পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] ভারতবর্ষের পরাধীনতার স্বরূপ ২২১ ও রাজচক্রবৰ্ত্তিত্ব লাভের সমস্ত আদর্শ, আকাঙ্ক্ষা ও উদ্যম জাগাগোড়াই ভারতবর্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল । ভারতৰর্ষের বাহিরেও বে দেশ আছে, সেখানেও ষে দিগ্বিজয়, রাজ্যবিস্তার ও সমর-গৌরব লাভ করা যাইতে পারে একথাই কখনও এদেশের নরপতিগণের মনেই উদিত হয় নাই ; এই আকাঙ্ক্ষাই কখনও তাহাদের প্রাণে জাগে নাই । কেন জাগে নাই, তাহার অবশ্য যথেষ্ট কারণ ছিল। ভারতবর্ষের বিশালতাই যে, এই বিশেষ বিজয়-বিমুখতার একটি প্রধান কারণ তাহ সহজেই বোঝা যায়। স্বদেশেই যখন বিজয়-গৌরব-লিপস চরিতার্থ করিবার যথেষ্ট অবকাশ থাকে, তখন স্ব ভাবতই বিদেশ-বিজয়ে প্রেরণ। থাকে না । ভারতীয় রাজার। ভারতবর্ষেই তাহদের বিজয়তৃষ্ণ পরিতৃপ্ত করিবার প্রচুর অবসর পাইয়াছিলেন, তাই বিদেশের দিকে সমর-বাহিনী পরিচালনা করিবার দুর্দমনীয় প্রেরণ র্তাহারা কখনও অনুভব করেন নাই । তাহাদের এই গৃহপরায়ণতার আর-এক কারণ ভারতবর্ষের অতুল ঐশ্বর্ঘ্য । দেশের সম্পদরাশিই বৈদেশিক বিজেতার অস্ত্রশক্তিকে নিজের প্রতি আকর্ষণ করিয়া লয়, এই কথ। ভুক্তভোগী ভারতবাসীকে আর নূতন করিয়া বলিতে হইবে না। কাজেই রতুগর্ভ ভারতভূমির রাজকীয় বিজয়লিপা। যে কখনও কোন বিদেশের প্রতি আকৃষ্ট হয় নাই, ইহাতে বিস্ময়ের বিষয় কিছুই নাই । ভারতীয় রাজশক্তির এই আত্মস্থতার তৃতীয় কারণ ভারতবর্ষের সীমা-রক্ষক স্বচ্ছুর্গম পৰ্ব্বত-শ্রেণী । যে অভ্ৰভেদী গিরি-শ্রেণী পূৰ্ব্ব সমুদ্র হইতে পশ্চিম সমূদ্র পর্য্যস্ত ভারতবর্ষের দ্বাররক্ষকরূপে মস্তক উন্নত করিয়া দণ্ডায়মান রহিয়াছে, সেই গিরি-শ্রেণীই চিরকাল ভারতবর্ষের বিজয়-কামী ক্ষাজশক্তিকে বহির্দেশ হইতে প্রতিনিবৃত্ত করিয়া ভারতবর্ষের মধ্যেই সংহত করিয়া রাখিয়াছে। চতুর্থ কারণ এই যে, ভারতের রাষ্ট্ৰীয় ভারকেন্দ্র অতি প্রাচীন কাল হইতেই দেশের পূর্ব ভাগে নিবন্ধ ছিল। উত্তর ভারতে যে কয়টি হিন্দু সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল তার কেন্দ্র ছিল হয় পাটলিপুত্রে, না হয় কান্তকুজে ; পুরুষপুর অর্থাৎ পোশোয়ারের কুযশ সাম্রাজ্যকে যথার্থ হিন্দু সাম্রাজ্য বলিয়া গণ্য করা যায় না। পাটলিপুত্র বা

কান্তকুজ হইতে ভারতের বহির্ভাগে সাম্রাজ্য বিস্তৃত করা অনায়াসসাধ্য ছিল না, তাহ সহজেই অকুমান করা যায়। কিন্তু এইসমস্ত কারণও ভারতবর্ষের এই অসাধারণ বহির্বিমুখতার বথোচিত হেতু নির্দেশ করিতেছে বলিয়া মনে হয় না। চীনদেশ বিশালতায় ও সম্পদশালিতায় ভারতবর্ষ হইতে হীন নহে এবং মধ্য-এশিয়ার পর্বতসমূহও ভারতের উত্তর পশ্চিম সীমা-রক্ষক গিরি-শ্রেণী হইতে কম দুৰ্গম নহে। তথাপি এক সময় চৈনিক রাজ-শক্তি স্বদূর কোরিয়া হইতে পারস্ত পৰ্য্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তার করিতে সমর্থ হইয়াছিল ; বর্তমান আফগানিস্তানের অন্তর্গত কিপিন বা কপিশাও ঐ সাম্রাজ্যের অস্তগত ছিল । এমন-কি ভারতবর্ষের অন্তর্গত কাশ্মীর, চিত্রাল প্রভৃতি রাজ্যের অধিপতিরাও ওখন চীন-সম্রাটের প্রাধান্ত স্বীকার করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। আর-এক দিকে পারস্তসম্রাটেরাও এক সময় বাহনীক হইতে মিশর দেশের পশ্চিম প্রাস্ত, পারস্তোপসাগর হইতে কৃষ্ণসাগরের পশ্চিম তাঁর এবং সিন্ধুনদ হইতে গ্রীস দেশ, এই বিশাল ভূখণ্ডের উপর রাজদণ্ড পরিচালনা করিতে সমর্থ হইয়ছিলেন । এইসকল ঐতিহাসিক তথ্যের কথা স্মরণ করিলে মনে হয়, যে দুৰ্দ্ধৰ্ষতা ও অমিত পরাক্রম মানুষকে সাগরগিরি লঙ্ঘন করাইয়া লইয়া যায় এবং মরুভূমি অতিক্রম করিতেও অনুপ্রাণিত করিয়া তোলে, সেই দুৰ্দ্ধৰ্ষতা ও সেই পরাক্রম বুঝি স্বথ-সম্পদের লীলানিকেতন ভারতবর্ষের মাটিতে কখনও উদ্ভূত হয় নাই। যে শৌৰ্যপ্রভাবে মহাবীর হানিবল স্পেন, ফরাসী ও আল্পস্ অতিক্রম করিয়া ইতালিতে বহু বৎসর যাবৎ রোমের অদ্বিতীয় শক্তিকেও সন্ত্রস্ত করিয়া তুলিয়াছিল, যে দুৰ্দ্দম বিজয়াকাঙ্ক্ষা ফিলিপ-তনয় আলেকজাণ্ডারকে প্রচণ্ড ঝঞ্চার বেগে এশিয়া মাইনর, সিরিয়া, মিশর ও বিশাল পারস্ত-সাম্রাজ্যের উপর দিয়া বিপাশার তাঁর পর্য্যন্ত ছুটাইয়া আনিয়াছিল, সে শৌর্ঘ্য ও সে বিজয়াকাঙ্ক্ষার দৃষ্টাস্ত ত ভারতবর্ষের ইতিহাসে দেখিতে পাই না । বস্তুত চীন, পারস্য, রোম বা আরবের মত সাম্রাজ্য গড়িবার প্রতিভা এবং আলেকজাণ্ডার, হানিবল, নেপোলিয়ানের মত অসাধারণ বীরত্ব ও পরাক্রম