পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

←ᏄᎲ প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড তাহার প্রমাণ । ইহা যে ইসলামের সহিত অভিন্ন নহে, নব্য তুরস্ক তাহ দেখাইয়াছে, এবং ভারতবর্ষেও বোম্বাই অঞ্চলের কোন কোন সন্ত্রান্ত মুসলমান পরিবার দেখাইয়াছেন। ইহার কুফল প্রত্যক্ষ করিয়া নব্য তুরস্কের নেতারা ইহার উচ্ছেদ সাধন করিয়াছেন । অবরোধ প্রথা এবং মুখখানি সম্পূর্ণ অবগুষ্ঠিত করিয়া রাখার উদ্দেশ্য নারীর পবিত্রত রক্ষণ করা, এইরূপ কথিত হয় t এই উদ্বেগু সম্বন্ধে আমরা কিছু বলিব না। তাহ নারীরা বলিলেই ভাল হয়। অবরোধ ও অবগুণ্ঠন নারীর স্ত্রীত্বের উপরেই ঝোক দেয়—পুরুষ ও নারী উভয়ের সাধারণ মনুষ্যত্ব বিস্মৃ ত হইয়া যেন কেবল নরনারীর জাস্তব সম্বন্ধটাই মনে রাখে। ফলে অবরোধ ও অবগুণ্ঠন যে কৌতুহুলকে সদা জাগ্রত রাখে, তাহাতে সাত্বিক ও পবিত্র চিস্তার সহায়তা করে বলিয়া মনে হয় না । ইহাতে নারীদেরও মানসিক ক্ষতি হয়। র্তাহার অস্তঃপুরের বাহিরে আসিলে জড়সড় হইয় পড়েন, সামান্য বিপদেও কিংকৰ্ত্তব্যবিমূঢ় হন, এবং অন্য চিন্তু অপেক্ষ কেবল যেন এই চিন্তু লইয়াই বিব্রত থাকেন, যে, কোন দুষ্ট পুরুষ র্তাহাজের উপর কুদৃষ্টি নিক্ষেপ করিতেছে। এরূপ মানসিক অবস্থা সাত্ত্বিকতার ও শাস্তুধীরচিত্ততার সহায়ক নহে। অবরোধ ও অবগুণ্ঠন নারীদের সাহস, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব এবং মানসিক বল বৃদ্ধির অস্তরায় । ইহা যে-সব দেশে প্রচলিত, তথাকার পুরুষদের স্বভাবের উৎকর্ষেরও ইহা পরিচায়ক নহে। ইহা হইতে অনুমান করা অন্যায় নহে, ধে, তথাকরি পুরুষের ঈর্ষান্বিত। যে-নারীদিগকে অবরুদ্ধ ও অবগুষ্ঠিত করিয়া রাখা হয়, তাহাদের আত্মীয়দের সম্বন্ধে এই অকুমান করা অস্বাভাবিক নহে, যে, অন্তঃপুরের বাহিরে নারীর রক্ষায় তাহারা অক্ষম ; এবং ঐ নারীদের অনাত্মীয় পুরুষদের সম্বন্ধেও স্বভাবতঃ এই অনুমান হইতে পারে, যে, তাহার এরূপ দুশ্চরিত্র, যে, তাহাদের হাত হইতে নারীদিগকে রক্ষা করিবার একমাত্র উপায় অবরোধ ও অবগুণ্ঠন। এই দুইটি অনুমান একত্র করিলে, অবরোধ ও অবগুণ্ঠনের দেশসমূহের পুরুষদের স্বভাবের যে পরিচয় যাহাদের দেশে অবরোধ নাই, তাহারা যদি জিজ্ঞাসা করে, “তোমাদের দেশের পুরুবের। যদি মোটের উপর সচ্চরিত্র, তাহা হইলে নারীদিগকে অবরুদ্ধ করিয়া রাখ কেন ?” তাহা হইলে কি উত্তর দেওয়া যাইতে পারে ? “তোমাদের যদি নারীরক্ষার সামর্থ্য থাকে, তাহা হইলে অবরোধ তুলিয়া দাও না কেন ? এই প্রশ্নেরই বা উত্তর কি ? বস্তুত: অবরোধ প্রথা না থাকিলে পুরুষ ও নারী উভয়েরই সাহস বাড়িবার সম্ভাবনা। অবশু, ইহা সত্য নহে এবং ইহা বলাও আমাদের উদ্বেগু নহে, যে, আমাদের দেশের সব পুরুষ পৌরুষহীন বা চরিত্রাংশে নিরুই। আমরা যাহা লিখিতেছি, তাহ অবরোধের সমর্থকদের বিবেচনার জন্ম লিখিতেছি। অবরোধ না থাকিলে নারীরা কুচরিত্র হইবেন, এই মিথ্যা সন্দেহের জবাব নারীর দিবেন। আমরা কেবল বলিব, “মহারাষ্ট্রের নারীরা সকলে বা বেশীর ভাগ কুচরিত্রা নহেন, অথচ তথায় অবরোধ নাই ।” নারীরা যে পুরুবের লোভের বস্তু, অতএব তাহদিগকে লুকাইয়া রাখা দরকার, অবরোধ ও অবগুণ্ঠন যেন জোর গলায় ইহাই বলে ; যুক্তিসঙ্গত শিক্ষা ও স্বাধীনত। পাইলে নারীরা যে ঘরের বাহিরেও লোকহিতসাধনাদি করিতে পারেন, তাহ বলে না। যাহা লোভের বস্তু বলিয়া লুকাইয়া রাখা হয়, মানুষের প্রবৃত্তি সেই দিকে বেশী ধাবিত হইবার কথা । এইজন্য যে-সব দেশে ও সমাজে অবরোধ ও অবগুণ্ঠন যত বেশী প্রচলিত, তথাকার পুরুষদের জাস্তব প্রবৃত্তি বিশেষ এবং নারীলালসা তত প্রবল হইতে পারে। বাংলা দেশে যে সম্প্রদায়ের মধ্যে অবরোধ ও অবগুণ্ঠনের চলন ঘৃত বেশী, তাহার অন্তভূত পুরুষদের চরিত্র তদনুরূপ কিনা, এবং তাহাদের দ্বারা নারীনির্ধ্যাতন তত বেশী হয় কিনা, পাঠকের মিলাইয়া দেখিবেন । অবরোধ ও অবগুণ্ঠন না থাকিলে নারীরা ষে অধিকসংখ্যায় শিক্ষিতা ও জনহিতসাধিক হইতে পারেন, বাংলা দেশের সহিত দক্ষিণভারতের তুলনা করিলে তাহা বুঝা যাইবে । অবরোধ ও অবগুণ্ঠন আমাদের দেশে-বিশেষতঃ বড় সহরে, নারীদের স্বাস্থ্যহানি, দৈহিক ছুৰ্ব্বলতা এবং অকাল পাওয়া যায়, তাহাতে তাহাদের সম্মান বৃদ্ধি পায় না। - মৃত্যুর একটি কারণ। ইউরোপের কোন সহরে একদিন