পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবনদোলা ঐ শাস্তা দেবী ( २ ) গৃহকত্ৰী হৈমবতী সম্রাস্ত ঘরের মেয়ে, সম্রাস্ত ঘরেরই বধু। তাহার শ্বশুরবাড়ীর বৃহৎ পরিবার ছিল ; তাহাদের চাল-চলন সমস্তই সনাতন কালের । এই পরিবারে শৈশব উত্তীর্ণ হইয়াই তাহাকে পা দিতে হইয়াছিল । বহু দুঃখবেদনার স্মৃতি বহু অপমান ও গঞ্ছনার ব্যথা তাহার সে-পরিবারের সহিত জড়িত । সে সকল বেদন ও ব্যথা যে কেবল র্তাহার অা স্ম-মর্যাদা ও অহমিকাতেই ঘা দিয়াছিল তাহা নয়, তাহার মাতৃস্নেহের উৎস মুলেণ্ড নিৰ্ম্মম আঘাত করিয়াছিল। অল্পবয়সেই হৈমবতী তিনটি সস্তানের জননী হইয়াছিলেন । কিন্তু স্বতিকা-গৃহের অত্যাচারে এক মাস বয়স না হইতেই দুইটি শিশুই তাহার কোল শূন্ত করিয়া বিদায় লইয়াছিল। হৈমবতী তখন গৃহের বধু মাত্র ; ছেলে ছুটি যাওয়াতে তাহার মনে স্থতিকাগৃহের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ জাগিয়াছিল অভিভাবি কাদের নিকট তাহা ত{হার প্রকাশ করিবার অধিকার ছিল না। তবু মাতৃস্নেহের বশে সে কথা না বলিঙ্কা তিনি পারেন নাই । শাশুড়ী, ননদ প্রভূতি বয়োজ্যেষ্ঠার বধু এই লজ্জাহীনতা ও অকাল-পকত দেখিয়া স্তম্ভত হইয়া গিয়াfছলেন । বেহায় বেীএর ব্যবহারের উপযুক্ত প্রতিদান দিতেও তাহারা ছাড়েন নাই। তবু হৈমবতীর তৃতীয় সস্তান সকল আচার ও অত্যাচারের হাত এড়াইয়া কোনো প্রকারে বাচিয়া উঠিল। সকলে বলল, “মেয়ে সন্তান যমের অরুচি, ও ত বচবেই ।” দুইটি সস্তান হারাইয়। যাহাকে পাইয়াছিলেন স্বভাবতই তাহার উপর হৈমবতীর ক্ষুধিত ও বঞ্চিত মাতৃস্নেহের সমস্ত উচ্ছ্বাস গিয়া পড়িল । বাড়ীর লোকের চোখে ইহা অসহ ঠেকত । "একটা কালে রোগ মেয়ে নিয়ে এত বাড়াবাড়ি কিসের । ভার ওষুধ রে পখ্যি রে জামা রে কাপড় রে, একটা না একটা লেগেই আছে।” মেয়েটি অত্যস্ত দুর্বল ক্ষীণজীবী ছিল, কিন্তু এইসব বাক্যজালীর ভয়ে হৈমবতী একদিনের জন্যও প্রাণ খুলিয়া তাহার যত্ন-আদর করিতে পারেন নাই । যতটা মন চাহিত তাহার অৰ্দ্ধেক করিবার আগেই ভয়ে লজ্জায় ও বাক্য বর্ষণের চোটে তাহাকে খামিয়া যাইতে হইত। মেয়েকে বুকে চাপিয়া তিনি তাহার সস্তানসেবার সকল ক্রটির জন্য যেন তাহার কাছে ক্ষমা চাহিতেন । কিন্তু সে মেয়েও মার দুঃখ বুঝিয়া বেশীদিন বঁচিল না । আট নয় বৎসর বয়স হইতেই মাতার কোল চিরশূন্ত করিয়া দিয়া সেও একদিন তাহার ভাইদের পথে চলিয়া গেল । কিন্তু মার বুকে তীব্ৰ অমুশোচনার একটা জাল রাখিয়া গেল। স্বামীর অর্থ ছিল, ক্ষমতা ছিল, তবু যে হৈমবতী কন্যাকে বাচাইবার জন্তু প্রায় কোনো চেষ্টাই করিতে পারেন নাই, ইহাকে তিনি আপনার স্বেচ্ছাকৃত অপরাধ বলিয়াই ধরিং। লইলেন । র্তাহার এই বিশ্বাস ক্রমশ তাহার স্বামীর মনেও সংক্রামিত হইয়। উঠিল । স্ত্রীকে লইয়। তিনি বাড়ী ছাড়িয়া গেলেন । কোথা হইতে পরের একটি মেয়ে ঘরে আনিয়া জুটাইলেন। মেয়েটির যত্ন-আদরের যে ঘট। পড়িয়া গেল বঙ্গালীর কোনো মেয়ের ভাগ্যে ইতিপূৰ্ব্বে তেমন জুটিয়াছিল কি না সন্দেহ। আপনাদের অজ্ঞাতে এমনি করিয়া তাহার। কস্থা পালনের যেন ব্রত লইয়াই বসিলেন । কোথায় কাহার মেয়ের মা মরিয়াছে, হৈমবতীর স্বামী তাহাকে কুড়াইয়া আনিলেন—আমার স্ত্রী মেয়ে বড় ভালবাসেন ! কোথায় কাহার মেয়ের সমাজে স্থান মিলিল না, হৈমবতী বলিলেন, "আস্থা থাকু, ও আমার মেয়েই হয়ে থাক।” দিনে দিনে কন্যাহীনার শূন্তগুহ কন্যায় কন্যায় ছাইয়া গেল । কিন্তু মাছুষের সামর্থের ত একটা সীমা আছে। স্বামী