আজ্ঞাকারী ছিলেন, তাহারা পূৰ্ব্ব ক্ষমতা পাইবার জন্য নানা প্রকার ষড়যন্ত্র করিতেছিলেন । কোন ধৰ্ম্ম ভাল, কোন পথ স্বীকার করা উচিত, সে-কথা লইয়া সকলেই তর্কবিতর্ক করিত। এই তার্কিকদের লক্ষ্য করিয়া তিনি বলিয়াছেন – “কতগুলি ( লোক ) ধৰ্ম্ম ও মার্গ সম্বন্ধে চিন্তা করিতেছে। কতগুলি লোক বিশ্বাস ও সন্দেহের দোলায়