পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২২ প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড ভারতবর্ষের পক্ষে স্বাভাবিক ছিল বলিয়া মনে হয় না । কিন্তু তাই বলিয়া ভারতবর্ষে কখনও শীরত্বের চর্চা হুইত না, এ কথা কিছুতেই বলা যায় না। ঋগ্বেদের সংগ্রাম-কাহিনী, মহাভারতে কুরুপাগুবের বীরত্ব-গাথা, এযং মহাপদ্মমম, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্ঘ্য, সমুদ্রগুপ্ত, হর্ষবৰ্দ্ধন ও পুলকেশী, রাণfপ্রতাপ ও শিবাজীর ইতিহাস স্মরণ করিলেই এ কথার সত্যত উপলব্ধি হইবে। কিন্তু এই বীরত্বের বিশেষত্বই ছিল এই যে, ইহা বরাবরই ভারতবর্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ; ইহা কখনও বিশ্বজগৎকে চমকিত করিয়া দেয় .নাই। অর্থাং ভারতবর্ষ কখনও আপন বীরত্বের প্রভাবে বিশ্বচেতনার মধ্যে বিস্ময়ের আসন গ্রহণ করিতে পারে নাই । কেন পারে নাই, তাহার কয়েকটি কারণ আলোচনা করিয়াছি । কিন্তু আমার মনে হয় এই কারণগুলিও যথেষ্ট নহে। ভারতীয় ক্ষত্ৰিশক্তির এই বিশ্ববিমুখতার প্রধান কারণ বোধ হয় আধ্য মনোবৃত্তি। ভারতবর্ষের শস্ত্রজীবী ক্ষত্রিঃগণের মনে এমনি এক অদ্ভুত আত্ম তুষ্টি, আৰ্য্যত্বের গৰ্ব্ব বা আত্মাভিমান ছিল, যার ফলে তাহার। স্বভাবতই বিদেশের প্রতি বিমুখ ছিল এবং কখনও -কোন বিদেশীয় রাজ্যের বিরুদ্ধে সৈন্ত চালনা করে নাই। কারণ যাহাই হোক, ইহা একটি ঐতিহাসিক সত্য যে, ভারতীয় রাজশক্তি কখনও বিদেশ-জয়ের উচ্চম করে নাই । এই নিস্ক্রিয়তার যে কি ফল হইয়াছিল তাহাও আলোচনা করিয়া দেখা দরকার । ভারতবর্ষ কখনও বিদেশ আক্রমণ করে নাই বলিয়৷ বিদেশীয়ের ষে ভারতবর্ধকে নিষ্কৃতি দিয়াছিল তাহা নহে । বৈদেশিক বন্যাস্রোতের মুখে খাইবার, বোলান প্রভৃতি গিরিসঙ্কট যে কতবার ভারতবর্ষের দ্বার উদঘাটন করিয়া দিয়াছিল, এবং কতবার যে শক-ষবন-পহলব, হ্রণ গুর্জর ও তুর্মী মোগলের আবিল স্রোতে ভারতের স্যামল ক্ষেত্র -প্লাবিত হইয়া গিয়াছিল, এ দেশের বৈদেশিক-আক্রমণলস্কুল ইতিহাস পাঠকের কাছে তাহা অবিদিত নহে । শিহাবুদিন মহম্মদ ঘোরী যে-দিন থানেশ্বরের নিকটবর্তী তরাইল ক্ষেত্রে আজমীর-পতি পৃথ্বীরাজকে পরাজিত করিলেন ( ধৃ: ১১৯২ ), সেই দিন হইতে আমরা সাধারণত ভারতঘর্ষের অধীনতার দিন গণনা করিয়া থাকি । মুসলমান-বিজয়ের সময় হইতেই আমাদের পরাধীনতার ইতিহাস আরম্ভ হইয়াছে এবং সাত শত বৎসরের পর আজও আমাদের সেই অধীনতার অবসান হয় নাই, এসম্বন্ধে কাহারও কোন সন্দেহ নাই । কিন্তু এ কথা কিছুতেই সত্য নহে যে, মুসলমানের অধীনতাই ভারতবর্ষের প্রথম অধীনতা। মুসলমানের আবির্ভাবের পূৰ্ব্বেও ভারতবর্ষ বহুবার অল্পাধিক পরিমাণে বৈদেশিকের নিকট অধীনতা স্বীকার করিয়াছে। ভারতবর্ষের অধীনতার মূল কারণ অনুসন্ধান করিতে হুইলে এবং মুসলমান ও ইংরেজের অধীনতার প্রকৃত স্বরূপ বুঝিতে হইলে প্রাক্-মোসলেম যুগের অধীনতা সম্বন্ধেও সংক্ষেপে একটু আলোচনা করা প্রয়োজন। অতি প্রাচীনকালে কোনো সময় অস্থর বা আসিরিয়গণ ও তৎপরে মিদিয়গণ সিন্ধুনদের পশ্চিম তীর পর্য্যন্ত জয় করিয়া লইয়াছিল বলিয়া জানা যায়। কিন্তু তৎসম্বন্ধে বিশেষ বিবরণ কিছুই পাওয়া যায় না । ঐতিহাসিক যুগে পারস্যরাজ কুরুষের আক্রমণকেই প্রথম বৈদেশিক আক্রমণ বলিয়। নির্দেশ করা হইয়া থাকে । তৎপর দারয়বোঁধ অথবা দরায়ুস (খৃ: পূ: ৫২২-৪৮৬) গদ্ধার এবং সিন্ধুনদের উপত্যক, এই দুই প্রদেশ পারস্য-সাম্রাজ্যের অস্তভূক্ত করিয়া লইয়াছিলেন, এবং গ্রীকৃবীর আলেকজাণ্ডারের আক্রমণ-সময় পর্যন্ত এই প্রদেশ দুঃটি পারস্যের অধিকারেই ছিল । তার পর ঘোর দুর্ধ্যোগের মত ভারতের যক্ষে ছুটিয়া আসিল ম্যাসিডোনিয়ার বিজয়বাহিনী এবং দুই বৎসরের জন্য (খৃ: পূ: ৩২৭-২৫ ) হিন্দুকুশের পাদদেশ হইতে বিপাশার তাঁর পর্যস্ত সমগ্র ভূগগ ধ্বাসের লীগক্ষেত্র হইয়া উঠিল। কিন্তু আলেকজাণ্ডারের প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে-সঙ্গেই এই আক্রমণের সমস্ত স্মৃতি ভারতের অন্তর হইতে যেন পরম দুঃস্বপ্নের মতোই বিলুপ্ত হইয়া গেল । কিন্তু যে গ্ৰীক একবার ভারতের সম্পদভাণ্ডারের সন্ধান পাইয়া গেল, তাহার হৃদয় হইতে দুরাকাঙ্ক্ষার অগ্নিশিখা লিবিয়া গেল না । সে অগ্নিশিখা বার বার ভারতের অভিমুখে লেলিহান হষ্টয়া উঠিয়াছে। আলেকজাণ্ডারের আক্রমণের বিশ বৎসর পরেই ( ৩•৫ খৃঃ