পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লাটের স্পেশাল শ্ৰী রবীন্দ্রনাথ মৈত্র মাঘের দ্বিপ্রহর। আঙ্গিনায় রৌদ্রের দিকে পিঠ করিয়া বেণু সর্দার সম্মুখে একখানি পাথরের থালায় এক রাশ সরু চাকৃলি, লইয়া মাধ্যাহিক জলযোগের উপক্রম করিতেছিল। রঙ্গীন ভিজা গাম্‌ছ'-খানিতে মাথায় আধ ঘোমটা টানিয়া স্ত্রী বিরাজ পিঠার কাঠ হাতে সম্মুখে দাড়াইয়াছিল। এমন সময় আহবান আসিল, “সর্দারের পো! বাইরে এসতে একবার * দফাদারের বণ্ঠস্বয় শুনিয়া বেণু উঠিয়া পড়িতেছিল, বিরাজ তাড়াতাড়ি কহিল, “মুখের গাস টা খেয়ে যাও Coll I" "খান খেয়ে আমার পেট ভরবে নারে, বিরাজ ! তুই এখানে দাড়িয়ে থাকৃ, আমি এক্ষুনি আসছি।” বেণু হাত ধুইয়া উঠিয়া গেল। মিনিট দশ পর ফিরিয়া আসিয়া হতাশস্বর বেণু কহিল, “আমার আর তোর হাতের সরুচাকুলি খাওয়া আদেষ্টে নেইরে, বিরাজ ! দে দিকিন পাগড়ীট। এখুনি আবার বেরোতে হবে।” “এই ভর দুপুরে আবার কোন পোড়ার মুখোর মুখ পুড়েছে যে, তোমায় যেতে হবে ?” বিরাজ কহিল। “চেচাসনিরে পাগলী। লাটের গাড়ী আসছে, পাহারায় যেতে হবে। দে পাগড়ীটা। দাড়াও গো দফাদার দা, পাগড়ীটা বেঁধে যাচ্ছি।” দ্বারের দিকে চাহিয়া বেণু কহিল। বাহির হইতে জবাব আসিল, "একটু চট পট সেরে নাও, সর্দারের পো! যেতে হ’বে আবার পাকা ছ’কেশ ।” পাগড়ী বাধ। শেষ হইলে বিরাজ দু'ধান সরুচাকুলি হাতে করিয়া স্বামীর সম্মুখে দাড়াইয়া মিনতি করিয়া কহিল, "আমার মাথা খাও, এই দুখানি গালে দিয়ে এক ঘটি জল খেয়ে যাও । সেদিনও গড়েছিয়, খেলে না, কোথায় মড়া আগলাতে গেলে । আজ—”

  • এখন খেলে আর হাটতে পারব নারে, বিরাজ । সাঝে গাড়ী পার করে দিয়ে পহর রাতেই ফিরে আস্ব । তুই উকুনে একটু জল বসিয়ে রাথিস্ পিঠেগুলো ভালো করে ঢেকে রাখগে।” বলিয়। পিষ্টক-স্তুপের দিকে একটি সত্বঞ্চ দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া লাঠি হাতে বেণু চৌকীদার योंश्द्रि श्इंग्न ¢*ांश ।

স্বামীর বহুদিনের আকাজিত সৰ্ব্বাপেক্ষা প্রীতিকর এই খাদ্ভট অনেক দিন চেষ্টা করিয়াও সে সম্মুখে বসিয়া খাওয়াইতে পারিল না! পিঠাগুলি গুছাইয়া তুলিয়। বিরাজ গামছায় চোখ মুছিল। ঘরের বিস্কটকে তে বেণু কোনমতে কাটাইয়া আসিল, কিন্তু পথে আর এক বিঘ্ন উপস্থিত, একটি স্বল্পজল অন্ধকার ডোবার ধারে বেণুর সাত বছরের পুত্র মনাই বড়শী নাচইয়৷ ‘চ্যাং’ মাছ ধরিতেছিল। প্রত্যহ দ্বিপ্রহরে এইটি ছিল তাহার নিত্যকৰ্ম্ম । বেণু তাহার দৃষ্টি এড়াইবার জন্ত অতি লঘুপদে আসিতেছিল কিন্তু মনাইকে ফাকি দিতে পারিল না। পিতার পরিচিত নীল পাগড়ী সে দূর হইতেই দেখিয়াছিল, কিন্তু পিতা অন্ত পথে চলিয়া যাইবে ভয়ে ভাবে ভঙ্গীতে কোনো রূপ চাঞ্চল্য প্রকাশ করে নাই । বেণু সতর্ক পদে নিকটে আসিতেই, সে ছিপ ফেলিয়া এক লম্ফে পথের মাঝখানে উঠিয়া আসিল এবং তাহার পোষাকের প্রান্ত মুঠ করিয়া ধরিয়া কহিল, “কোথা ঘাচ্ছ, বাবা ?” বেণু বিপদে পড়িল । সত্য কথা বলিলে মনাই সঙ্গে যাইবার জিদ-ধরিবে। একটু ভাবিয়া কহিল, “কালীতলায় ।” জগতে মনাইয়ের ভীতির একমাত্র স্থান ছিল এই বারোয়ারী কালীতলা। সেখানে যত ভূত আর প্রেতের আড়', কোন স্বত্রে এই তত্ত্বটি তাহার শিশু মস্তিষ্কে প্রবেশ করিয়৷ বাসা বাধিয়া ছিল। কালীতলার নাম শুনিয়া সে এক প।