পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২৮ স্ত্রীর দৈহিক ও জার্ষিক শক্তিতে যখন আর কুঙ্গাইল না, তখন তাহার। তাহাজের খেয়ালের খেলায় একটা গণ্ডী টানিতে বাধ্য হইলেন। মানুষ কিন্তু তাহাদের সহজে নিষ্কৃতি দিল না। হৈমবতীর প্রাণঢালা সেবা-যত্বে মাতৃক্রোড়চু্যত এই মেন্ধেগুলি মায়ের অভাব কোনো দিন বোঝে নাই। লোক-সমাজে তাহারা যেন ক্রমে হৈমবতীর গুণপনার জীবস্তু প্রশংসাপত্র হইয়া উঠিল । মেয়ে লইয়া যে যেখানে যে-কারণে অসুবিধায় পড়ে সেই তাহার শরণ লইতে চায়। অর্থ দিয়াও লোকে তাহার কাছে মেয়ে রাখিয়া যাইতে লাগিল । স্বামীর মৃত্যুর পর এই কস্তাত্মাশ্রমই তাহার জীবনের অবলম্বন হইল। জীবনে তিনি বহু দুঃখ পাইয়াছিলেন, নারীজন্ম লাভের জন্যই। তাই মেয়েদের দুঃখমুক্তির পথের পাথেয় যোগাইতে যথাসাধ্য করাই হইল এখন তাহার একমাত্র ত্রত। বয়স হইয়৷ গিয়াছিল বলিয়া শিশুকমু্যাদের পালন করার ভার আর তিনি লইতেন না। এখন তাহার আশ্রমে আদিত সেই মেয়ের জীবন-সংগ্রামে যাহারা সহায়হীন হইয়া যুঝিবার শক্তি পাইতেছে না। নান। ঘূর্ণার ভিতর দিয়া ঘুরিয়া গৌরীও একদিন এইখানেই আসিয়া জুটিল। প্রথম যখন শঙ্কর তাহার শিক্ষাদীক্ষার ভার লইয়া দেখিল, সংসারের মাঝখানে থাকিয় কেবল দিনে একবার শিক্ষয়িত্রীর কাছে পড়িয়া গৌরীর কোনো লাভই হইতেছে না, তখন সে বলিল, *গৌরী, তুই ইস্কুলে পড়বি চল। এই পঞ্চাশ জন মাহুষের মাঝখানে একলা তোর কিছু হওয়া শক্ত । বাড়ীতে যতগুলি মেয়ে আছে তার মধ্যে একজনও ত এসবের ধার ধারে না ; তুই মাঝ থেকে কিছু করতে গেলে নিজেও অনভ্যাসের লজ্জায় পেরে উঠ বি না, পরেও ঠাট্ট। করবে। তা ছাড়া এখানে তোর স্ববিধ ও অস্থবিধা কেউ বুঝবে না, এমন-কি তুষ্ট নিজেও না। মাস্থ্য হতে হ’লে আর যারা সে-পথে চলছে তাদের সঙ্গে একটু যোগ রাখা দরকার ।” গৌরী বলিল, “হ্যা, তা আমি বেশ বুঝি । এখানে ত আমার সকল কাজের উৎসাহ-ঘাটি দিনে একবার थबाणैौ -cछाठे, »००8 { ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড এসে আমায় পাখীপড় পড়িয়ে যান। অর্ধেক জিনিৰ ত তিনি নিজেই বোঝেন না। ওঁকে দেখলেই আমার সমস্ত উৎসাহ উবে যায়। ওঁর অপরাধই বা কি ? একটা মানুষের ত আর সব শক্তি থাকে না ।" বাড়ীর অনেকের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও শঙ্কর ও হরিকেশব জোর করিয়াই গৌরীকে একটা বালিকাবিদ্যালয়ে ভৰ্ত্তি করিয়া দিলেন। তাহার নিরীহ শিক্ষয়িত্রীর কাজটা হাত-ছাড়া হইয় যাওয়াতে তিনি বড়ই মন:স্বপ্ন হইলেন। দুই তিন দিন ধরিয়া বাড়ী বসিয়া সব বইগুলি ব্যাখ্যা পুস্তকের সহিত মিলাইয়। দেখিলেন তিনি পড়াইতে কোনো খানে ভুল করেন নাই। বুঝলেন না। তবু তাহার এ শাস্তি কেন ? গেী এতবড় বিদ্যালয় ইতিপূৰ্ব্বে কখনও দেখে নাই। প্রথম দৃষ্টিতেই ইস্কুলটা তাহার মনে বেশ একটা স্থায়ী ও গভীর রকম ছাপ আঁকিয়া দিল। ইস্কুল বলিতে তাহার মনে অতি শৈশবের যে অস্পষ্ট স্মৃতিটুকু ছিল, সে দেখিল ইহার সহিত তাহার মিল খুজিয়া পাওয়া শক্ত তাহার বিবাহের পূৰ্ব্বে ছয় সাত বৎসর বয়সের সময় বাড়ীর কাছেই একটা বিদ্যালয়ে মাসে চার অান মহিলা। দিয়া সে পড়িতে যাইত। রোজ দশটার সময় ময়লা কাপড়-পরা একট। ঝি তাহাদের উঠানে আসিয়া “ও গৌরী ইস্কুলে চলসে” বলিয়া ডাক দিত। তাহার সঙ্গে সঙ্গে বই শ্লেট হাতে নোলক মাকড়ী মলপর সিথি তুলিয়া ঝুটিবাধা ছোপানে ও ক্টোচানো শাড়ী পরা খালিপায় কতকগুলি ছোট ছোট মেয়েও উঠানে ঢুকিয়া পড়িত। গৌরী তাহদের সহিত তাঙ্গদেরই মত বেশভূষা করিয়া ইস্কুলে যাইত। সে ইস্কুলে একখানিমাত্র ঘরে চায় পাঁচটি ক্লাশ হইত। একজন বিধবা শিক্ষয়িত্রী ছিলেন, তিনি একলাই সব ক্লাশের মেয়েদের পড়াইতেন । এক ক্লাশের মেয়েদের সেলাই কিম্ব অঙ্ক কিম্ব হাতের লেখা করিতে দিয়া তিনি অন্য ক্লাশে চলিয়া যাইতেন। যেন সব কটা মেয়েকে কোনো রকমে খানিক বসাইয়া রাখাই যথেষ্ট। সেখানে ঘণ্ট বিভাগের কোনো বালাই ছিল না । ছোট ছোট মেয়ের যদি নিতান্তই গোলমাল করিত ত উপরের ক্লাশ হইতে