পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৪২ প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৪ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড বাহির করিয়া তাহার উপর চোখ বুলাইয়া যেমন তিনি চোখ তুলিয়াছেন, দেখিলেন ডাক্তার ফুটুপাতের বাহিরে চলিয়া গিয়াছেন। প্রকাশক ईकिलन-"अ-भ*हेि, একটু দাড়িয়ে যান, হিসেবটা মিটিয়ে দিই—গোট পঞ্চাশ টাকা আপনার দেন দাড়িয়েছে।” “এট। আপনি রাখবেন—আপনার ক্ষতিপূরণ সমেত” একখানা একশ টাকার নোট আগাইয়া দিয়া এই কথা কয়টি বলিয়া ডাক্তার ত্বরিতপদে পথ স্থাটিতে লাগিলেন। ছয় গ্রীষ্মের প্রখর জালালীপ্ত দিবসের শেষে তখনও ধরণীর দেহ মন্দসমীরণের স্নিগ্ধবীজনে মোটেই শীতল হয় নাই। পশ্চিম-আকাশে শুক্লা-সপ্তমীর চাদ রূপার জ্যোতিতে দুটা উঠতেছে মাত্ৰ –হাসপাতালের কম্পাউণ্ডের বাগানে আধফোট বেল মল্পিকার যুদ্ধগন্ধ ঈষৎ আত্মপ্রকাশ করিতে ব্যগ্র।—সেই সময় নেলী নিজের শয়নগৃহের জানালায় দাড়াইয়া কম্পাউণ্ডের হাতার মধ্যে প্ৰজলিত একটি অখ্রিস্তুপের দিকে উদাস দৃষ্টি মেলিয়া দাড়াইয়াছিল। সহুল পিছন হইতে আল্লা আসিয়া তার কাধে হাত রাথিয়া প্রশ্ন করিল— “হ্যা ভাই, এই গরমে আগুন পোহাবার সখ হ’ল কার-ডাক্তারবাবুর, ন রোগীদের ?” তারপর উত্তরের অপেক্ষা না করিয়া আবার সে বলিয়া উঠিল,—“ওমা, রাশি রাশি কাগজপত্র পোড়ানো হচ্ছে যে, হাস্পাভালের পুরোনো নথিপত্র নাকি ?” বড় জোরে দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া নেলী কহিল,—“আমার চিত-সাজানো হয়েছে, আল্লা । একদিন না বলেছিলি, ‘লিখে লিখে খাতা বোঝাই করুচিস কার জন্তে-নিজের চিতা সাজাবার জন্তে কি ?’ এখন বোঝ সে কথা সত্যি কিনা।” আরা যেন চাবুক খাইয়া লাল হইয়া উঠিয়া কহিল, “তোর সেই লেখার সমাধি হচ্ছে বুঝি। আর তুই স্বছন্দে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিল ?” কান্নাভর হাসি হাসিয়া নেলী আৰ্ত্তকণ্ঠে কহিল—“কি করব তুই বলতে চাস ?” উগ্ৰকণ্ঠে আন্না কহিল—“কি আবার করুবি, বিদ্রোহ করবি-মাপ করিস বোন, এ অত্যাচার পশুতেই করে, আর নির্বিচারে সয়ে যায় যারা তারাও পণ্ড ছাড়া আর কিছুনা ।” নেলী মৃদুস্বরে কহিল,—“তা জানি আন্না, কিন্তু বিস্রোহের আগুন তারই জালানো সাজে যে সেই আগুনে সব কিছু অসত্য বা অন্যায়কে পোড়াবার শক্তি রাখে— সে-শক্তি সবার মধ্যে নেই বোন । আন্ন অবাকৃ হইয়া কহিল,-“কিন্তু এই যে একটা খাম খেয়ালের বশে একজন অবিবেচক তোমার প্রতিভার উন্মেষকে এমন ক’রে হত্যা করলেন, এর বিরুদ্ধে বল্বার কি তোমার কিছু নেই, নেলী ?” চাকর আসিয়া থোকাকে দিয়া গেল। নেলী থোকাকে বুকে চাপিয়া ধরিয়া তার চোখে মুখে চুমা লইয়া বলিয়া উঠিল,-“এই খোকার মুখ চেয়ে আমি সব ভুলব আল্লা— আর যদি আমার আশা না ব্যর্থ হয়, তা’হ’লে ষে সাধ, যে মুকুলিত কামনা আজ আমার বুকের মধ্যে আগুনের ংস্থায় মুষড়ে গেল, এই শিশুর জীবনে তাকেই আমি ফুটিয়ে তোলবার চেষ্টা করব।" আল্লা সে কথায় কান না দিয়া অদূরে প্রজলিত অগ্নির লেলিহান শিখার দিকে চাহিয়া চাহিয়া নিজেও অকারণে রাঙা হইয়া উঠিতে লাগিল।