পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*38 ইহা ভাবিয়া দেখেন নাই। অতি অল্প লোকেই এই মোট কথাটা সচরাচর তলাইয়া দেখেন। ইংরেজ বালকের ব্যবহারোপযোগী টেবিল ও চেয়ারের ভিভর দিয়া বাল্যকালেই আমার ভিতরে সাহেবীয়ানার দিকে একটা ঝোক জন্মিয়াছিল । ইংরেজী শিক্ষা এবং ইংরেজী সাহিত্যের চর্চার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম যৌবনে এই আসক্তিটা কতকটা উৎকট আকারেই ফুটিয়া উঠিয়ছিল। সে কথা যথা সময়ে কহিব । ( ס\ל ) কহিয়াছি যে আমরা বৈষ্ণব গোসাইদিগের শিষ্য হইলেও আমাদের আত্মীয় কুটুম্বের প্রায় সকলেই ঘোর শাক্ত ছিলেন । কেবল আমার মাতৃকুলই যে শাক্ত ছিলেন তাহা নহে, বাষার মাতৃকুলও শাক্ত ছিলেন । ইহাদের কেহ কেহ কৰ্ম্ম উপলক্ষে সহরে বাস করিতেন । ইহাদের মধ্যে বাবার একজন আপনার মাসতুত ভাই ছিলেন। ইহাকে আমি জ্যেঠামশাই বলিয়া ডাকিতাম। আমাদের বাসার নিকটেই আমার এই জ্যেঠামহাশয় তার এক আত্মীয়ের একই হাতায় বাস করিতেন। এরা দুজনে সহরের “কারণ-সাধকদিগের” একরূপ দলপতি ছিলেন বলিলেও হয়। এমনও শোনা গিয়াছে যে, জ্যোৎস্না রাত্রে রাজপথে চলিতে চলিতে ইহারা মাঝে মাঝে নদী ভ্ৰমে শুখন ডাঙ্গায় সাতার কাটিবার প্রয়াস পর্য্যন্ত করিতেন। একবার নাকি ইহাদের একজন বাতাসা ভাবিয়া টিকিয়া চিবাইয়া “মা ! এ কি করিলে, বাতাসার স্বাদ পৰ্য্যন্ত তুলিয়া দিলে বলিয়া চীৎকার করিয়া কাদিয়াছিলেন । আমার জ্যেঠামহাশয় একবার শুম্ভনিশুম্ভ-বধের যাত্রার পালা দেখিতে যাইয়া যে বালককে চণ্ডী সাজাইয়া আসরে নামান হইয়াছিল তাহার সম্মুখে সাষ্টাঙ্গে প্ৰণিপাত করিয়া ‘মা ম৷” বলিয়া চীৎকার করিয়াছিলেন। ইহাদের বাসায় “কারণের”এতটা য্যবহার ছিল বলিয়া অামি আমার জ্যেঠাইমায়ের নিমন্ত্রণে র্তাহাদের ওখানে যাইয়া থাইতে সৰ্ব্বদাই বড় নারাজ ছিলাম। তিনি আমার জগু কত মৃত্যু করিয়া বিবিধ ব্যাঞ্জনাদি রন্ধন করিতেন, কিন্তু খাইতে বসিয়াই আমার মনে হইত যে, এসকল প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড ভাল ভাল তরকারীতেই বুঝি মদ দেওয়া হইয়াছে। মাকে আসিয়া একথা বলিতাম। মা হাসিয়া উড়াইয়া দিতেন, কিন্তু, এত মদ যারা খান তাদের খাদ্যে মদ দেওয়া হয় না— ইহা আমার ধারণাতেই আসিত না। বাল্যকাল হইতে সেই যে মদ্যের প্রতি বিতৃষ্ণ জন্মিয়ছিল ইহাতেই আমাকে এই দীর্ঘ জীবনে অশেষ প্রলোভনের মধ্যেও স্বরা পানের অভ্যাস হইতে বৃক্ষা করিয়াছে। বস্তুত প্রলোভন বলিলাম এও কেবল একটা কথার কথা মাত্র । কারণ মদের প্রলোভন যে কি ইহা আমি এ জীবনে অনুভয করি নাই । ( 58 ) ১৮৬৯ ইংরেজীতে শ্রীহট্টে আবার গভর্ণমেণ্ট; ইস্কুল স্থাপিত হয়। পাদ্রীদের ইস্কুল ছাড়িয়া যাহারা হিন্দুধৰ্ম্মের মনারায়ের টিল (প্রাচীন সরকারী ইস্কুল-গৃহ ১৮৬৯-১৮৭৫) ও হিন্দু সমাজের ইজ্জত রাখিবার জন্ত নিজের নূতন ইস্কুল করিয়াছিলেন তাহাদের চেষ্টাতেই এই গভর্ণমেণ্ট ইস্কুলের প্রতিষ্ঠা হয়। আমার বাবা ইহাদের মধ্যে ছিলেন। গভর্ণমেণ্ট ইস্কুল প্রতিষ্ঠার সময়ে দুর্গাকুমার বস্থ মহাশয় সেখঘাট মিশনারী ইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ইনিই নূতন গভর্ণমেণ্ট ইস্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক হন। সেথঘাট ইস্কুলের অন্যান্ত শিক্ষকেরাও গভর্ণমেণ্ট ইস্কুলে আসিয়া শিক্ষক হন। ইহার ফলে সেখঘাট ইস্কুল একরূপ উঠিয়াই যায়। একরূপ বলিতেছি এই জন্ত যে, তখনই ঐ ইস্কুল একেবারে উঠিয়া গিয়াছিল কিনা ঠিক মনে