পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ybo প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড ছিল। . আমাদের বাসার টালার আধখানা না কি এখনও আছে, বাকি আধখান ও কাছারীর টীলা কুশিয়ার-গর্ভে অদৃশ্ব হইয়া গিয়াছে । ফেঁচুগঞ্জে আমাদের আপনার লোক বেশী কেহ যান নাই। আমার সমবয়স্ক কেহই ছিল না। আমি তখনও কোন পাঠশালায় যাই নাই। ফেঁচুগঞ্জে তেমন পাঠশালা ছিল কি না জানি না। বাবার কাছেই বাংলা লেখাপড়া করিতাম, এটুকু মনে আছে। হস্তলিপির উপর সেকালের লোকের খুব দৃষ্টি ছিল। বাবাও প্রতিদিন .আদালতে যাইবার সময়ে আমাকে বাংলা লেখা মকৃশ করিবার জন্য কাগজের মাথায় একটা লাইন লিখিয়া দিয়া যাইতেন । সেকালের পড়য়ার প্রথম প্রথম কলাপাতায় মকৃশ করিতেন। কতকটা লেখা অভ্যাস হইবার পরে তালপাতায় লিখিবার অকুমতি পাইতেন। তারপর, হাতের লেখা পাকিয় উঠিলে, কাগজে লিখিতেন। এখনকার মত কাগজ এত সস্তী ছিল না, এবং পয়সাও এত সচ্ছল ছিল না । সুতরাং অযত্নলব্ধ কলাপাতাতেই লোকে নিজের হাতের লেখা মকৃশ করিয়া পাকাইতেন। আমার বাল্যকালেও গ্রাম্যজীবনে এই পদ্ধতিই ছিল । তবে আমি নিজে আমার গ্রামের পাঠশালায় কখনও পড়ি নাই বলিলেই হয় । এইজন্তু শৈশব হইতেই কলাপাত ও তালপাতার পরিবর্তে কাগজেই লেখা অভ্যাস করিয়াছিলাম। (8) কহিয়াছি যে, শিক্ষানীতিতে বাবা চাণক্যের অনুসরণ করিতেন । “লালয়েৎ পঞ্চবর্ষাণি দশবর্ষাণি তাড়য়েৎ । প্রাপ্তে তু ষোড়শে বর্ষে পুত্রমিত্রবদাচরেং।” আমার শৈশবে ও বাল্যে বাবা প্রায়ই এই শ্লোক আওড়াইতেন। কার্ষ্যেও এই উপদেশ প্রতিপালন করিয়াছিলেন । পাচ বৎসর বয়স পর্য্যন্ত কোটেরহাটে ছিলাম। সুতরাং সেখানে বাবার নিকট হইতে আদরই পাইয়াছিলাম, কোন প্রকারের তাড়ন পাই নাই। কেবল একদিনের কথা মনে আছে । তখন আমি পাচ ছাড়িয়া ছরে পা দিয়াছি। ফাঙ্কন মাস, দোল পূর্ণিমার পূর্বদিন। আদালতের ছুটির পরে বাবার পেয়াদার আসিয়া আমাদের বাহিরের উঠানের নিকট হইতে মাটী কাটিয়া দোলমঞ্চ তৈয়ার করিতেছিল। পর দিনের উৎসবের আনন্দের পূর্ব-আস্বাদনে বাড়ীর সকলেই স্বল্প-বিস্তর মাতিয়াছিলেন। দোলমঞ্চ প্রস্তুত হইতে অনেক রাত হইয়া গেল। আমার কিন্তু চোখে ঘুম নাই । উৎসবের আয়োজন দেখিতে লাগিলাম। তার পর যখন আর জাগিয়া থাকা সম্ভব হইল না, তখন বাড়ীর ভিতরে যাইবার পথে একটা ঢালু জায়গায় উপরের দিকে মুখ করিয়া মুত্রত্যাগ করিতে বসিলাম। সেই মুত্র আমার পায়ের নীচ দিয়া গড়াইয়া পথে আসিয়া পড়িতে লাগিল । আমার এই মুখত দেখিয়া বাবার ধৈর্য্য নষ্ট হইল। ভদ্রলোকের ছেলের ভদ্রবুদ্ধি হইবে না কেন ? শীলত। এবং আচারের ক্রট হইবে কেন ? ইহা তিনি সহিতে পারিতেন না। বাবার হাতে বাল্যকালে যত মা’র খাইয়াছি তাহা লেখাপড়ায় অমনোযোগের জন্য নহে, কিন্তু এই শীলতা ও সদাচারের ক্রটার জন্য। এই দিনও এই কারণেই মার খাইয়াছিলাম। ইহার পূৰ্ব্বে বাবা আমার গায়ে হাত তুলেন নাই বলিয়া, এই প্রথম দিনের কথা আজিও ভুলিতে পারি নাই । ( t ) ফেচুগঞ্জে যখন যাই তখন আমার বয়স সাত কি আট বৎসর হইবে । এইখানেই আমার বাল্য-শিক্ষায় চাণক্যনীতির দ্বিতীয় পর্কের পূর্ণ প্রয়োগ আরম্ভ হয়। বাবা যে লেখা মকৃশ করিতে দিয়া যাইতেন তাঁহা না করিয়া রাখিলে মার থাইতে লাগিলাম । তবে প্রতিদিনই যে এই দও ভোগ করিতাম তাঁহা নহে। প্রতিদিন বাবাও আমার লেখা হইয়াছে কি না ইহা তদারক করিতেন না । যেদিন করিতেন এবং লেখা হয় নাই দেখিতেন, সেদিন কিন্তু রেহাই ছিল না। ( & ) ফেঁচুগঞ্জে আমাদের বাসার নীচেই নদী এবং পিছন দিকে একটা খাল ছিল। বাবার ছিপে মাছ ধরার সখ ছিল । অতি বাল্যকাল হইতে আমিও মাছ ধরিতে আরম্ভ করি। ফেঁচুগঞ্জে যাইবার আগে কখনও মাছ