পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] পরভৃতিক ఆa পরিধানে একখানি পেয়াজ রঙের শাড়ী ও সেই রঙেরই একটি লেশভূষিত সেমিজ। চুল বেশ পরিপাট করিয়া বাধ। গায়ে গহনা বেশী নাই । আর একটি আমাদের পূর্ব পরিচিত ভানুমতী । কয়েকদিন হইল সে বাপের বাড়ী আসিয়াছে । শরীর তাহার আগের চেয়ে কিছু সারিয়াছে ; মুখ চোখ কিন্তু আগেরই মত বিষ্ণ, শ্ৰীহীন । অন্য যুবতীটি তাহার বড় বোন, কলিকাতাতেই ইহার বিবাহ হইয়াছে । অভাগিনী ভগিনীর আগমন-সংবাদে, কর্তৃপক্ষের কাছে অনেক আবেদন-নিবেদন করিয়া মাস খানিকের ছুটি মঞ্জুর করাষ্ট্রয়া সেও বাপের বাড়ী বেড়াইতে জ্বাসিয়াছে। সঙ্গে আসিয়াছে তাহার একমাত্র শিশুকন্যা দুর্গ। তাহার "ঙ্গ" নাদে ব্যতিব্যস্ত থাকায় এতক্ষণ সে বোমের কাছে আসিতে পারে নাই ; এখন চাকরের সঙ্গে তাঙ্গকে বেড়াইতে পাঠাইয়া সে একটু নিশ্চিন্ত হইয়া বোনের কাছে আসিয়া দাড়াইল । ভানুমতীর কাধের উপর হাত রাখিয়া শোভাবতী aিজ্ঞাসা করিল, “কি ভাবছিস, ভাই ?” ভানুমতী স্নান হাসি হাসিয়া বলিল, “কি আর ভাব ব, মেজ দি ? আমার ত ভাল কথা ভাববার কিছু নেই! নিজের অদৃষ্টের ভাবনা ছাড়া আমার আর ভাবনা কি ?” শোভাবতী বলিল, “অত মন খারাপ ক’রে থাকিস্ না বোন ; ওতে পেটের ছেলের অনিষ্ট হয়। তোর যা হবার ত হয়েছে, এখন ছেলের যাতে কোনো দিক দিয়ে খারাপ কিছু না হয়, তা তোকে দেখতে হ’বে । এমন কি সেদিন যে খ্ৰীষ্টানী ধাত্রী মাগীর উপর অত রাগ কবুলি মাছ খেতে বলেছিল ব’লে, আমার মনে হয়, দরকার হ’লে তোর তাও খাওয়া উচিত ।” ভানুমতী ঘৃণায় মুখ বিকৃত করিয়া বলিল, “ছি, ছি কি বলিস, মেজদি । কলকাতায় থেকে থেকে তুইও খ্ৰীষ্টান হ’য়ে গেছিস্ দেখছি। জামি বিধব, এমন অনাচার করলে আমার স্বর্গগত স্বামীর অপমান করা হবে না ?” শোভাৰতী বলিল, “ত যা বন্সিস ভাই, জত আচারের খুংখুঁতি আমার নেই। যাদের ভালমন্দ আমাদের কাছে সবার বাড়, তাদের জন্যে অনাচার কবৃতেও আমি পেছুষ্ঠ না। আচার বড় না মানুষ বড় ? এই ত সেবার ওঁর অস্বথের সময় ডাক্তারে মুরগীর জুস্থ ক’রে দিতে বললে ; শ্বাশুড়ী ত শুনে ঝাটা নিয়ে মাৰ্বতে এলেন। আমি লুকিয়ে কলের ঘরে ষ্টোভ জেলে ক’রে দিলুম। তাতে কি আমার খুব বেশ পাপ হয়েছে ? আর হয়ে থাকে ত হয়েছে ।* ভানুমতী বলিল, “তুই স্বামীর জন্তে করেছিস । তিনি খুসি হয়েছেন, এই তোর ঢের । হিন্দুর মেয়ের কাছে স্বামীর চেয়ে বড়ত আর কিছুই নেই । কিন্তু আমি যদি এখন মাছ-মাংস খাই, আমার স্বামীর আত্ম৷ কি তাতে অসন্তুষ্ট হ’বে না ?” শোভাবতী বলিল, “কে বললে তোকে যে অসন্তুষ্ট হ’বে ? সে কি চায় না ষে তার বংশের একমাত্র দুলাল স্বস্থ সবল হ’য়ে জন্মাকু ? তুই নিজের ঠিক মত যত্ন ন৷ কবুলে ছেলে স্বস্থ হ’বে না । মায়ের দুধ না পেলে তার গায়ে বল হ’বে কোথা থেকে । এসব ত ভেবে দেখতে হয় ? না শুধু আচার নিয়ে থাকবি, তারপর যা হয় হ’বে ? শেষে কি দেখতে চাস যে লক্ষ্মীছাড়া মাতাল উদয়টাই জ্ঞানদার ঘরদের দখল ক'রে বসেছে, আর দু'হাতে পয়সা ওড়াচ্ছে ?” ভানুমতীর দুই চোখ দীপ্ত হইয়া উঠিল । সে বলিল, “আমি বেঁচে থাকৃতে তা হ’তে দেব না। আর কেউ না জামুক, আমি জানি যে আমার স্বামীর মরা মূলে ঐ হতভাগা । সে যেন তাকে মারবার জন্তে ব্ৰত নিয়েছিল। রাজিদিন কেবল তার অনিষ্ট চিত্ত করেছে এক মনে, ওঁকে দেখলে সে যে কি ক’রে তাকাত, সে যদি দেখতে । ওঁর যা কিছু সবের উপর মুখ-পোড়ার লোভ । তোকে বলব কি দিদি, আমারই বলতে মুখে আসছে না, আমার উপর কুদৃষ্টি দিতেও সে ছাড়েনি। উনি আমাকে বারণই ক’রে দিয়েছিলেন একলা ওর সামনে যে’তে।” ভবানী তাহাদের পিছনে কখন জাসিয়া দাড়াইয়াছিল। সে বলিয়া উঠিল, “ভগবান আছেন দিদি, ভগবান