পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

షిరీ8 প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৪e৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড ——- মা বাঙালী অভিনেত্রী । পিতামাতা দুইজনেরই ইচ্ছ। ছিল চঞ্চলাকে ভস্ত্রসমাজে পালন করিয়া বিবাহ দেওয়া ; কিন্তু পিতার সংসারে ত চঞ্চলার স্থান ছিল না, কাজেই তিনি কঙ্কার লালন-পালনের উপযুক্ত অর্থ দিয়া হৈমবতীর কাছে কম্ভাটিকে রাথিয়া ষান। দুই এক বৎসর অস্তর মাঝে মাঝে দেখিতেও আসিতেন । ছেলেবেলা চঞ্চলী ইহাকে কাকা বলিত। বড় হইয়া সব জানিবার পর সে আর এই মিথ্যা সম্পর্কের অভিনয় করিতে রাজি হয় নাই ; তাই তখন হইতে তাহার অভিভাবকের আসা যাওয়াও বন্ধ হইয়া গিয়াছে । তাহদের কোন থবরই প্রায় আজকাল আর সে পায় না। চঞ্চলার মুখ দেখিয়া ও কথা শুনিয়া গৌরীর তাহাকে আর কিছু জিজ্ঞাসা করিতে সাহস হইল না। সে অনেক দিন এখানে আসিয়াছে, কিন্তু মেয়েদের সঙ্গে পরিচয়ট বেশীর ভাগই তাহার উপর-উপর ছিল ; কাহার অস্তরে যে কি বেদনা লুকাইয়া আছে তাহা সে জানিত না। আজ নিস্তারিণীর দুঃখের ইতিহাস শুনিয়া সে সত্যই ব্যথিত হইয়াছিল। নিজেকে সে অতি ভাগ্যহীন বলিয়াই ভাবিত। কিন্তু বাহুিরে যতই মৃত্তন-নূতন মাছুষ দেখিতেছে ততই তাহার এ বিশ্বাস টুটিয়। যাইতেছে। দেখিতেছে জগতে তাহার চেয়ে অনেক বেশী দুঃখের বোঝাই মাছুষ যহে । তাছাতেও মাচুর্য বাচিয়া আছে, কাজ করিতেছে, ভাঙিয়া পড়ে নাই । সাংসারিক সুথের আশা তাহার জীবনে হয়ত শেষ হইয়া গিয়াছে ; কিন্তু এই যে সব দুঃসহ দুঃখের জাল ইহা ত তাঁহাকে কোনোদিন সহ করিতে হয় নাই। তাহার দুর্ভাগ্যের জন্য পিতামাত শোক করিয়া সেটাকে তাহার চক্ষে যত বড় করিয়৷ তুলিয়াছিলেন, হৈমবর্তীর জীবনব্যাপী সংগ্রাম, ও নিস্তারিণীর আজন্ম নিপীড়নের সহিত তুলনা করিলে তাহা কি আর তেমন থাকে ? গেীরীর নিজের কাছেই নিজের দুর্ভাগ্য ক্রমে অনেক ছোট হইয়া আসিতেছিল। চঞ্চল দুইটা কথা বলিয়া সেখান হইতে উঠিয়া চলিয়া গেল। গৌরীই তাহাকে প্রশ্ন করিয়াছিল, সুতরাং এই ব্যাপারটাতে সে একটু অপ্রস্তুত হইয়। পড়িল। চপলা গৌরীকে একটু আড়ালে ডাকিয়া বলিল, “তুমি ভাই, চঞ্চলাকে ওকথা ন জিগগেষ করলেই পারতে ! ওর কথা কি কিছু শোমনি ?” গৌরী বিস্মিত হইয়া বলিল, "কৈ, না ! আমি ত কিছু জানি না।” চপল তাহাকে সমস্ত কথাই বলিল। শুনিয়া cનોૌ আপনার প্রশ্নের জন্য লজ্জিত হইল বটে ; কিন্তু চঞ্চলার উপরও তাহার কেমন একটা রাগ আসিল । চঞ্চল গেীরীর সহিত এক ঘরে থাকিত, একই জিনিষপত্র ব্যবহার করিত। তাহার অতীত ইতিহাস শুনিয়া গৌরীর বাল্যের সংস্কার মাথা জাগাইয়া উঠিল। মনে হইল চঞ্চলার স্পর্শে তাহার সমস্ত অশুচি হইয়া গিয়াছে । ছেলেবেলার বিলাসের আড়ম্বর ছাড়িয়া এখন সে ব্রহ্মচর্য্যের সকল নিয়ম নিষ্ঠীর সহিত পালন করিত । আজ মনে হইল তাহার কঠিন ব্রহ্মচর্য্যের সমস্ত গৌরব এক নিমিষে ধূলিসাৎ হইয়। গেল। লুকাইয় তাহার সাহত এতখানি মাখামাখি করার অপরাধের জন্য গৌরীর সমস্ত মনটা চঞ্চলার উপর ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিল । এত বড় একট। দুঃখ ও অপমানের ইতিহাস যে তাহার পিছন হইতে সমস্তক্ষণ তাহাকে বিধিতেছে—সে-কথা ভাবিয়া মনটাকে তাহার প্রতি একটুও সদয় করিতে গৌরী পারিতেছিল না। মামুষের কত বিচিত্র রকমের দুঃখ আছে ; দিন দিন তাহার পরিচয় পাইয়া নিজের দুঃখটাকে সে অনেক ছোট মনে করিতে শিখিয়াছে। বিস্তু চঞ্চলার এই নূতন দুঃখের ব্যথায় তেমন সমবেদন ত তাহার জাগিল না। যে ফুর্ভাগ্য লইয়া সমাজে সে জন্মিয়াছে এবং যাহার হাত হইতে মুক্তি পাইবার আজন্ম চেষ্টার ফলেও সে কৃতকাৰ্য্য হয় নাই তাহার জন্তু গৌরী যেন চঞ্চলাকেই অপরাধী স্থির করিল। চপল৷ বলিল, “চঞ্চল। বড় অভিমানী মেয়ে । ও হয়ত মনে করবে জেনে-শুনেই তুমি ওকে আমন প্রশ্ন করেছ। তুমি যে জানতে না সেট। ওকে গিয়ে একবারটি বল ।” গৌরীর আপত্তি ছিল না। কিন্তু বলিতে গিয়া সে যাহা বলিবে তাহাতে চঞ্চলার অভিমান যে আরোই আহত হইবে না এবিষয়ে তাহার নিজেরই সন্দেহ ছিল । সেই ভয়ে চপলার কথায় সে ঠিক সায় দিতে পারিল