পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] শাসন १>> করিলেন। ছাদ পর্য্যবেক্ষণের কথা বিস্তৃত হুহয়। তিনি বিশ্বয়ে নিৰ্ব্বাক হইয়। কিছুক্ষণ পরে বাহির হইয়া গেলেন । শিক্ষকটির লজ্জায় মাথা নত হইয়া গেল। বুঝিলেন নারাণকে কয়েক দিন পূৰ্ব্বে শাস্তি-বিধানের ফলে তার এ দুৰ্গতি। এইরূপে অভাবনীয় উপায়ে লাঞ্ছিত হুইয়। শিক্ষকগণ নারীণের সহিত অবশেষে অহিংস অসহযোগ নীতি অবলম্বন করেন। ফলে তাহাকে বিরক্ত না করিলে লেও বড় একটা কিছু করে না । তাহার এই নিস্পৃহতা দূর করিতে চেষ্টা করিল ‘গোদাবরী’ । আমার প্রহারপ্রভাবে পরাভব স্বীকার করিলেও, উপযুক্ত প্রতিশোধের স্বযোগ সে প্রতীক্ষা করিতেছিল। তাই নারাণ মিত্রের শরণাপন্ন স্থং স্না আমার বিরুদ্ধে তাহাকে উত্তেজিত করিতে লাগিল । নারাণ অনর্থক ভদ্রলোককে কষ্ট দিতে চাহিল না । সে দাবরী বলিল, “দুয়ে, মারের ভয়ে পেছোস কাপুরুষ কোথাকার ” মারাণ মিত্র বলিল, “মার-টারের কি ছাই ভয় দেখাস, ওসব এ শৰ্ম্ম থোড়াই কেয়ার করে।” এটা যে তার বৃথা অর্থশূন্ত আস্ফালন নহুে তা পরীক্ষা করিবার সুযোগ আমার শীঘ্রই মিলিল । গ্রীষ্মাবকাশের ৩/৪ দিন পরে তাদের শ্রেণীতে অঁাক কষাইতেছিলাম । ছুটির আঁক যে সব ছেলে আ.ে নাই তাদের শাস্তি দিয়াছি, ৩ টার পর আটক থাকিয়া প্রত্যহ অনূন ৩টা করি। আক কম্বিয়া শোধ দিতে হইবে । দণ্ডিত ছাত্রদিগের মধ্যে নারীণ মিত্র অন্যতম । কিন্তু অস্ক ছাত্রের যখন যথাসাধ্য অঙ্ক কষিতেছিল সে নিৰ্ব্বিকার নিলিপ্তভাবে বসিয়াছিল । তাহা দেখিয়া ক্রমেই আমার ধৈর্য্য-চু্যতি ঘটিতেছিল । ৪টার পর যখন সকল ছাত্রই একে একে অঙ্ক দেখাইয়৷ চলিয়া গেল, তখনও দেথি সে পূৰ্ব্ববৎই অটল , কষ্টে আত্মসংবরণ করিয়া তাহার নিকট আসিয়া বলিলাম, “নারাণ, তুমি ছুটিতে একটা আকও কযনি কেন ?” সে গম্ভীর ভাবে উত্তর দিল, “জাঞ্জে সময় পাইনি।” আমি ৰিস্থিত হইয়া বলিলাম, "প্রায় মাস দেড়েকের ছুটিতে একটা অঁাক কবিবার সময় পেলে না ?” সে পূৰ্ব্ব-গাষ্ঠীর্ধ্য অক্ষুণ্ণ রাখিয়া বলিল, “আঞ্চে না।” আমি তখন ক্রুদ্ধস্বরে বলিলাম, “এথন ত সময় পাচ্ছ, করছ না কেন শুনি ?” সে বিজ্ঞভাবে জবাব দিল, “আঞ্জে, ছুটির জন্য যখন অঁকি কয; এবং আমি আঁকি যখন কবছি না, তখন বুঝতেই পারছেন ছুটির আমার বিশেষ দরকার নেই।” আমি ঠোট চাপিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম “তার মানে ?” সে অম্লান বদনে বলিল, “আজ্ঞে তার মানে হচ্ছে, . ছুটির পর বাড়ীতে গিয়াও ব’সে থাকুব, তা এখানেও আছি ; বাড়ীতে বরং নিঃসঙ্গ থাকৃতে হবে, এখানে তবু আপনার সঙ্গলাভ ঘটবে।” এত বড় স্পৰ্দ্ধা ! আমার সঙ্গে এমন ভাবে কথা বলা ! কথা শেষ করিতে না দিয়াই তাহার প্রত্যেক অঙ্গে আমার সঙ্গলাভের বিপুল পুলক বেশ ঘনিষ্ঠভাবেই অনুভব করাইতে লাগিলাম। “গোদাবরী’র প্রহারের দ্বিতীয় ও পরিবর্ধিত সংস্করণ চলিতে লাগিল । নারাণ কিন্তু কোনওরূপ কাতরতা বা চাঞ্চল্য প্রকাশ করিল না। কিছু পরে দেখি হাতের বেতট। ফাটিয় তাহার মস্তকের একস্থানে আঘাত করাতে সে স্থানটা রক্তাক্ত । রক্ত দেখিয়াই বেতটা ছুড়িয়া ফেলিয়া দিলাম। নারাণ তখন পরম আগ্রহে বলিয়া উঠিল, “আজ্ঞে, আর একট। এনে দেব সার ?” মনের ক্ষোভে ও রাগে কঁাপিতে কঁাপিতে আমি নির্জন লাইব্রেরী ঘরে প্রবেশ করিলাম । প্রহারের মাত্রা অত্যধিক হওয়াতে বাস্তবিকই আমার অকুতাপ হইতেছিল । শাসনে অকৃতকাৰ্য্যতার ক্ষোভে এবং এই অমুতাপে এখানে সকল চক্ষুর অঙ্করালে আসিয়া কাদিয়া ফেলিলাম। একটু পরে মীরাণ মিত্র সেখানে আসিয়া আমাকে তদবস্থায় দেখিয়া থমকিয়া দাড়াইল । আমি আর্দ্রস্বরে বলিলাম, “নারাণ, কেন অভ মার খেলি ?” সে চকিতে নত হইয়৷ আমার পা দুটো ধরিয়া সকাতরে বলিতে লাগিল, “আপনি দুঃখ করছেন কেন সার, আমার কিছু লাগে নি।” সেই দুবিনীত বালকের এই কাতর কণ্ঠ শুনিয়া দুঃখট। আমার হঠাৎ বাড়িয়া গেল । তাহার গায়ে হাত বুলাইতে বুলাইতে বলিলাম, "কেন নিজে কষ্ট পেলি, আর আমাকেও দিলি ?”